নীল পানি আর সবুজ টিলার মধ্যে

নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্ট থেকে েদখা যায় সারি নদ আর সবুজ টিলা। ছবি: কবির হোসেন
নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্ট থেকে েদখা যায় সারি নদ আর সবুজ টিলা। ছবি: কবির হোসেন

সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে ভোরের নরম রোদ এসে পড়ছে বিছানায়। দুধসাদা সেই বিছানার ওপর থেকে সার্চলাইটের মতো আলো উঠে এল মুখের ওপর। চোখ তবু শীতের ওম ছেড়ে পাপড়ি মেলতে চায় না। গাছের পাতার খসখস আর পাখির কিচিরমিচির ছাড়া পুরোটা নির্জনতায় ভরা। সকালের এই ভালো লাগার ক্ষণটাই দিনভর নানাভাবে ফিরে ফিরে আসে। বুনো পরিবেশেও যে শান্তি মেলে, সেটা নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্টে গেলে আরও পোক্ত হবে।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় লালাখালের সারি নদের নীল জল। দুই দিকে পাহাড় আর টিলা দিয়ে ঘেরা এই নদে ঘুরতে এসে ফিরে যেতে মন চায় না। আর তাই না চাওয়া মনকে তক্ষুনি শহরমুখী না করে, এক-দুই রাত কাটিয়ে দিতে পারেন নদের পাশে পাহাড়ের ওপরে গড়ে ওঠা নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্টে।

নাজিমগড় রিসোর্ট নামে সিলেটে বেশ আগে থেকেই একটি রিসোর্ট রয়েছে। একই মালিকানাধীন লালাখালে ওয়াইল্ডারনেস নামে নতুন এই রিসোর্ট যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে। সিলেট-তামাবিল সড়কের সারি ঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রামের আঁকাবাঁকা আরও সাত কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে সারি নদের পাড়ে দেখা মিলবে রিসোর্টটির। ১০ একর জায়গার বেশ বড়সড় পাহাড়ি টিলা সাজিয়ে-গুছিয়ে তৈরি হয়েছে মনোরম এই রিসোর্ট। মূল ভবনটি তৈরি হয়েছে অনেকটা ইংরেজি ভি আকৃতিতে। দোতলা ভবনজুড়ে চার ধরনের ৩৭টি কক্ষ আছে। সুবিধা ও প্যাকেজের ওপর নির্ভর করে ভাড়াও চার স্তরে ১২ হাজার ৫০০, ১৩ হাজার ৫০০, ১৫ হাজার ৫০০ ও ৪৪ হাজার টাকায় (সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হবে)।

থাকার জন্য আছে আধুনিক সুবিধা
থাকার জন্য আছে আধুনিক সুবিধা

প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে আছে সুন্দর বারান্দা। রিসোর্টের অতিথিদের খাবারের জন্য আছে হরাইজন নামের একটি রেস্তোরাঁ। যেখানে দেশি, বিদেশি নানা রকম খাবার পাওয়া যায়। ভি শেপের পেটের দিকটায় আছে একটি সুইমিংপুল। আর রিসোর্টের পেছনের দিকে পাহাড়ের গা ধরে বানানো হয়েছে একটি ছোট্ট চা-বাগান। এই বাগানের পথ বেয়ে সোজা ওপরে উঠে আসা যায়। ওপর থেকে পুরো এলাকা ও সারি নদের এক দিক উঁকি দিয়ে ডাকবে আপনাকে। যার মোহ উপেক্ষা করা অসম্ভব। শান্ত নদের গাঢ় নীল পানির ওপরে ভাসার জন্য ইঞ্জিনের বোট ছাড়াও রিসোর্টের নিজস্ব কায়াক আছে। এক বা দুজন যাত্রীর এই কায়াকে বইঠা মেরে এক বেলা কখন পার হয়ে যায় বোঝাই মুশকিল!

আছে একাধিক সাইকেল, যা নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন গ্রামের সরু সড়কগুলো। পথের দুই দিকে শিম বা মটরশুঁটির খেত চোখে পড়বে। আর চোখে পড়বে গ্রামের সাধারণ মানুষের কৌতূহলী চোখ। নাজিমগড়ের এই রিসোর্ট থেকে রাতারগুল, তামাবিল, জাফলং বা জৈন্তাপুরের শাপলা বিল ঘুরে আসা যায় আরামে। দূরত্বে কোনোটা ১০ মিনিট, কোনোটা ৪০ মিনিট। রাতের বেলা চাইলে বিলিয়ার্ড খেলারও সুবিধা মিলবে রিসোর্টে। রিসোর্টে প্রবেশের মূল ফটকের উল্টো পাশে নদীর কিনারে আছে তাঁবুবাসের সুবিধা। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত এখানে ক্যাম্প করে থাকতে আসে অনেক দল। সবুজ ঘাসের খোলা মাঠে খেলাধুলা আর সারি নদের শান্ত নীল রূপ দেখা ছাড়াও যেখানে ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি তাঁবুতে ১০-১৫ জন আরামে ঘুমাতে পারবেন। রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মো. বাহার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘তাঁবুতে সাধারণত দল ধরে থাকতে আসেন। যাঁরা বেশি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাঁরা থাকতে চান তাঁবুতে। তাঁবুর অন্যদিকে আছে আরেকটি রেস্তোরাঁ। যেখানে রিসোর্টের অতিথিরা ছাড়াও বাইরে থেকে দিনের বেলা বেড়াতে আসা পর্যটকেরা খেতে পারেন। খেতে বসেও সারি নদ উপভোগ করা যায় বলে এই রেস্তোরাঁর নাম রিভার কুইন।’

ঘরগুলো যেন প্রকৃতির অংশ
ঘরগুলো যেন প্রকৃতির অংশ

রিসোর্টে থাকার জন্য আগে বুকিং দিতে হবে। সারা বছরই নানা রকম প্যাকেজ থাকে। চাইলে ওয়েবসাইট ঘুরে (www.nazimgarh.com/wilderness) সেটাও দেখে নিতে পারেন। রিসোর্টে বুকিং দিতে ই-মেইলের ([email protected]) মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যাবে। ঢাকা থেকে সরাসরি বুকিং করতে চাইলে যেতে হবে ১১০ লাভ রোড (তৃতীয় তলা), তেজগাঁও, ঢাকা–১২০৮ ঠিকানায়।