ভুয়া খবর প্রচার কোরো না!

আপনি নতুন কী কী গুজব পেলেন? কী কী ছড়ালেন? আমাদের সবার হাতে আছে মোবাইল ফোন, আমাদের প্রায় সবারই আছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার; অনবরত আসছে তথ্য, পরামর্শ, টোটকা! এই সব গুজবের কোনো কোনোটা ভয়াবহ ক্ষতিকর।

যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে গুজব ছড়িয়েছিল, এমনকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা গুজব ছড়িয়েছিলেন, হেয়ার ড্রায়ারের বাতাস নাকে-মুখে নিলে করোনাভাইরাস মরে যাবে। এটা কেবল ভুল নয়, এটা ক্ষতিকর।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হচ্ছেন মিথ্যা তথ্য, ভু্ল ও ক্ষতিকর পরামর্শের এক বড় উৎস। তিনি প্রথমে বলেছিলেন, করোনাভাইরাস হলো হোক্স, ধাপ্পাবাজি। তারপর তিনি হাতে কাগজ নিয়ে দুটো ওষুধের নাম বললেন, এটা নিলেই কোভিড-১৯ রোগ সেরে যায়। এতই যদি সস্তা হবে, তাহলে নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোয় এত মানুষ মারা যাচ্ছে কেন? আর ওই ওষুধ খুবই বিপজ্জনক। ভুলভাল খেলে মানুষ মারা যায়।

ভুল তথ্য দিয়ে টুইট করে সেই টুইট ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন অমিতাভ বচ্চনও। তিনি বলেছিলেন, শাঁখ বাজালে কম্পন থেকে এবং নিশ্বাস ছাড়ার ক্ষমতা থেকে করোনাভাইরাস দমন করা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তাররা তাঁকে তুলাধোনা করতে শুরু করলেন। অমিতাভ বচ্চন নিজের টুইট প্রত্যাহার করলেন।

আমাদের দেশে প্রচলিত কতগুলো গুজব এখন ভঞ্জন করি।

১. চা খেলে বা ১৫ মিনিট পরপর গরম পানি খেলে করোনাভাইরাস মরে যায়। করোনাভাইরাস গলা থেকে পেটে চলে যাবে, অ্যাসিডে মারা যাবে।

এটা কি সত্য? না। গরম পানি খেলে করোনাভাইরাস মারা যায় না। গরম পানি বা চা পান করলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যায় না, উপশমও হয় না।

ডা. সেজান মাহমুদ, লেখক, চিকিৎসক, শিক্ষক, ফ্লোরিডা থেকে লাইভে এসে জানাচ্ছেন, চায়ের অনেক উপকারিতা আছে। চা খেতে চাইলে খান। আরাম বোধ করবেন, একটু ভালো লাগা কাজ করবে, সব ঠিক আছে। কিন্তু এটা খেলে করোনাভাইরাস ধরবে না বা ধরলে সেরে যাবে, সেটা ভাবা বোকামি হবে।

একই কথা আমি বলতে চাই অন্যান্য ফেসবুক-টোটকা সম্পর্কেও। থানকুনি পাতা, লেবু-গরম পানি, কালিজিরা, আদা-চা, যষ্টিমধু...আপনি যদি এগুলো ধুয়ে নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খান, ক্ষতি নেই। ক্ষতি শুধু এটাই যদি আপনি ভাবেন, এর দ্বারা আপনি এ–যাত্রা বেঁচে যাবেন। আপনাকে স্বাস্থ্যবিধি সব কটা মেনে নিতে হবে। এগুলো কী? এক. বাসায় থাকুন। দুই. বারবার সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ্ধতিতে হাত ধুয়ে নিন।

৩. অন্য মানুষের সঙ্গে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

৪. হাঁচি-কাশি হলে টিস্যু পেপার অথবা কনুই ভাঁজ করে নাক–মুখ ঢাকুন।

৫. ব্যায়াম করুন।

৬. ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করুন।

৭. ঠিকমতো ঘুমান।

৮. আপনার গলাব্যথা, শুকনো কফ ও জ্বর হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

৯. সব সময় করোনার খবর দেখবেন না। সব সময় করোনার খবর পড়বেন না। ভুয়া খবর বা ফেক নিউজের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে দিয়েছে, ‘করোনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানুন।’ এ জন্য নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখুন। যুক্তরাষ্ট্রে আপনি নির্ভর করতে পারেন নিউইয়র্ক টাইমস–এর ওপরে। বাংলাদেশে আমার পরামর্শ হবে প্রথম আলো কাগজ এবং প্রথম আলো ডটকমের মতো নির্ভরযোগ্য মূলধারার গণমাধ্যমের ওপরে নির্ভর করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশ্নোত্তর ভিডিও অধিবেশনে একজন জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি ডাকে আসা জিনিসপত্র গ্রহণ করব। উত্তর: ‘হ্যাঁ। কাগজে করোনা ছড়ায় না।’

সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না।

আর মন ভালো রাখুন। হাসুন। হাসলে রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়ে। ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলেও উপকারী হরমোন নিঃসৃত হয়।

১০. আমাদের কারও না কারও করোনাভাইরাস পজিটিভ হবে। তাই বলে কান্নাকাটি করে হুলুস্থুল বাধানোর কিছু নেই। ১০ জনে ৮ জন আপনাআপনিই সেরে যাব। ২ জনের হাসপাতালে যাওয়া লাগতে পারে।

১১. পাড়ায় করোনা রোগী পাওয়া গেছে, বিল্ডিংয়ে করোনা রোগী আছে বলে কান্নাকাটি করার কিছু নেই। এই রোগ বাতাসে ভেসে ভেসে আসে না। আপনি রোগীর ৬ ফুটের মধ্যে যাবেন না, তার ধরা বা তার থুতু–কাশি পড়া কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না। হাত ধুয়ে নেবেন। তাহলেই আপনি ঠিক থাকবেন।

বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক পরা ভালো। যদিও স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এটার দরকার নেই। তবে বাংলাদেশ সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলছে বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক পরতে হবে। এটাও দেখা গেছে বিশ্বের যেসব জায়গায় সবাই মাস্ক পরে বাইরে বেরিয়েছে, সে জায়গাগুলোতে সংক্রমণ কম হয়েছে। তাহলে বাইরে বের যদি হতেই হয় সতর্কতার জন্য না হয় মাস্ক পরলেনই। ক্ষতি তো নেই।

আসলে তো একটা উল্টোপাল্টা সময়ের মধ্য দিয়েই আমরা যাচ্ছি। উল্টোপাল্টা, সোজা নানা নিয়মকানুন শুনতে পাচ্ছি।

এসব থেকে বাঁচার উপায় হলো বাসায় থাকুন। হাত ধোন। অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তারকে ফোন করুন। ব্যায়াম করুন। পরিমিত খান। আর ফুর্তিতে থাকুন। হাসুন।

আপনি যদি নিজে বিশেষজ্ঞ না হন, বিশেষজ্ঞ-জ্ঞান বিতরণ করবেন না। কোনো একটা ওষুধ, দাওয়াই, টোটকা দেখলেই সেটা মেসেঞ্জারে পাঠাবেন না। অনলাইনে ফ্যাক্ট চেকার আছে। ফ্যাক্ট চেক করে নিন।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্প আয়, নিম্ন আয়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেতে পারে। সবচেয়ে কার্যকর হবে আপনার নিজের গরিব আত্মীয়কে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে সাহায্য করা। কোনো সংগঠনকে কোনো অ্যাকাউন্টে বা নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে তিনবার চেক করে নেবেন, এটা আসলেই নির্ভরযোগ্য কি না।

তো কত কত গুজবই তো শুনলাম। এবার আমরা একটা ছড়াই: বাসনকোসন মাজলে দুশ্চিন্তা কমে। দুশ্চিন্তা কম হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়ে। বাসন মাজুন, সুস্থ থাকুন।

এটা কিন্তু সত্য যে বাসন মাজলে মন ভালো থাকে। টাইম সাময়িকীর আর্টিকেল পাবেন এখানে:

https://time.com/4056280

ভালো কথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, ৩০ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে বসে থাকবেন না। অন্তত তিন মিনিটের বিরতি নিন। এখন তিন মিনিটের বিরতি। নিজের ঘরের মধ্যেই একটু হাঁটুন।

‘বাবা। আমার বোনের নাম প্যারিস কেন?’

‘কারণ আমরা প্যারিসে গিয়েছিলাম হানিমুনে। তারপর না সে হলো।’

‘ও বুঝতে পেরেছি।’

‘তুমি তো বুঝবেই, তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট, কোয়ারেন্টিন।’