অতিরিক্ত হাত ধোয়ার পর যা করবেন

কোভিড-১৯ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বারবার হাত ধোয়া। এই ভাইরাসটির বাইরের দিকে একটা চর্বির আবরণ আছে, যা সাবানের ক্ষারে ভেঙে যায়। সে কারণে বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে হাতে লেগে থাকা জীবাণুটি দূর করা সম্ভব। এ জন্য সারা পৃথিবীর সবাই এখন বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করছেন।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তাঁদের, যাঁদের হাতের ত্বক খুব শুষ্ক, ফাটা বা যাদের আগে থেকে ত্বকের সমস্যা, যেমন জেরোসিস, একজিমা, সোরিয়াসিস ইত্যাদি আছে। বারবার ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ধোয়ার কারণে তাঁদের হাতের ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে, কারও চুলকানি হচ্ছে, ফেটে ফেটে যাচ্ছে, লাল হচ্ছে বা হাতের চামড়া উঠে যাচ্ছে। তাহলে এখন কী করা যায়!

করোনাভাইরাস দূর করতে বারবার কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া অব্যাহত রাখতেই হবে। আবার হাত সুস্থ রাখতে হাতের শুষ্কতা রোধেও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।

সে ক্ষেত্রে যা করবেন

১. হাত ধোয়ার সময় অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হবে। মৃদু গরম পানি বা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুলেই হবে।

২. হাত ধোয়ার জন্য সাধারণ সাবানই যথেষ্ট কার্যকর। জীবাণুনাশক উপাদান (যেমন স্যাভলন, ডেটল) ইত্যাদির দরকার নেই। অনেকে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ত্বকে এগুলো লাগাচ্ছেন বা পানিতে মিশিয়ে হাত ধুচ্ছেন। রাসায়নিক উপাদানগুলো ত্বককে আরও ঝামেলায় ফেলবে।

৩. হাতে খানিকটা বা সামান্য পরিমাণ সাবান লাগিয়ে পানি দিয়ে ফেনা করে ২০ সেকেন্ড ধরে পরিষ্কার করুন। আঙুলের ফাঁক, নখ, কবজি ইত্যাদিও পরিষ্কার করুন। সাবান বেশি করে নিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। হাত ধুতে ধুতে প্রতিদিন একটা সাবান খরচ করে ফেলবেন, ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়।

৪. ঘরবাড়ি, মেঝে, সিংক, বাথরুম প্রভৃতি পরিষ্কার করার সময় ব্লিচ পাউডার, জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি প্রভৃতি অনেকে ব্যবহার করছেন। বিষয়টা খারাপ নয়। তবে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার সময় অবশ্যই হাতে গ্লাভস পরে নিন। কাজ শেষে গ্লাভস খুলে ফেলে দিন।

৫. অনেকে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করে আবার ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার হাতে লাগাচ্ছেন। এর প্রয়োজন নেই। অ্যালকোহল স্যানিটাইজারে ত্বক আরও শুষ্ক হতে পারে, জ্বালা করতে পারে। ত্বকের সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের জন্য শুধু সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়াই যথেষ্ট। যেখানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই, সেখানেই শুধু স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

৬. হাত ধোয়ার পর শুকিয়ে গেলে হাতে খানিকটা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন। লোশনের চেয়ে অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম ভালো। সবচেয়ে ভালো পেট্রোলিয়াম জেলি। যতবার হাত ধোবেন, ততবার পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান।

৭. রাতে ঘুমের মধ্যে তো আর হাত ধোয়ার ঝামেলা নেই। তাই রাতে শোয়ার সময় একটু পুরু করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন, সারা রাতে ত্বক আর্দ্র হবে। অনেকে ত্বক আর্দ্র করে সুতি দস্তানা পরে ঘুমাতে পারেন।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, চর্ম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।