করোনা রোগীর বুকে ব্যথা

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের সিংহভাগেরই মৃদু উপসর্গ থাকে। তাঁরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হচ্ছেন। উপসর্গ মৃদু হলেও এ ধরনের রোগীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় কারও বুকে ব্যথা হলে তা গুরুত্ব দিতে হবে। বুকে ব্যথা হৃদ্‌রোগের একটা অন্যতম উপসর্গ। ফুসফুসে সংক্রমণের পাশাপাশি করোনা রোগী হৃদ্‌রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।

করোনাভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটানোর পাশাপাশি হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রবীণ, হৃদ্‌রোগ বা মস্তিষ্কে স্ট্রোকের ইতিহাস আছে এমন রোগী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ রয়েছে কিংবা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজনের ব্যক্তিদের করোনার সংক্রমণে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। আবার করোনা রোগীর রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার একটি প্রবণতা তৈরি হয়। যদি ফুসফুসের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে, তাহলেও বুকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। করোনা রোগের আরেকটি জটিলতা হলো রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া। এর প্রভাব হৃদ্‌যন্ত্রেও পড়তে পারে। হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশিগুলোয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রেও রোগী বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বুকে ব্যথার আরেক কারণ।

হৃদ্‌যন্ত্র আক্রান্ত হলে বুকের মাঝখানে বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে ব্যথা অনুভূত হয়। মনে হতে পারে, ব্যথাটা যেন চেপে বসেছে বা জমাট হয়ে আছে। বুকটা মুচড়ে যাচ্ছে বা পুড়ে যাচ্ছে বলেও মনে হতে পারে। বুক ছাড়াও ঘাড়, কাঁধ, চোয়াল, বাঁ হাত বা পিঠের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়ানি, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বমি ভাব বা বমি এবং দম বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতিও হতে পারে।

কোনোভাবেই করোনা রোগীর বুকে ব্যথা অবহেলা করা যাবে না। বুকে ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। করোনা রোগীর হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশি আক্রান্ত হলে হৃদ্‌স্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। তখন বুক ধড়ফড় করতে পারে। এ রকম অবস্থায়ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, যাঁরা ধূমপান করেন, যাঁদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং যাঁরা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির অসুখে ভুগছেন, তাঁরা যেকোনো মাত্রার বুকে ব্যথা হলেই দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।

 লেখক: হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ