সাইক্লিস্টরা কেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন

নিয়মিত শরীরচর্চা, মনোযোগ ধরে রাখা, নিয়মানুবর্তিতা, সচেতনতাসহ অনেক বিষয়েই খেয়াল রাখতে হয়, অনেক কিছুই মেনে চলতে হয় একজন সাইক্লিস্টকে। ছবিটি প্রতীকী।
নিয়মিত শরীরচর্চা, মনোযোগ ধরে রাখা, নিয়মানুবর্তিতা, সচেতনতাসহ অনেক বিষয়েই খেয়াল রাখতে হয়, অনেক কিছুই মেনে চলতে হয় একজন সাইক্লিস্টকে। ছবিটি প্রতীকী।

সুখী ও স্বাস্থ্যবান জীবনযাপনে সাইক্লিস্টদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। নিয়মিত শরীরচর্চা, মনোযোগ ধরে রাখা, নিয়মানুবর্তিতা, সচেতনতাসহ অনেক বিষয়েই খেয়াল রাখতে হয়, অনেক কিছুই মেনে চলতে হয় একজন সাইক্লিস্টকে। এসব চর্চা করতে পারলে যে কেউই উপকৃত হতে পারেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারেন। নিয়মিত সাইকেল চালানোর নানা শারীরিক ও মানসিক সুফল তুলে ধরেছে হাফিংটন পোস্ট।

শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায়
এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, আমাদের চারপাশের মানুষজনের মধ্যে সাইক্লিস্টদের শারীরিক সক্ষমতা খুবই ভালো। এক ঘণ্টা সাইকেল চালালেই প্রায় ৫০০ ক্যালরি শক্তি ক্ষয় হয়, অবশ্য আপনি কতটা দ্রুত বা জোরে প্যাডেল করছেন তাতে এটা কমতে-বাড়তে পারে। হূিপণ্ড সুস্থ-সবল রাখতে এবং হূদরোগ থেকে মুক্ত থাকতে দারুণ উপকারী হতে পারে সাইকেল চালানো। এ ছাড়া সাইকেল চালালে শরীরের এমন অনেক পেশি ও হাড়ের জোড়ার ব্যায়াম হয়, যা সাধারণত প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজকর্মে হয় না।

সাইক্লিস্টদের বিপুল শক্তি
চিন্তা করতে পারেন যে, পাহাড় বেয়ে ওঠায় বিপুল পরিমাণ শক্তি ক্ষয় হয়। সেটা সত্যি বটেই। কিন্তু নানা জরিপে উঠে এসেছে, দূরপাল্লার সাইকেল চালানোয় পাহাড় বেয়ে ওঠার চেয়েও বেশি শক্তি লাগে। ২০০৮ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ছয় সপ্তাহ ধরে নিয়মিত হালকা ও মাঝারি পাল্লার সাইক্লিং করলে দুর্বলতা কাটতে শুরু করে এবং শরীরের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়ে।

আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য
সাইক্লিস্টরা শুধু আকর্ষণীয়ই নন, সমাজে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৪ ভাগের ১ ভাগ তরুণ-তরুণীই জানিয়েছেন, অভিসারের জন্য অন্য যেকোনো অ্যাথলেটের তুলনায় একজন সাইক্লিস্টকে বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করেন তাঁরা। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ওই জরিপ চালায়। একই জরিপে প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, যেকোনো দাতব্য লক্ষ্যে সাইক্লিস্টরা এগিয়ে এলে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন তাঁরা।

নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া
দূরপাল্লার সাইক্লিস্টরা সব সময়ই শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে সচেষ্ট থাকেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, বাতাসের সঙ্গে লড়ে পথ চলতে হয় তাঁদের। কিন্তু এসব ঝুঁকি নেওয়া সত্ত্বেও স্মার্ট সাইক্লিস্টরা সব সময়ই নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখেন, নিরাপদে পথ চলতে চান। গাড়ির চালকদের তুলনায় এমন বাইক রাইডাররা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে বেশি থাকলেও নানা জরিপের ভিত্তিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাইক্লিস্টদের স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং শারীরিক সক্ষমতা এই ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম।

আত্মশক্তিতে বলীয়ান, আত্মনির্ভরশীল
পরের ওপর নির্ভর করা ভুলে যান। ব্যাকপ্যাকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে, হেলমেটসহ উপযোগী পোশাকে সজ্জিত হয়ে সাইকেল সাজিয়ে একজন সাইক্লিস্ট যখন পথে নামেন, তখন তিনি নিজেই কেবল নিজের সহায়। যত দূরপাল্লার জন্য রওনা দেন, ততই আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হয় একজন সাইক্লিস্টকে। পথ সুগম বা দুর্গম যা-ই হোক না কেন একজন সাইক্লিস্ট জানেন, তাঁকে একাই এই পথ চলতে হবে। ফলে মানসিকভাবেই তিনি আত্মনির্ভরশীলতার জন্য প্রস্তুত। আত্মশক্তিতে পথ চলার এই অভ্যাস একজন সাইক্লিস্টের মানসিক গঠন এবং তাঁর প্রতিদিনের জীবনেও তা প্রভাব ফেলে।

সাইক্লিস্টরা দীর্ঘজীবী হন
নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক সচেতনতার অভ্যাস এবং নিয়মানুবর্তিতার কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে—নানা গবেষণায় উঠে এসেছে, সাইক্লিস্টরা দীর্ঘজীবী হয়ে থাকেন। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ট্যুর দ্য ফ্রান্স’ সাইক্লিং প্রতিযোগিতার নিয়মিত অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদেরা গড় জনগণের চেয়ে আট বছর বেশি আয়ুষ্কাল পেয়ে থাকেন।