কীভাবে কথা বললে সন্তান শুনবে?

সন্তানকে েবাঝাতে হবে ইতিবাচকভাবে
সন্তানকে েবাঝাতে হবে ইতিবাচকভাবে

লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সবাই বাসায় একসঙ্গে পুরোটা সময়। কেউ কেউ হয়তো সন্তানদের পড়ালেখার ব্যাপারটি দেখেছেন আর হতাশ হয়ে ভাবছেন, ‘এই কথা না শোনা বেয়াড়া সন্তানদের কী করে মানুষ করব?’ আর সেই সঙ্গে সন্তানেরা হয়তো ভাবছেন, ‘আমাদের মা–বাবা একদম সনাতন আমলের, কথা শুনতেই চায় না।’

এই অচল পরিস্থিতি সামাল দিতে পড়তে পারেন আডেল ফ্যাবার এবং এলেইন মজলিশের লেখা এক কালজয়ী বই, হাউ টু টক সো কিডস উইল লিসেন অ্যান্ড লিসেন সো কিডস উইল টক। বইটি পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে বলেই বই থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরার চেস্টা করছি। 

উপদেশ নয়, সন্তানদের অনুভুতিকে বোঝার চেষ্টা করুন। 

নিচের কথোপকথনটা খেয়াল করুন। 

সন্তান: (মন খারাপ করে) আমার পোষা মাছটি আজকে মারা গেছে। 

অভিভাবক: কান্নাকাটি কোরো না, বাবু। করোনাভাইরাসের আমলে মানুষের জীবনেরই এখন কোনো দাম নেই, আর এটা তো একটা ছোট্ট মাছমাত্র। 

সন্তানের কান্না বাড়তে থাকল। 

অভিভাবক: কান্না থামাও, প্লিজ। তোমাকে কাঁটাবন থেকে আরেকটা মাছ কিনে দেব। 

সন্তান: (মাটিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে) আমি আরেকটা মাছ চাই না। 

অভিভাবক: এই রকম ব্যবহার করলে মাছ দেবই না তোমাকে। 

ওপরের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি খুব সহজেই সামলে নেওয়া যেত ব্যবহারে ছোট্ট একটি পরিবর্তন এনে। যেকোনো সমস্যায় দ্রুত সমাধানের দিকে না এগিয়ে সন্তানের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দিন। এতে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি দ্রুতই অনুকূলে আসবে। নিচের উদাহরণটা খেয়াল করলেই সেটা পরিষ্কার বোঝা যাবে। 

সন্তান: (মন খারাপ করে) আমার পোষা মাছটি আজ মারা গেছে।

অভিভাবক: তাই? আহা রে…।

সন্তান: ও ছিল আমার বন্ধু। 

অভিভাবক: একটা বন্ধুকে হারানো সহজ ব্যাপার নয়। 

সন্তান: মাছটি লেজ নেড়ে কী সুন্দর করে সাঁতার কাটত! 

অভিভাবক: পোষা মাছটির সঙ্গে তোমার অনেক সুন্দর সময় কেটেছে। 

সন্তান: আমি মাছটিকে প্রতিদিন খাবার দিতাম। 

অভিভাবক: তুমি সত্যিই মাছটার অনেক যত্ন নিয়েছ। 

সন্তানদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার উপায়

সন্তানদের কাছ থেকে সহযোগিতা আদায় করার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এই পরামর্শগুলো কাজে লাগতে পারে— 

১. সমস্যাটি বর্ণনা করুন 

২. দরকার পড়লে আরও তথ্য দিন 

৩. নিজের অনুভূতিকে ব্যক্ত করুন 

৪. প্রয়োজনে নোট লিখুন। 

কীভাবে করবেন? সেই বিষয়েও পরামর্শ আছে— 

সন্তান সদ্য চুনকাম করা ঘরের দেয়ালে এঁকেছে, যা দেখে আপনার মেজাজ খুবই চড়ে গেল। এখন কী বলবেন? 

সচরাচর আমরা যা বলি: আবার যদি দেয়ালে আঁকিস, থাপ্পড় একটাও মাটিতে পড়বে না। 

যা হওয়া উচিত: আঁকা বা লেখার জন্য দেয়াল নয়। তার জন্য আছে কাগজ (তথ্য দিলেন)।

আরও কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায়—

সচরাচর যা হয়: তুমি চরম বেয়াদব। আমার কথার মাঝে খালি কথা বলো। 

যা হওয়া উচিত: আমার একদম ভালো লাগে না, যখন একটা কথা বলা শুরু করার পরে আমি শেষ করতে পারি না (এখানে আপনার অনুভূতিতে ব্যক্ত করলেন)। 

নোট লেখা: সন্তান কথা শুনতে চায় না। শুধু টিভি দেখবে, না হয় কম্পিউটারে সময় কাটাবে। হাজারবার বলে বলে আপনি ক্লান্ত। এ ক্ষেত্রে নোট লিখতে পারেন। কম্পিউটারের ওপর নিচের নোটটি লিখে রাখলে ফলাফল কী হতে পারে?

‘কম্পিউটারটি অন করার আগে, চিন্তা করে বলো তো পড়াশোনা শেষ হয়েছে কি না?’ 

আপনার ওপর সন্তানদের নির্ভরশীলতা কী করে কমাবেন 

অনেক সন্তানই যেকোনো কাজে মা–বাবার প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এতে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, বাড়ে পরনির্ভরতা। এসব ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি—

১. সন্তানদের নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে দিন 

২. তাদের কঠিন প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন 

৩. বেশি প্রশ্ন করবেন না 

৪. দ্রুত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না 

৫. কখনো সন্তানকে আশাহত করবেন না। 

এ বিষয়েরও কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে— 

১. সন্তান হয়তো একটি বয়াম খোলার চেষ্টা করে পারছে না। 

সচরাচর যা বলি আমরা: বয়ামটা ভেঙে যাবে । আমার কাছে দাও। আমি খুলে দিচ্ছি। 

যা হওয়া উচিত: মাঝেমধ্যে বয়াম খুলতে একটু বেশি কসরত করতে হয় । চামচ দিয়ে ঢাকনায় একটু চাপ দিলে কাজ হতে পারে। 

২. সন্তান হয়তো একটা অংক পারছে না। 

সচরাচর আমরা যা বলি: এই অংক তো পানির মতো সোজা। আসো, আমি এখনই দেখিয়ে দিচ্ছি। 

যা বলা উচিত: দশমিক নম্বরগুলোকে গুণ করা সহজ কাজ নয় । দশমিক যে কোন ঘরের পরে বসবে, তা নির্ণয় করতে একটু মাথা খাটাতে হবে। 

বইটিতে আরও আছে শাস্তির বিকল্প কী হতে পারে এবং সন্তানদের কী করে প্রশংসা করা যেতে পারে, সেসব বিষয়ে দারুণ সব আলোচনা। সন্তানকে সঠিকভাবে বেড়ে তুলতে অভিভাবকেরা বইটি পড়ে দেখতে পারেন। 

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক