হবু মায়ের ওজন

হবু মায়ের ওজন ঠিক রাখা জরুরি। তাহলে মা ও অনাগত শিশু সুস্থ্ থাকবে। মডেল: সিনড্রেলা। ছবি: সংগৃহীত
হবু মায়ের ওজন ঠিক রাখা জরুরি। তাহলে মা ও অনাগত শিশু সুস্থ্ থাকবে। মডেল: সিনড্রেলা। ছবি: সংগৃহীত

‘আমায় এরা যেতে বলে,
যদি বা যাই, জানি তব
দূরকে খুঁজে খুঁজে শেষে
মায়ের কাছেই ফিরতে হবে।’

কবিগুরুর কাব্যে মায়ের কাছে ফেরার আকুতি। যেখানেই যাওয়া হোক, যা কিছুই পাওয়া হোক—মায়ের তুলনা মিলবে না। মা হওয়ার আনন্দও অতুলনীয়। সন্তান গর্ভে ধারণ করার পর নিজের ভালোমন্দের কথা ভাবতেই যেন ভুলে যান মা। তবে গর্ভধারণের সময় থেকেই মায়ের ভালোমন্দের সঙ্গে সন্তানের ভালোমন্দ জড়িয়ে যায়। মায়ের ওজন বৃদ্ধির দিকটাই যেমন। গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়বে। এটি খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে সর্বোচ্চ কতটা ওজন বাড়া স্বাস্থ্যকর, আর কতটা না বাড়লেই নয়, তা জানা থাকা প্রয়োজন। ওজন বাড়াতে হবে, বেশি বেশি খেতে হবে—এই ভাবনায় খুব বেশি মুটিয়ে যাওয়াটাও ভালো কথা নয়।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা কুতুবী বলেন, ‘আদর্শ ওজন নিয়ে একজন নারী মা হবেন, এটাই আমরা আশা করি। অর্থাৎ, গর্ভধারণের শুরুতেই একজন নারীর ওজন স্বাস্থ্যকর থাকবে। গর্ভধারণের আগে একজন নারীর ওজন যদি বয়স ও উচ্চতার তুলনায় কম বা বেশি থাকে, তাহলে গর্ভধারণের আগেই আদর্শ ওজনে আসতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া উচিত।’

গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন বৃদ্ধির নানান দিক সম্পর্কে জানা গেল অধ্যাপক আফরোজা কুতুবীর কাছ থেকে

স্বাস্থ্যকর ওজন কী

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ওজন প্রতি সপ্তাহে আধা কেজি (৫০০ গ্রাম) করে বাড়া উচিত। তবে প্রথম তিন মাস বমিভাব বেশি থাকার কারণে অনেকেই খুব একটা খাওয়াদাওয়া করতে পারেন না। তাই এই সময়টুকুতে মা যতটা পারেন, ততটা খেলেই চলবে। তিন মাস পেরোনোর পর এমনভাবে খেতে হবে, যাতে ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে খুব বেশি ওজন বাড়ানোও যাবে না। কতটা ওজন বাড়ছে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় ওজন বৃদ্ধি কম হলে পরবর্তী সপ্তাহে সেটুকু পূরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, আর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকলে ওজনের ভারসাম্যের চেষ্টা করতে হবে পরবর্তী সপ্তাহে। তবে পরপর দুই সপ্তাহে যদি ওজনের অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে (কম ওজনের ক্ষেত্রে শিশুর বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কি না আর বেশি ওজনের ক্ষেত্রে প্রি-একলাম্পসিয়ার দিকে যাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে)। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী গর্ভকালীন চেকআপের জন্য কাছের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে হবে।

ওজন নিয়ে কেন ভাববেন

মায়ের স্বাস্থ্যকর ওজন—মা আর শিশু দুজনের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়, শিশুর ওজন কম হয়। এ ছাড়া গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম হয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে মায়ের ওজন কম থাকলে। কম ওজন নিয়ে কিংবা পূর্ণ গর্ভকাল পেরোনোর আগে জন্মানো শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে কম হয়। নানান জটিলতায় ভোগে এই শিশুরা।

অন্যদিকে মায়ের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেড়ে গেলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতা বাড়ে। মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পসিয়া, একলাম্পসিয়া ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। গর্ভস্থ শিশু অত্যধিক বড় হয়ে যেতে পারে, প্রসবের সময় শিশু বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে (অবস্ট্রাক্টেড লেবার), প্রসব হতে খুব বেশি সময় লাগতে পারে (প্রলম্বিত প্রসব)। প্রসবের সময় শিশুর মাথা বের হয়ে ঘাড় আটকে যেতে পারে, এমনকি প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। ওজন বাড়তি থাকলে প্রসব–পরবর্তী সময়ে মায়ের অত্যধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মাকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা

সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। পর্যাপ্ত খাবেন, কিন্তু ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। সহজ ও হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। হাত-পা নেড়ে যেসব ব্যায়াম করতে হয়, সেগুলো করা যাবে। তবে যেসব ব্যায়াম করলে পেটে চাপ পড়ে, সেগুলো করবেন না। দৌড়ঝাঁপ বা লাফালাফি করতে হয়, এ রকম ব্যায়ামও নয়। পরিমিত হাঁটুন। হাঁটতে হাঁটতে যেন হয়রান হয়ে না পড়েন। একেবারে শুয়েবসে দিন কাটানো উচিত নয়। তবে বিশেষ কোনো অসুবিধার কারণে চিকিত্সকের পক্ষ থেকে বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকলে আলাদা কথা।