মায়ের যত্ন চাই

স্ত্রী থেকে সন্তানের মা। জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা। একটি সন্তান থাকলেও আবার মা হওয়ার অনুভূতি একই রকম। অদ্ভুত এক ভালো লাগা। নবজাতকের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবনা পরিবারের সবার হৃদয়জুড়ে। ঘর আলো করে আসা এ আদরের শিশু যাঁর গর্ভে ছিল এতটা সময়, তাঁর যত্নআত্তির কথা ভুলে গেলেও কিন্তু চলবে না।

অনেক ক্ষেত্রে মা নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে যান। তাই পরিবারের সবারই মায়ের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। মা যাতে নিজের অবহেলা না করেন, সেদিকটা দেখতে হবে পরিবারেরই। মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার অন্যতম নিয়ামক। সুস্থ মায়ের কোলেই বেড়ে ওঠে সুস্থ ও হাস্যোজ্জ্বল শিশু।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফাতেমা রহমান বলেন, মায়ের পুষ্টিতেই নিশ্চিত হয় সন্তানের পুষ্টি। মাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। ঘুমাতে হবে, বিশ্রাম করতে হবে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজের যত্ন নিতে হবে। আর এই সবগুলো বিষয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবারের। যে সময় মা শিশুকে খাওয়াচ্ছেন না, সেই সময়গুলোতে শিশুর বাবা এবং পরিবারের অন্যরা শিশুকে রাখবেন। তবেই মা নিজের সব যত্নআত্তির সময় পাবেন।

খাওয়া-ঘুম ঠিকঠাক

আমিষ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে মাকে। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো আর দিনে ২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া উচিত। তবে রাতে শিশু কাঁদতে পারে, শিশুকে খাওয়ানোরও প্রয়োজন পড়ে। তাই একটানা ঘুমানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে শিশুকে খাওয়ানোর আগে ও পরে যতটা সময় সম্ভব বিশ্রাম করুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হলে মায়ের শরীর খারাপ করবে, মেজাজও খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।

মায়ের পরিচ্ছন্নতায়, মায়ের যত্নে

স্বাভাবিক নিয়মে নিজের যত্ন নিন। সন্তানের মা হয়েছেন বলে নিজেকে ভুলে যাবেন না। গোসল করা, চুল আঁচড়ানোসহ রোজকার পরিচ্ছন্নতামূলক কাজগুলো করতে অবহেলা করা যাবে না। কোনো সেলাই থাকলে সেটির ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ জেনে নিন এবং সেই অনুযায়ী চলুন। সেলাইয়ের স্থান শুকনা ও পরিষ্কার রাখুন। শিশুকে প্রতিবার দুধ পান করানোর আগে ও পরে পরিষ্কার, ভেজা কাপড় বা তুলা দিয়ে স্তন পরিষ্কার করে নিন। স্তন ও স্তনবৃন্ত শুকনা রাখুন। সাপোর্টিভ ব্রাসিয়ার ব্যবহার করতে পারেন। স্যানিটারি ন্যাপকিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলে নিন। পরিষ্কার, সুতি কাপড় পরুন প্রতিদিন। এমন পোশাক বেছে নিন, যাতে সন্তানকে স্বাচ্ছন্দ্যে দুধ পান করাতে পারেন।

মনের আনন্দে মায়ের দিনযাপন

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তানের জন্মের পর মায়ের নানান ধরনের মানসিক অসুবিধা হতে পারে। মা বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন। এমন অবস্থায় কাছের মানুষদের দায়িত্ব মাকে সময় দেওয়া। তাঁর সঙ্গে ভালো আচরণ করা এবং তাঁকে হাসিখুশি রাখা। নবজাতকের পাশাপাশি মায়ের ভালো থাকা নিয়েও চিন্তা করুন। এমন আচরণ করুন, যাতে মায়ের মনে না হয় যে তিনি নবজাতকের তুলনায় নিতান্ত তুচ্ছ একজন সদস্য। কখনো কখনো মা সন্তানের ব্যাপারে অতিরিক্ত ভাবতে পারেন, সন্তানের ভাবনায় অদ্ভুত আচরণও করতে পারেন, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তানকে তাঁর কাছে অসহ্যও লাগতে পারে। পরিবারকেই এমন পরিস্থিতিতে মায়ের পাশে থাকতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়লে মাকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। মা কর্মজীবী হলে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। এখনো এ দেশের সব অফিসে মায়েরা ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না। এ নিয়ে মা দুশ্চিন্তায় পড়তে পারেন। এসব বিষয়ে মাকে সাহস জোগাতে হবে। মা যেন কারও কাছে সন্তানকে ভরসা করে রাখতে পারেন—এমন নির্ভরতার আশ্বাস দিতে হবে মাকে। মাকে তাঁর পছন্দমতো কাজে প্রতিদিন খানিকটা সময় ব্যয় করার সুযোগ করে দিতে হবে। মায়ের বিনোদনের দিকটা খেয়াল না রাখলে একসময় জীবনকে তাঁর কাছে একঘেয়ে মনে হতে পারে। সার্বিক সুস্থতার সঙ্গে এ বিষয়গুলোও সম্পর্কিত।