বয়স কোনো বাধা নয়

‘বয়স’ এখানে বড়ই আপেক্ষিক। আপনার কাছে মনে হতে পারে ‘ক’ ক্রিকেটারটির এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে, নতুন কোচ এসে হয়তো বলবেন, ‘ও শেষ...।’ টেস্ট অভিষেকের ১০ বছর পরও বাংলাদেশ দল তাই কচিকাঁচার আসরই। অন্যভাবে বললে, এটা অনেকটা রুপালি জগতের মতো। বয়স একটু বাড়লেই ‘গ্ল্যামার’ হারিয়ে বাতিলের খাতায়। শুরু হয় নতুন মুখের সন্ধান।আকরাম খানের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচক কমিটি বয়সের এই ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করেছে। বয়স নয়, জাতীয় দলের খেলোয়াড় বাছাইয়ে তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাবে ফিটনেস আর পারফরম্যান্স। ‘ফিটনেস ও পারফরম্যান্স—এ দুটিই আমরা বেশি দেখব। এ যুগের ক্রিকেটে ফিটনেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে যদি ভালো পারফরম্যান্সও থাকে, আমরা বয়স দেখব না। ক্রিকেটে বয়স কোনো বাধা নয়’—কাল বলছিলেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খান।আগামী ১ জুন থেকে দায়িত্বের মেয়াদ শুরু হলেও আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারদের কমিটি অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে এরই মধ্যে। পরবর্তী এক বছরের জন্য ২০-২২ জনের একাডেমি দল করার কাজ প্রায় শেষ। একাডেমির জন্য নতুন খেলোয়াড় বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথম বিভাগ এবং তার বাইরে কয়েকজন ক্রিকেটারকে ডেকে ট্রায়াল নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে একাডেমির জন্য ৪-৫ জন এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্যও একজন ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছে বলে খবর। এ ছাড়া জুনে মালয়েশিয়ায় একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে ‘এ’ দল। নতুন কমিটিকে ভাবতে হচ্ছে সেটা নিয়েও।জুলাই-আগস্টে জাতীয় দলের জিম্বাবুয়ে সফর। এই সফরের জন্য আগামী ৪ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া ফিটনেস ও কন্ডিশনিং ক্যাম্পের খেলোয়াড় তালিকা তৈরি করছেন নির্বাচকেরা। নির্বাচকদের দেওয়া ৩০ ক্রিকেটারকে নিয়ে ছয় মাসের ক্যাম্প চালাবেন ট্রেনার গ্রান্ট লুডেন। প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, সর্বশেষ জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছাড়াও ‘এ’ দল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের ডাকা হবে কন্ডিশনিং ক্যাম্পে।রফিকুল আলমের নেতৃত্বাধীন গত নির্বাচক কমিটিতেও ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আকরাম বলছেন, ‘আগের কমিটিতে থাকতেই কিন্তু আমরা বয়স্ক ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়ার রীতি থেকে বেরিয়ে এসেছি। হয়তো খুব বেশি বয়সের ক্রিকেটার দলে ছিল না, কিন্তু আমরা অভিজ্ঞতাকে দাম দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ প্রতিশ্রুতি দিলেন, চেষ্টাটা বর্তমান কমিটিরও থাকবে, ‘এখন আমাদের ক্রিকেটারদের গড় বয়স ২২-২৩। আমাদের লক্ষ্য আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে এটাকে ২৭-২৮-এ নিয়ে যাওয়া।’ কাজটা করতে পারলে আকরাম-মিনহাজুল-হাবিবুলদেরও একটা দুঃখ ঘোচে। খেলোয়াড়ি জীবনে সব সময় অভিজ্ঞতার মূল্য দাবি করে এলেও ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে সেই মূল্য যে তাঁরা কেউই পাননি!আকরাম খান যেটা বললেন, বয়স আর পারফরম্যান্সের সঙ্গে ফিটনেস ধরে রাখাটাও ক্রিকেটারদের জন্য জরুরি। বয়স যখন আটকানো যাবেই না, ফিটনেস দিয়েই ‘কমিয়ে’ রাখতে হবে সেটাকে এবং এই কাজে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা পুরোনো গ্রান্ট লুডেনকেই পাশে পাচ্ছেন আবার। জেমি সিডন্সসহ বোলিং-ফিল্ডিং কোচ এবং ফিজিও মাইকেল হেনরি—কারও চুক্তিই নবায়ন না হওয়ায় জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ বলতে আপাতত এই লুডেন আর কম্পিউটার বিশ্লেষক নাসির আহমেদ।কন্ডিশনিং ক্যাম্প নিয়ে কাল বেশ রোমাঞ্চিতই মনে হলো লুডেনকে। বিসিবি অফিসে নির্বাচকদের সঙ্গে এক সভার পর বললেন, ‘দলের কারও কারও ফিটনেস বেশ ভালো, তবে বেশির ভাগেরই ভালো নয়। গত দুই বছর টানা খেলার মধ্যে থাকায় আমরা ফিটনেস নিয়ে কাজ করার তেমন সুযোগ পাইনি। বাংলাদেশে আসার পর এই প্রথম একটা আদর্শ ফিটনেস ও কন্ডিশনিং ক্যাম্প করার সুযোগ পাচ্ছি।’ ছয় সপ্তাহের এই ক্যাম্প যেন এক ঘেয়ে আর ক্লান্তিকর হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য প্রতি তিন দিন পরপর দেওয়া হবে এক দিনের বিরতি।প্রায় দেড় মাসের আড়মোড়া ভাঙাতে লুডেনের যা প্রস্তুতি, তাতে ক্রিকেটারদের জন্য হয়তো নতুন পরীক্ষাই হয়ে দাঁড়াবে এবারের কন্ডিশনিং ক্যাম্পটা।