পরিকল্পনা তিন মাস ধরে

পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে সময়সীমা ধরে। মডেল: সারা আলী, ছবি: অধুনা
পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে সময়সীমা ধরে। মডেল: সারা আলী, ছবি: অধুনা

২০২০ শুরু হয়েছে। বছরের প্রথম মাস প্রায় শেষ হতে চলল। আর সময় নষ্ট না করে এখনই চলতি বছর নিয়ে পরিকল্পনাগুলো তৈরি করুন। একই সঙ্গে সে অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ুন। পুরো বছরকে নিজের সুবিধামতো কয়েকটি ভাগে ভাগ করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারেন। সেটা হোক অফিসে বা চাকরির প্রস্তুতিতে। শিক্ষার্থী হলেও নিজের পুরো বছরের পরিকল্পনা ঠিক করে পড়াশোনা করা উচিৎ।

একটি বছরকে চার ভাগে ভাগ করে পরিকল্পনা করলে তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ লক্ষ্য ঠিক করে তা বাস্তবায়নের জন্য তিন মাস ধরে পরিকল্পনাটা হবে। জানালেন করপোরেট কোচের মুখ্য পরামর্শক ও মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ যিশু তরফদার। তবে এর আগে কিছু বিষয় ঠিক করে নেওয়া জরুরি।

প্রান্তিক পরিকল্পনা

বছর শুরুর পরিকল্পনা বছর শেষ হওয়ার আগেই করা উচিৎ। তাহলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সুবিধা হবে। আর সে অনুযায়ী কাজ করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। প্রথম তিন মাসের পরিকল্পনা ডিসেম্বরে, দ্বিতীয় প্রান্তিকের পরিকল্পনা মার্চে, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকের পরিকল্পনা যথাক্রমে জুন ও সেপ্টেম্বর মাসে করা উচিৎ। 

স্মার্ট গোল

বছরব্যাপী পরিকল্পনায় চৌকস মানে স্মার্ট হতে হবে। ২০২০ সালে আপনি কী কী পেলে আপনার পেশার উন্নয়ন হবে, সেই বিবেচনায় স্মার্ট গোল নির্ধারণ করুন। প্রথমে লক্ষ্যগুলোর তালিকা করে নিতে হবে। তারপর তালিকা ধরে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

লক্ষ্য নির্ধারণ

যে পরিকল্পনাই করবেন, তার লক্ষ্য থাকতে হবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হয়। পরিকল্পনাগুলো আপনি ‘কেন’ দিয়ে প্রশ্ন করে নিতে পারেন। ‘কেন’-এর উত্তর সম্পর্কে আপনি যদি সঠিক ধারণা পান, তাহলে লক্ষ্যগুলো পূরণ করা সহজ হয়। 

মূল্যায়ন করুন

আপনার পরিকল্পনাগুলো যেন মূল্যায়নযোগ্য হয়, সেটা মাথায় রাখতে হবে। যদি কেউ আপনার পরিকল্পনা মূল্যায়নই না করে, তাহলে সেই পরিকল্পনা অর্থবহ হবে না আপনার জন্য। তাই এমন পরিকল্পনা করুন, যেটা সবার কাছে মূল্যায়নযোগ্য হয়। 

অর্জনযোগ্য

একই সঙ্গে আপনার পরিকল্পনাগুলো যেন অর্জনযোগ্য হয়। আকাশ-কুসুম কোনো পরিকল্পনা করা উচিৎ না। অর্জনযোগ্য পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী এগিয়ে গেলে সফলতা আসবে। 

বাস্তবসম্মত

প্রতি প্রান্তিকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা উচিৎ। অবাস্তব পরিকল্পনা বেশির ভাগ সময়ই সফলতার মুখ দেখে না। তাই আপনার শিক্ষা, দেশের প্রেক্ষাপট এবং কাজের সুযোগের উপযোগিতা চিন্তা করে পরিকল্পনা করুন। এর ফলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

সময়সীমা

কোন কাজটা কোন সময় করবেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করে রাখা উচিৎ। যেহেতু আপনি প্রতি তিন মাসের পরিকল্পনা করছেন, তাই বাস্তবায়নের জন্য প্রথম থেকে কাজ করতে হবে। যদি প্রথম তিন মাসে পরিকল্পনাগুলো শেষ না হয়, তাহলে পরের তিন মাসে পরিকল্পনাগুলোতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। এতে বছর শেষে পরিকল্পনাগুলোর সফলতার মুখ দেখার সম্ভাবনা বেশি। তাই পরিকল্পনাগুলো সময়সীমার মধ্যে রাখা উচিৎ। 

পর্যালোচনা

লক্ষ্যগুলোকে তিন মাস পরপর পর্যালোচনা করুন। যদি আপনি তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন না করেন, তাহলে আবার পরিকল্পনাগুলো নতুনভাবে ঢেলে সাজানো উচিৎ। আপনি প্রথম তিন মাসে যদি নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন না করেন, তাহলে কী কারণে তা অর্জন করতে পারলেন না, সেটি খুঁজে বের করুন। নির্ধারিত লক্ষ্যের কতটুকু অর্জন করলেন, সেটা পর্যালোচনা করে দেখুন। 

নিজেকে প্রশ্ন করুন

প্রশ্ন করুন নিজেকে, যা করতে চাইছেন, তা করছেন কি না। হতে পারে করছেন, আবার হতে পারে করছেন না। এটি হতে পারে কঠিন প্রশ্নগুলোর একটি, জীবনে আমরা যার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

ব্যর্থতা থেকে শিখুন

সবকিছু ঠিকঠাক চললে আমরা সাধারণত বুঝতে পারি, কেন সঠিক হচ্ছে। তবে চরম ব্যর্থতা আমাদের ভুলগুলো খুঁজে বের করার ও সামনে নিয়ে আসার বিরল সুযোগ দেয়। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে, সময়টা আমাদের ব্যর্থতায় টেনে নেওয়ার চারিত্রিক দিক বা অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করে দেয়। এটা একটা সুযোগ, যা আমাদের কাজে লাগানো উচিৎ।