কান চুলকানোর যত কারণ

কান চুলকানোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
কান চুলকানোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

কটন বাড কিংবা কবুতরের পালক অথবা একটু শক্ত কিছু দিয়ে যখন কান চুলকানো হয়, আহা, সে আরামের কথা শুধু যে মানুষটা কান চুলকায়, তিনিই জানেন। আবেশে কখনো কখনো চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি কেন কান চুলকায়? কত কারণে কান চুলকাতে পারে?

কান চুলকানো ব্যাপারটা সামান্য মনে হলেও আসলে অনেক বড়। আমাদের চেম্বার বা আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্টে আসা রোগীদের একটা বিশাল অংশ কান চুলকানো ব্যাপারটা নিয়ে আসে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আমাদের হিস্ট্রি নেওয়া থেকে, তাদের গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করা এবং ইনভেস্টিগেশন দেওয়া—সবকিছুই ভিন্ন হয়, মিল খুব কমই থাকে।

কান চুলকানোর প্রথম কারণ হতে পারে এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানালে। অর্থাৎ কানের বাইরের যে সরু রাস্তাটা কানের ভেতর পর্দা পর্যন্ত চলে গেছে, সেখানকার কোনো সমস্যা থেকে। অনেকের এই রাস্তার চামড়া শুষ্ক থাকে। এই শুষ্কতার কারণে কান চুলকাতে পারে। অনেকের গোসলের সময় পানি ঢুকে বা গরমের সময় ঘাম ঢুকে চুলকাতে পারে। অনেকের আবার কানের খৈল জমে গিয়ে কান চুলকাতে পারে। কারও কারও নানা রকম চর্ম রোগের সংক্রমণ হয়ে কান চুলকাতে পারে।

এরপর কানের পর্দা। কানের পর্দার নানা সমস্যার কারণে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দার দুপাশের বায়ুচাপের তারতম্যের ফলে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দার পেছনে কফ বা পানি জমে গিয়ে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দা ফেটে গিয়ে, কানের সংক্রমণ হয়ে কান চুলকাতে পারে।

কানের পর্দা আগে থেকে ফাটা বা ছিদ্র থাকলে মধ্যকর্ণের নানা রকম সংক্রমণ থেকেও কান চুলকাতে পারে। কান থেকে গলের ভেতর একটা সরু রাস্তা খোলে। এটাকে ইউস্টেশিয়ান টিউব বলে। এটার সমস্যা থেকেও কানে চুলকানোর অনুভূতি হতে পারে।

এ ছাড়া কানে ঘন ঘন কটন বাড, চাবি, কলমের ঢাকনা, পাখির পালক, ধাতব বস্তু ইত্যাদি জিনিস দিয়ে খোঁচালে কান চুলকাতে পারে, কানে সংক্রমণ হতে পারে।

নাকের হাড় বাঁকা, মাংস বৃদ্ধি, পলিপ, অ্যালার্জি, ঘন ঘন সাইনাসের সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে কান চুলকাতে পারে। নাকের পেছনে থাকে একধরনের টনসিল। এগুলো বেড়ে যাওয়াকে বলে এডেনয়েড। এডেনয়েডের সমস্যা থেকেও কান চুলকাতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া নাকের পেছনে যে জায়গাটাকে ন্যাসোফ্যারিংস বলা হয়, সেখানকার কোনো ধরনের রোগের শুরুতেই কানে চুলকানোর একটা অনুভূতি হতে পারে।

এরপর আসে গলার নানাবিধ সমস্যা। টনসিলের ঘন ঘন সংক্রমণের কারণে কান চুলকাতে পারে। কারণ, ওই যে খানিক আগে বলেছি ইউস্টেশিয়ান টিউবের কথা, সেটা মধ্যকর্ণের এক কোনা থেকে শুরু হয়ে নাকের পেছনে তালু যেখানে শেষ, সেদিকে এসে টনসিলের মাথার দিকটায় গিয়ে গলায় খোলে। তাই টনসিলের সমস্যা থেকে কান চুলকানো খুবই স্বাভাবিক। এ ছাড়া গলার অন্যান্য যেকোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রেও কান চুলকাতে পারে।

নাক-কান-গলার সমস্যাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটার সঙ্গে আরেকটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক সময় অনেক যত্ন নিয়ে দেখেও অনেক অভিজ্ঞ চোখে অনেক কিছু ধরা নাও পড়তে পারে। তাই সময়মতো সশরীরে এসে চিকিৎসা নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি যাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে, তাঁর কাছে পুনরায় এসে চিকিৎসা কত দূর কার্যকর হলো বা হলো না, সেটা যাচাই করাও জরুরি। অযত্নে, অবহেলায়, ভালোভাবে না দেখে, এমনকি অনলাইনে বা ফোনে কথা বলেও অনেক ওষুধ দেওয়া যায়। কিন্তু তাতে প্রকৃত রোগ নির্ণয় করা যায় না কখনোই। যদিও আজকাল অনলাইনে ভিডিও কল করা যায়, যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত, কিন্তু নিজের সামনে বসিয়ে যত্ন নিয়ে দেখেও যেখানে অনেক রোগের কারণ অধরা রয়ে যায়, সেখানে আপন-পর যেমন রোগীই হোক না কেন, না দেখে চিকিৎসা করাটা দুঃসাহসিক এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনৈতিক। এতে রোগীর ভালো থেকে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কানের সমস্যাই হোক আর শরীরের অন্য যেকোনো সমস্যাই হোক, সামান্যতে বা শুরু থেকেই একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হোন। আমাদের অনেকে সপ্তাহের মাঝামাঝি শুরু হওয়া সমস্যা চেপে বসে থাকেন। পরে দেখা যায় বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার সন্ধ্যা বা গভীর রাতে ছুটোছুটি করতে হয়। এতে রোগী ও ডাক্তারদের একে অপরের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মে।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।