বর্ষায় ত্বকের সুরক্ষায়

যেহেতু এখন সব সময় চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই বর্ষায় ত্বকের যত্নে নিজেকেই হতে হবে সচেতন। ফাইল ছবি
যেহেতু এখন সব সময় চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই বর্ষায় ত্বকের যত্নে নিজেকেই হতে হবে সচেতন। ফাইল ছবি

প্রতিবছর গ্রীষ্ম আর বর্ষাকালে দেশের সব বয়সী মানুষের ত্বকের সংক্রমণ ও সমস্যা বেড়ে যায়। এ বছর বাড়লেও নানা কারণে তাঁদের অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না বা সর্বত্র চিকিৎসকের রুটিন–সেবাও পাচ্ছেন না। অবশ্য শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বয়স্ক ব্যক্তি, যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি আছে, তাঁদের এ সময় ছোটখাটো সমস্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যাওয়াই ভালো। তাই ত্বকের ছোটখাটো সমস্যারোধে সচেতন থাকার বিকল্প নেই।

এ সময়ে ত্বকের রোগ

পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা আর বাতাসের আর্দ্রতার কারণে এ সময় ত্বক ঘেমে যায়, ভেজা ও আর্দ্র থাকে। ফলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন: ছুলি (পিটাইিরয়াসিস ভারসিকোলর), নানা ধরনের দাদ (টিনিয়াসিস), হাজা (ফাঙাস বা ছত্রাক), ঘামাচি, দুর্গন্ধ, খুশকি, শিশুদের ডায়াপার র‌্যাশ ইত্যাদি। এ ছাড়া বর্ষায় জমে থাকা নোংরা পানি, রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা এবং গ্রামে মাঠে কাজ করা মানুষদের একজিমা হতে পারে।

শহরে বিভিন্ন বাড়িতে ঘরের সব কাজকর্ম নিজেদেরই করতে হচ্ছে। তার ওপর আছে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার নির্দেশনা। এ কারণেও হাতের ত্বকে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। ত্বকের শুষ্কতা, অ্যালার্জিক ডারমাটাইটিস, আগের চর্মরোগ যেমন: একজিমা বা সোরিয়াসিস বেড়ে যাওয়াও দেখা দিতে পারে নতুন করে।

ত্বকের যত্ন নিতে সচেতন হোন

করোনাকালে নিজেকে সুস্থ রাখা সবচেয়ে জরুরি। কারণ এখন যেকোনো কারণে অসুস্থ হলে চিকিৎসাকেন্দ্রে বা বাইরে যেতে হলেই আপনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো পন্থা।

*অতিরিক্ত গরমে বদ্ধস্থান এড়িয়ে চলুন। খোলামেলা ও আলো–বাতাস চলাচল করে, এমন জায়গা ভালো।

*পাতলা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরবেন। ঘামে ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।

*প্রতিদিন গোসল করবেন। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। বর্ষার অপরিষ্কার নোংরা পানি বা রাসায়নিকযুক্ত পানি ত্বকে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলবেন।

*বারবার হাত ধোয়ার কারণে সমস্যা হলে হাত ধুয়ে শুকিয়ে গেলে ত্বকে লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত ডিটারজেন্ট বা ক্ষার ব্যবহার করবেন না। সামান্য সাবানপানি দিয়েই ঘষে ঘষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করবেন। দীর্ঘ সময় গ্লাভস পরে থাকলেও হাতের ত্বকে সমস্যা হয়। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর্মী, বিক্রয়কর্মী বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া সবারই বাইরে গেলে গ্লাভস পরতে হবে এমন কোনো কথা নেই। গ্লাভস পূর্ণ সুরক্ষা নাও দিতে পারে, বিশেষ করে গ্লাভস পরা হাত নাকে–মুখে লেগে যাওয়া বিপজ্জনক। তাই অপ্রয়োজনে দীর্ঘ সময় গ্লাভস না পরাই ভালো।

*শিশুদের পাতলা ঢিলেঢালা সুতি জামা পরাবেন। ঘেমে গেলেই পরিবর্তন করে দেবেন। দিনের বেলায় খোলা বাতাসে রাখুন। প্রতিদিন গোসল করাবেন। ডায়াপার ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে দেবেন। ঘামাচি এড়াতে ত্বক ভেজা বা আর্দ্র রাখা যাবে না। হালকা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যায় কিন্তু তা যেন চ্যাটচেটে না হয়ে যায়।

*ত্বকে সমস্যা দেখা দিলে সশরীর হাসপাতালে না গিয়ে প্রথমে টেলিমেডিসিনে পরামর্শ নিতে চেষ্টা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দোকান থেকে কোনো ওষুধ নেবেন না। মনে রাখবেন, দোকানদার চুলকানি বা ত্বকের নানা সমস্যায় স্টেরয়েড ওষুধ ও মলম দিয়ে থাকেন, যা আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।