তাপ মাপার থার্মোমিটার

পারদের সাধারণ থার্মোমিটার
পারদের সাধারণ থার্মোমিটার

শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে আমরা ‘জ্বর’ বলি। কখনোই জ্বর হয়নি—এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি রোগের উপসর্গ। শঙ্কার কথা হলো, জ্বরের কারণ সময়মতো উদ্ধার করে চিকিৎসা না নিলে, তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।

তাই তো মানুষের চেষ্টা ছিল শরীরের তাপমাত্রার নজরদারি করা। সাধারণত হাতের বাইরের পার্শ্ব দিয়ে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে হাত দিলেই আন্দাজ করা যায় শরীরের তাপমাত্রা। যদি বেশি বা কম হয়, তা কত বেশি বা কম, তা নির্ধারণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই পরিমাপকযন্ত্র থার্মোমিটারের ব্যবহার শুরু হয়।

হরেক রকম থার্মোমিটার আছে নানাবিধ ব্যবহারের জন্যে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্যে যে থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়, সেটা ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার। ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারও এখন অনেক ধরনের। এর মধ্যে পারদ থার্মোমিটার পুরোনো ও জনপ্রিয়। এটি সহজেই পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। এখন পারদভিত্তিক কিছু ডিজিটাল থার্মোমিটারও পাওয়া যায়। যা দিয়ে সহজেই শরীরের তাপমাত্রা মাপা যায়।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে আরও একধরনের থার্মোমিটার জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তা হলো ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। যা দিয়ে শরীর স্পর্শ না করেই শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব। তবে এ ধরনের থার্মোমিটার সহজলভ্য নয়।

সাধারণভাবে বললে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে জ্বর বলা হয়। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা মুখের তাপমাত্রাকে বোঝায়। এর বেশি হলেই আমরা জ্বরে আক্রান্ত বলে থাকি। সকালবেলা সাধারণত একটু তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং কাজ করলে বা বিকেল বেলা তাপমাত্রা একটু বাড়তি থাকতে পারে। পায়ুপথের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। যাকে আমরা শরীরের আসল তাপমাত্রা ধরে থাকি।

তাপের মাত্রা পরিমাপ

সাধারণত মুখ ও বগলে তাপমাত্রা মাপা হয়। এছাডা পায়ুপথে, কানেও তাপমাত্রা মাপা যায়। মুখে ও বগলে তাপমাত্রা পরিবেশ–পরিস্থিতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা দিতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন ঠান্ডা বা গরম কিছু খেলে মুখের তাপমাত্রা ভিন্ন আসতে পারে।

ইনফ্রারেড রশ্মির থার্মোমিটার
ইনফ্রারেড রশ্মির থার্মোমিটার

থার্মোমিটারের ব্যবহার

* প্রথমে স্পিরিট বা সাবানপানি দিয়ে থার্মোমিটারটি ধুয়ে শুকনো পরিষ্কার কাপড়ে মুছে নিন। সাধারণ থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে পারদের অবস্থান দেখতে হবে। জ্বর মাপার আগে থার্মোমিটারের শেষ প্রান্ত ধরে জোরে ঝাঁকিয়ে পারদ নিচে নামিয়ে আনতে হবে। কাজটি সাবধানে করতে হবে, তা না–হলে কোনো কিছুর সঙ্গে লেগে কাচের থার্মোমিটার ভেঙে যেতে পারে। আর ডিজিটাল থার্মোমিটার হলে জ্বর মাপার আগে সুইচ চেপে চালু করে নিতে হবে।

* আমরা সাধারণত থার্মোমিটার এক মিনিট জিহ্বা বা বগলের নিচে রেখে তাপমাত্রা নির্ণয় করি। ডিজিটাল থার্মোমিটারে শব্দ করলে বুঝতে হবে যে তাপমাত্রা মাপা শেষ। আর ইনফ্রারেড থার্মোমিটার সাধারণত কপালের সামনে ধরলেই তাপমাত্রা নির্দেশ করে। তবে এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা একটু কম–বেশি দেখাতে পারে।

* বড়দের ক্ষেত্রে জিহ্বার নিচে থার্মোমিটার দিয়ে ঠোঁট দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হয়।

* ব্যবহারের আগে–পরে অবশ্যই থার্মোমিটার পরিষ্কার রাখুন। ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে থার্মোমিটার রেখে দিন।