বধিরতার কারণ ও প্রতিরোধ

৩ মার্চ ছিল বিশ্ব শ্রবণ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শ্রবণশক্তিই জীবন: বধিরতা যেন আপনার সীমাবদ্ধতা না হয়’।

আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শ্রবণশক্তি। অথচ শ্রবণশক্তির যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আমরা বরাবরই উদাসীন। জন্মগত বধিরতা বাক্‌শক্তি বিকাশে বাধা দেয়। শ্রবণক্ষীণতা ও বধিরতা মানুষকে সমাজে অগ্রহণযোগ্য করে ফেলে। শিশুর ভাষা শিক্ষা, লেখাপড়া ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি অপরিহার্য।

একটু সচেতনতা

সামান্য সচেতনতা যেমন উচ্চ আওয়াজে গান না শোনা, জোরে হর্ন না বাজানো, কর্মক্ষেত্রের শব্দদূষণের মাত্রা বেশি হলে যথাযথ শব্দরোধকের ব্যবহার করা—শ্রবণশক্তি হ্রাস প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যদিকে যারা বধির, যথাযথ শ্রবণযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তারাও নিজেদের সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে। শ্রবণশক্তি হ্রাস রোধ এবং বিশ্বজুড়ে শ্রবণশক্তির যত্ন কীভাবে নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণশক্তি দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি নতুন স্লোগান ঘোষণা করে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পোস্টার, লিফলেট এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেটি সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করে।

বধিরতায় কর্মহীনতা

বধিরতার কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ কোনো না কোনো মাত্রার শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন। বধিরতা সমস্যার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে মধ্যকর্ণের প্রদাহ, আঘাতজনিত সমস্যা, উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে সৃষ্ট বধিরতা। শব্দদূষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শব্দে হেডফোন দিয়ে গান শোনা, উচ্চমাত্রার হর্ন বাজানো, লাউডস্পিকারের শব্দ ইত্যাদি।

বধিরতা কেন

 বংশগত কারণে মানুষ বধির হতে পারে

 প্রসবকালীন জটিলতা যেমন কম ওজন, প্রিম্যাচিউরিটি, বার্থ এসফ্যাক্সিয়া, নিউনেটাল জন্ডিসের কারণেও বধিরতা হতে পারে

 বধিরতার জন্য দায়ী মায়ের গর্ভকালীন কিছু সংক্রমণ। যেমন সাইটোমেগালো ভাইরাস, রুবেলা

 শিশুর মেনিনজাইটিস, মাম্পস, মিসেলস, মধ্যকর্ণের সংক্রমণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়

 উচ্চ শব্দ। হেডসেট বা হেডফোনের বেশি ভলিউম এবং আতশবাজির শব্দ কানের জন্য ক্ষতিকর

 কানের ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার

 কানের অন্যান্য অসুখ

প্রতিরোধ

টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা

শিশুদের শ্রবণক্ষমতা স্ক্রিনিং কর্মসূচি

স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষিত করা

হিয়ারিং ডিভাইস এবং থেরাপি সহজলভ্য করা

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, ওটোটক্সিক ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার

কিছু পরামর্শ

কানে কোনো কিছুই ঢোকানো যাবে না। এমনকি কান পরিষ্কার করার জন্য কাঠি, মুরগির পালক বা কটনবাড ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

খৈল জমে কান বন্ধ ভাব হলে বা কানের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু প্রবেশ করলে অপসারণ করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে তেল বা অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

কানে যাতে পানি না যায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

কানে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।