চিনি বনাম চিনিগো: স্বাস্থ্যসচেতন রোজাদারদের শত্রু-মিত্র

'আনন্দ–উৎসবে শুরুতেই মিষ্টি; ভুরিভোজের শেষ পাতেতে মিষ্টি; এই তো হলো নতুন আলাপ;  হোক না শুরু দিয়ে একটু মিষ্টি; ভাঙা সম্পর্ক যেই জুড়ল, সেই দোলাতে  মিষ্টি।' কবির কবিতায় মিষ্টি। মিষ্টি নিয়ে প্রেমিক বলছেন, 'মিষ্টি মুখের দুষ্টু হাসি কেড়ে নিল মন।' মিষ্টি নিয়ে কবিতায়, গানে, সাহিত্যে সৃষ্টি হয়েছে বৃষ্টি। চায়ের কাপেও লাগে মিষ্টি। বাঙালি জাতির প্রাণের খাবার এই  মিষ্টি। শিশু থেকে প্রবীণ—সবাই আমরা মিষ্টি খেতে ভালোবাসি। মোদ্দাকথা, আমাদের জিবে যে স্বাদ আমরা প্রতিদিন একটু হলেও পেতে চাই, সেটা হলো মিষ্টি। আর সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারির সময় মিষ্টি না হলে আমাদের চলবে কী করে?

মিষ্টিজাতীয় খাবারের মূল উপাদান চিনি। এই চিনির রাসায়নিক নাম সুক্রোজ, যা শর্করার এক অন্যতম উৎস। এ ছাড়া চিনির তেমন আর কোনো পুষ্টিগুণ নেই। প্রতিদিন আমরা চা, কফি বা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবারের সঙ্গে প্রচুর চিনি খাচ্ছি। প্রচুর চিনি খাওয়া শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনি সাদা করতে গিয়ে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এতে খাবারের প্রাকৃতিক গুণাবলি আর থাকে না। এ কারণে চিনি মানুষকে মোটা করে দেয়, বাড়ায়  ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। করোনা পরিস্থিতিতে এবারের রমজানে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং সুস্থ থাকা যখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তখন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা প্রয়োজন। কারণ, চিনিতে থাকা গ্লুকোজ আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভারে চর্বি জমা, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি রোগের জন্ম দিতে পারে। তেমনই এই রোজার সময়ে সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারে হঠাৎ শরবত বা অন্য মিষ্টিজাতীয় খাবারের মাধ্যমে চিনি খেলে একরাশ উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ রক্তে প্রবেশ করে। হঠাৎ শরীরে এই উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ বৃদ্ধিকে বলে গ্লুকোজ স্পাইক। গ্লুকোজ স্পাইক ধীরে ধীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

তাহলে আমরা কি আমাদের প্রিয় মিষ্টি  স্বাদ থেকে বঞ্চিত হব? না, আমরা খাব কিন্তু পরিমিতভাবে এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করব এমন চিনি দিয়ে, যাতে ক্যালোরি থাকবে শূন্য।

অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, 'জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা যে একটি খাদ্য উপাদান থেকে বিরত থাকতে বলি, তা হলো সাদা চিনি, যা White Poison নামে পরিচিত।' তিনি আরও বলেন, এই চিনির একটি প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে স্টেভিয়া, যা আমাদের শুধু মিষ্টি স্বাদটুকুই দেবে অন্য কোনো সাইড ইফেক্ট নয়। আর সে জন্য প্রয়োজন এই রমজান মাসে চিনি বর্জন করে এর কোনো নিরাপদ বিকল্প বেছে নেওয়া।

বিশ্বব্যাপী তেমনই একটি জনপ্রিয় বিকল্পের নাম স্টেভিয়া। বর্তমানে স্টেভিয়া পাতার শুদ্ধতম নির্যাস স্টেভিয়ল গ্লাইকোসাইডকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত দেওয়া হচ্ছে চিনির বিকল্প মিষ্টি হিসেবে। যা একদিকে যেমন চিনির থেকেও বহুগুণ বেশি মিষ্টি, অন্যদিকে চিনির মতো এতে কোনো ক্যালরি নেই। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক তাই একেবারেই নিরাপদ। অর্থাৎ এটি খাওয়ার পর চিনির মতো শরীরে গ্লুকোজ স্পাইক হয়ে নানা রকম জটিলতা আর অসুখ–বিসুখের কোনো আশঙ্কা তো নেই–ই, বরং এটি নিয়মিত খেলে  ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও রোজা রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।

আর সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের স্টিভিয়ার এই প্রোডাক্ট Chinigo নামে এখন বাংলাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে। আসুন এই রমজানে আমরা আর একটু সচেতন হই, নিজে সুস্থ থাকি অন্যকেও সুস্থ থাকার পরামর্শ দিই। চিনি ছেড়ে মিষ্টি খাবারে দিই চিনির প্রাকৃতিক বিকল্প chinigo, যা রমজানকে করে তুলবে আরও স্বাস্থ্যকর আরও মধুর। তাহলে, ইফতারের শরবত, ফলের রস কিংবা ঈদের সেমাইয়ে মিষ্টি স্বাদ  আনুক Chinigo। মিষ্টিমুখ করুন এবং সুস্থ থাকুন।