করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলায় পরামর্শ

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত একজন রোগী সুস্থ হওয়ার পরও অনেক দিন পর্যন্ত নানা সমস্যায় ভুগতে পারেন। করোনার এই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবকে শারীরিক ও মানসিক দুইভাবে ভাগ করা যায়।

শারীরিক প্রভাব

করোনাভাইরাস সংক্রমণে দুই ধরনের জটিলতা হতে পারে। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া ও সাইটোকাইন স্টর্ম। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের জন্যও এই কারণ দুটি দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাজেই মৃদু উপসর্গের রোগীদের তুলনায় মাঝারি ও তীব্র সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার আশঙ্কা বেশি। ফুসফুসের পাশাপাশি মস্তিষ্ক, কিডনি, যকৃৎ, হৃদ্‌যন্ত্র ইত্যাদিও করোনার জটিলতার শিকার হতে পারে। করোনার সংক্রমণে যে ভাইরাল নিউমোনিয়া হয়, তা ফুসফুসে পালমোনারি ফাইব্রোসিসের মতো জটিলতার কারণ হতে পারে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে রোগী স্থায়ী ও মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি, ক্লান্তিবোধ, সক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে পারেন।

ফুসফুসের পরপরই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির আশঙ্কা মস্তিষ্কে। অ্যাকিউট হেমোরেজিক নেক্রোটাইজিং এনসেফালোপ্যাথি, মেনিনজাইটিস কিংবা স্ট্রোকের মতো জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে খিঁচুনি, স্মৃতিভ্রষ্ট, পক্ষাঘাত ইত্যাদি সমস্যার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা পরবর্তী সময়ে রোগীর বুদ্ধিমত্তা ও উচ্চতর স্নায়বিক কার্যকলাপে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। করোনার সংক্রমণে কিডনি সাময়িক বিকল হতে পারে, যা পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিসেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।

মানসিক প্রভাব

করোনার সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর ভীতি এবং মানসিক আঘাত ও চাপ ঘিরে ধরে রোগীকে। এর থেকে পরবর্তী সময়ে দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, এমনকি পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা হতে পারে।

করণীয়

করোনার সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও বিশ্রাম নিন, পুষ্টিকর খাবার খান। ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। চিকিৎসক দীর্ঘ মেয়াদে কিছু ওষুধপত্র দিতে পারেন। পরবর্তী সময়েও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। মানসিক সমস্যায় চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করবেন না। কারণ, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে আপনার সেরে উঠতে বিলম্ব হতে পারে।

 লেখক: চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা