নবজাতকের প্রয়োজনীয়তায়

নবজাতকের পোশাক বা অন্য িকছু জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ছবি: নকশা
নবজাতকের পোশাক বা অন্য িকছু জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ছবি: নকশা

সময়টা করোনার দখলে। মায়েদের চিরন্তন দুশ্চিন্তায় যোগ হয়েছে নতুন এক নাম। এ সময় যাঁদের সন্তান প্রথমবারের মতো দেখছে পৃথিবীর আলো, তাঁরা পড়ছেন এক বিপাকে। নবজাতকের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাবেন কোথায়! বিপণিবিতান বন্ধ। ভরসা কেবল অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখানেও ভয়, ব্যাগ–প্যাকেটের মাধ্যমে বা বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সময় ভাইরাস চলে আসবে না তো নবজাতকের কাছে?

সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞজন। তবে আগে একটু ‘সরেজমিনে’ দেখে আসা যাক।

করোনাময় এই সময়ে অবশ্য সেই সুযোগ সীমিত। মুঠোফোনে কথা হলো নতুন এক মায়ের সঙ্গে। যশোর জেলা জজ আদালতের সহকারী জজ সুমনা পাল। গত ৩ এপ্রিল তাঁর প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছে। কীভাবে নবজাতকের প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করলেন তিনি সেই সময়? উত্তরে জানা গেল, তাঁর কাকিমা বানিয়ে দিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাপড়। খুলনা থেকে সেসব সযত্নে যশোরে নিয়ে এলেন তাঁর মা। এ ছাড়া তাঁর শাশুড়িও বাড়ি থেকে কিছু শাড়ি ও ওড়না এনেছিলেন (নিজেদেরই, তাই সেগুলো বাড়িতেই ছিল), যা কেটে নবজাতকের কাজে লাগানো হয়েছে। সেদিকে ছিলেন নিশ্চিন্ত। তবে মশারির ব্যবস্থা করতে খানিকটা ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। বন্ধ থাকা দোকানের সামনে লেখা দোকানির ফোন নম্বরটি নিয়ে তাঁর কাছ থেকে জোগাড় করা হলো নবজাতকের মশারি। তবে প্রথমে জীবাণুমুক্ত করে নিয়েছিলেন নবজাতকের ব্যবহার্য সবকিছু।

সতর্ক থাকুন

বাইরে থেকে আনা পণ্যের মাধ্যমে সত্যিই কি ছড়ায় করোনাভাইরাস? যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, বাইরে থেকে আনা পণ্য বা প্যাকেটের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি খুবই কম। তবে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকারও উপায় নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জী জানালেন, বাইরে থেকে আনা যেকোনো পণ্য ব্যবহারের আগেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যদিও নবজাতকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হার কম, তবু মাথায় রাখতে হবে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই নাজুক। নবজাতককে মায়ের দুধ ছাড়া কিছুই দেবেন না। তাহলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে গড়ে উঠবে। গরুর দুধ বা কৌটার দুধ দেবেন না কোনো অবস্থাতেই। আর শিশুকে স্পর্শ করার আগে-পরে নিয়মমাফিক হাত তো ধোবেনই; আত্মীয়-পরিজন যেন নবজাতকের কাছে কম আসেন ও তাকে কম স্পর্শ করেন।

জেনে নিন

কেনাকাটা বা হোম ডেলিভারি নেওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। মাস্ক পরিধান করুন (কাপড়ের মাস্কও হতে পারে), কথাবার্তার সময় মাস্ক নামাবেন না। গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন, তবে একই গ্লাভস একাধিকবার ব্যবহার করবেন না।

l বাইরে থেকে আনা প্যাকেট ফেলে দিন। এরপর নিয়মমাফিক হাত ধুয়ে নিন।

l প্যাকেট ফেলে দেওয়ার পর ভেতরের জিনিসটিকে জীবাণুমুক্ত করার পালা। কাপড়জাতীয় পণ্য হলে তা প্রথমে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। শেষ ধাপের ধোয়ার কাজটি করুন স্যাভলন বা ডেটল মেশানো পানি দিয়ে। এরপর রোদে শুকিয়ে নিন। সবশেষে ইস্তিরি করে ফেলুন (সম্ভব হলে)।

l নবজাতকের প্রসাধনসামগ্রী তেমন প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে। এ ধরনের সামগ্রী বাড়িতে আনলে প্যাকেট ফেলে দেওয়ার পর ভেতরের বোতল বা টিউব জীবাণুনাশক দ্রবণ (যেমন, হেক্সিসল) দিয়ে মুছে নিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার পর ব্যবহার করুন।

l ডায়াপার এবং ওয়াইপ ব্যবহার না করাই ভালো। তুলার বড় রোল থেকে প্রয়োজনমতো তুলা নিয়ে কলের পানিতে (কিংবা কুসুম গরম পানি) ভিজিয়ে নবজাতকের শৌচকাজ করাতে পারেন।

অনলাইনে পসরা

ফ্যাশন হাউস শৈশবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব চৌধুরী জানালেন, এখন তাঁদের অনলাইন বেচাকেনা পুরোদস্তুর চালু আছে। www.shoishobbd.com-এ যোগাযোগ করতে পারেন। নবজাতকের জামা-কাপড় এবং জুতা (কাপড়ের তৈরি) পাবেন এখানে। একই রকম ব্যবস্থা রয়েছে ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কুঁড়েঘর এবং অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ই অর্ডার ডট কমে। কুঁড়েঘরের স্বত্বাধিকারী নূরজাহান মমতাজ জানালেন, নবজাতকের ব্যবহার্য নিমা, ন্যাপি, প্যান্ট, রেক্সিন, মশারি এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করেন তাঁরা। এ ছাড়া ই অর্ডার ডট কম (eorder.com.bd) থেকে নবজাতকের দরকারি জিনিসপত্র আনাতে পারবেন বলে জানালেন সেখানকার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (ফিন্যান্স ও অ্যাডমিন) হোসেন আলী। সীমিত পরিসরে (জরুরি প্রয়োজনে, শুধু ঢাকায়) নবজাতকের দরকারি পণ্য সরবরাহ করছে ফেসবুকভিত্তিক সারস অনলাইন শপ। যে পণ্য যেখানেই দেওয়া হোক না কেন, ডেলিভারিকারী ব্যক্তি কিংবা পণ্যের মাধ্যমে যাতে জীবাণু না ছড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখছেন সবাই।