পুরোনো পোশাক গলিয়ে নতুন কাপড়

এভারনিউ নামের একটি কোম্পানি নিউ জার্সির একটি ল্যাবরেটরিতে পুরোনো কাপড় গলিয়ে নতুন তন্তু তৈরি করেছে। আর এই নতুন তন্তুর নাম দেওয়া হয়েছে নিউসাইকেল। ছবি: রয়টার্স
এভারনিউ নামের একটি কোম্পানি নিউ জার্সির একটি ল্যাবরেটরিতে পুরোনো কাপড় গলিয়ে নতুন তন্তু তৈরি করেছে। আর এই নতুন তন্তুর নাম দেওয়া হয়েছে নিউসাইকেল। ছবি: রয়টার্স

এখন আর কোনো কিছুই ফেলনা নয়। এমনকি আপনার পুরোনো টি-শার্ট আর জিনসও। এগুলোকে আর ঘর মোছার জন্য ব্যবহার করতে হবে না; বরং পুরোনো কাপড় দিয়ে তৈরি হবে একেবারে নতুন পোশাক। আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান পুনর্ব্যবহারের এই উদ্যোগ নিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এভারনিউ নামের এই কোম্পানিটিই নিউ জার্সির একটি ল্যাবরেটরিতেই পুরোনো কাপড় গলিয়ে নতুন তন্তু তৈরি করেছে। আর এই নতুন তন্তুর নাম দেওয়া হয়েছে নিউসাইকেল। এই নতুন উদ্ভাবিত তন্তু দেখতে অনেকটা তুলার মতো। এই উদ্যোগ আশা করা হচ্ছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য হ্রাসে সহায়ক হবে; পাশাপাশি পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে।

এদিকে এই তন্তু এরই মধ্যে ব্রিটিশ ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনি, স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি এডিডাস ও মার্কিন রিটেইলার টার্গেটের দৃষ্টি কেড়েছে। এই তন্তুর উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান এভারনিউয়ের তথ্য অনুযায়ী এ বছরেই বাজারে আসবে নতুন তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক।

এই তন্তু তৈরির প্রথম ধাপে সুতির শার্ট, মোজা এবং অন্যান্য পোশাক থেকে বোতাম, জিপারসহ অন্যান্য অ্যাকসেসারি খুলে ফেলা হয়। এরপর পলিয়েস্টার সুতা এবং রং তুলে ফেলা হয়। এই ধাপ পেরিয়ে কাপড়কে একেবারে কাগজের মতো দেখতে পাল্পে রূপান্তর করার পর আয়নিক তরলে দ্রবীভূত করা হয়। আস্তে আস্তে মিশ্রণ থেকে তন্তু তৈরি হয়। এরপর সেই তন্তু থেকে তৈরি সুতা দিয়ে নতুন পোশাক তৈরি করা হয়।

‘এখন থেকে আমরা এটাই করব’ বলে মন্তব্য করেছেন এভারনিউয়ের প্রধান নির্বাহী ও সহপ্রতিষ্ঠাতা স্ট্যাসি ফ্লিন।

তরলে পদার্থের মিশ্রণ সঠিক হলে পোশাক দ্রবীভূত করার পর যে তন্তু তৈরি হবে, তা সুতির সুতার চেয়ে তিন গুণ শক্তিশালী হবে। আর এই সুতার তৈরির প্রক্রিয়াও যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব।

আমরা এমন কিছু তৈরি করছি না, যার জন্য জলের প্রয়োজন হয়, বলেছেন স্ট্যাসি।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) হিসাবে একটি টি-শার্ট তৈরির জন্য যে পরিমাণ তুলা লাগে, তার জন্য ২ হাজার ৭০০ লিটার জলের প্রয়োজন হয়।

স্ট্যাসি মনে করেন, পুরোনো কাপড় আর পোশাককে পুনরায় ব্যবহার করা গেলে মাটিতে জঞ্জাল হিসেবে ফেলা হবে না। এটা পরিবেশের জন্য বিরাট একটা বিষয়।

আমেরিকার পরিবেশ সংরক্ষণ এজেন্সির তথ্যানুযায়ী ২০১৭ সালে ২৬ মিলিয়ন টনেরও বেশি টেক্সটাইল বর্জ্যের ৬৬ শতাংশই ফেলা হয়েছে মাটিতে।

এভারনিউয়ের উদ্যোগ শুরু হয়েছে গত বছর। আর এই নতুন উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত সুতা থেকে স্টেলা ম্যাককার্টনির ডিজাইনে সোয়েটশার্ট তৈরি করেছে এডিডাস। এই সোয়েটশার্ট দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আরামদায়ক। আর এটা যেকোনো সময় গলিয়ে আবারও নতুন পোশাক তৈরি করা যাবে। কেবল সোয়েটশার্টই নয়, এরই মধ্যে এই তন্তু দিয়ে জিনসও তৈরি করেছে লিভাইজ।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য এই পোশাকে থাকবে নিউসাইকেল লোগো। ফলে ক্রেতা এবং পরিধানকারী জানবেন বিষয়টি। তাই ফেলে দেওয়ার আগে পোশাক তাঁরা দান করতে পারবেন। তাহলে তা থেকে নতুন পোশাক তৈরি হবে।

আপাতত এভারনিউ দান গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। একই সঙ্গে মাথায় রাখছে পলিয়েস্টার ও সুতির মিশ্রিত কাপড় রিসাইকেল করার বিষয়টিও। কারণ, বর্তমানে তাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রয়েছে সুতির কাপড়ে।