এ সময়েও কোমল ত্বক

মৌসুম বুঝে যত্ন নিলে তবেই ভালো থাকবে ত্বক। মডেল: বৃষ্টি, সাজ: নুজহাত খান, ছবি: সুমন ইউসুফ
মৌসুম বুঝে যত্ন নিলে তবেই ভালো থাকবে ত্বক। মডেল: বৃষ্টি, সাজ: নুজহাত খান, ছবি: সুমন ইউসুফ

শীতের সময় এক ধারা, শীতের শেষে অন্য রকম। জীবনধারাই ভিন্ন এখন। রূপচর্চার বেলাও তা-ই। শীতের সময় যেমনভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়, শীতের শেষে যত্নের নিয়মটা তেমন নয়। ত্বকে একটু শুষ্কতা অনুভব হয় এই সময়ে, শীত বিদায় নেওয়া সত্ত্বেও। গরমের ঝাঁজটাও একটু একটু করে বোঝা যায়। সময়টাই যে ভিন্ন ধাঁচের।

পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান বলেন, ‘এই সময়ে সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের রহস্যই হলো ত্বক আর্দ্র রাখা, ত্বকের ধরন যেমনই হোক। প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার অভাবে ত্বকে সহজেই বলিরেখা পড়ে। শীতের সময়টায় নিয়ম করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও গরমের সময় অনেকেই এর ব্যবহার করেন না, বিশেষত যাঁদের ত্বক একটু তৈলাক্ত প্রকৃতির, তাঁদের মধ্যে এ ভুল প্রবণতা দেখা যায়। তবে সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, শীত-গ্রীষ্ম সব সময়। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টাতেও। এ ছাড়া শীতের সময়কার নানা প্রসাধনের প্রভাবে ত্বক মলিন হয়ে পড়তে পারে, যার সমাধান করতে পারেন ফেসিয়ালের সাহায্যে। মাসে অন্তত একবার ফেসিয়াল, বডি স্ক্রাবিং ও বডি র​্যাপ করিয়ে নেওয়া ভালো।

ত্বক ভালো রাখবে ঘরোয়া প্যাক
ত্বক ভালো রাখবে ঘরোয়া প্যাক

সব ধরনের ত্বকের জন্য এই সময়

পানিতে শসার টুকরা দিয়ে রেখে সারা দিন অল্প করে খেতে পারেন।

রোদ থেকে ত্বককে বাঁচানোর জন্য এসপিএফ ৫০+ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। এসপিএফ সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার নয়, সরাসরি সানস্ক্রিন সামগ্রীই ব্যবহার করুন। আপনার কাজের ধরন ও রোদে থাকার সময়ভেদে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুনরায় ব্যবহার করুন। এগুলোর কারণে ত্বক চিটচিটে মনে হলে ওয়াটারভিত্তিক সানস্ক্রিন সামগ্রী বেছে নিন। বিশেষত যেদিন ফেসমাস্ক বা স্ক্রাব ব্যবহার করবেন, সেদিন (এমনকি রাতে ব্যবহার করলে পরদিন) সানস্ক্রিনের কথা ভোলা যাবে না।

ত্বক পরিষ্কার করতে জেল বা পানিভিত্তিক ক্লিনজার ব্যবহার করুন। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ও ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো উপাদানসমৃদ্ধ তরল উপকরণ বেছে নিন। তবে দিনে এগুলো ব্যবহার করলে সেদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে অবশ্যই ভোলা যাবে না। রাতে ব্যবহার করলে অবশ্য অসুবিধা নেই।

সপ্তাহে এক দিন ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন
সপ্তাহে এক দিন ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন

এ ছাড়া ‘ডাবল ক্লিনজিং’ বেছে নিতে পারেন। প্রথমে তেল আছে এমন ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করুন (এতে ত্বকের তৈলাক্ততা আর ত্বকে ব্যবহৃত প্রসাধন পরিষ্কার হবে)। এরপর পানি আছে এমন ক্লিনজার ব্যবহার করুন (এতে ঘাম ও পানিজাতীয় ময়লা দূর হবে)। এই নিয়মে ত্বক পরিষ্কার হয় গভীর থেকে। প্রতিদিন ২-৩ বার করতে পারেন, নইলে অন্তত যেসব দিন ভারী মেকআপ করা হয়, সেই দিনগুলোতে।

ত্বক পরিষ্কার করার পর টোনার (তৈলাক্ত ত্বকে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট) ব্যবহার করুন। এরপর ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন ত্বকের ধরন বুঝে। ময়েশ্চারাইজারের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে হালকা, জেল বা পানি আছে এমন সামগ্রী বেছে নিন। অ্যালোভেরা, টি ট্রি, ক্যালেন্ডুলা–সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য হালকা ও সুঘ্রাণবিহীন (ক্রিমজাতীয় হতে পারে) ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।

হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড–সমৃদ্ধ সামগ্রী তেমন চিটচিটে হয় না। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা এ–জাতীয় উপকরণসমৃদ্ধ সেরাম ব্যবহার করলে অনেকটা সময় ত্বক আর্দ্র থাকে।

আগের বছরের ব্যবহৃত প্রসাধন এ বছরের জন্য উঠিয়ে রেখে থাকলে, তা ফেলে দিন। তবে সিল খোলা না হলে আর মেয়াদ থাকলে ব্যবহার করা যাবে। এই শীতে ব্যবহার করা সামগ্রীও পরেরবারের জন্য রেখে দেবেন না।

সেরাম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে
সেরাম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে

যে মেকআপ ব্রাশগুলো নিয়মিত ব্যবহার করেন, সেগুলো সপ্তাহে ১-২ দিন সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন ভালোভাবে। এরপর ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিন।

মেকআপের ক্ষেত্রে হালকা কিছু বেছে নিন। মেকআপ রিমুভিং ওয়াইপ সঙ্গে রাখুন।

সপ্তাহে ২ দিন ত্বক স্ক্রাবিং করুন।

সপ্তাহে এক-দুবার ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন বাড়িতেই। সময়-সুযোগ না মিললে ত্বকের ধরন বুঝে রিনজ-অফ মাস্ক কিংবা পিল-অফ মাস্ক কিনে ব্যবহার করা যায়। তবে যেকোনো মাস্ক ব্যবহার করার আগে পানি ও হালকা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া ভালো। নিয়মমাফিক মাস্ক উঠিয়ে ফেলার (ঘষে নয়) পর মুখে ঠান্ডা পানির ছিটা দিন।

ঘরোয়া কিছু ফেস মাস্ক
নুজহাত খান জানালেন ঘরোয়া কিছু মাস্কের কথা—
● তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ১টি কলা মিহি ভর্তা করে নিয়ে তাতে ১০ ফোঁটা লেবুর রস ও ১ চা-চামচ এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 ● শুষ্ক ত্বকের জন্য অর্ধেকটা শসা ব্লেন্ড করে এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে আলতোভাবে মুখে মালিশ করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

● যেকোনো ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ও ত্বকের বদ্ধ ছিদ্রপথ খুলতে ২ চা-চামচ ওটমিল আর ১ চা-চামচ বেকিং সোডার মিশ্রণে ধীরে ধীরে কয়েক ফোঁটা পানি যোগ করে পেস্ট তৈরি করুন। আলতোভাবে মালিশ করে মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

● ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস প্রতিরোধে ২-৩টি ডিমের সাদা অংশে তুলা ডুবিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ভেজা কাপড় কিংবা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।

● কালচে দাগের জন্য আধা চা-চামচ হলুদগুঁড়া, ১-২ টেবিল চামচ কাঁচা মধুর মিশ্রণ আলতোভাবে মালিশ করে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

● বলিরেখা দূর করতে ২টি অ্যাভোকোডা মিহি ভর্তা করে ২ টেবিল চামচ কোকোয়া পাউডার ও ১ টেবিল চামচ কাঁচা মধু মিশিয়ে মুখে আলতোভাবে মালিশ করে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।