পাঠকের উকিল

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ মাহতাব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ মাহতাব

 আমার বাবা সাবেক সরকারি চাকরিজীবী। সারাজীবন দেখেছি সংসারে অভাব, কারণ বাবা বৈষয়িক ছিলেন না। আমি নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করে চাকরি পাই। এখন বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করতে চাইছি, কিন্তু বাবা আমাকে কোনো টাকা দেবেন না। আমি আমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা হয়ে যেতে চাই। আইনত এখন কীভাবে বাবার কাছ থেকে সম্পত্তির ভাগ পাব? তিনি যদি আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন, তাহলে আমি কীভাবে সম্পত্তি পেতে পারি?
তৌহিদ বাপ্পি
ঢাকা।
 মুসলিম আইনে ত্যাজ্য করার কোনো বিধান নেই। আপনার বাবার মৃত্যুর পর তাঁর ওয়ারিশ হিসেবে আপনি আপনার অংশ পেতে পারেন। তবে জীবিত অবস্থায় আপনার বাবা তাঁর সম্পত্তি যাকে ইচ্ছা দান করতে পারেন।
 আমার ছোট বোন ও তার স্বামীর তালাক হয়ে গেছে প্রায় আট মাস। তালাক আমার বোনই দেয়, তার স্বামীর কাছে তিনবার তালাকের নোটিশও গিয়েছে। এখন তারা নিজেরা ভুল বুঝতে পেরেছে এবং আবার সংসার করতে চায়। ইসলামের দৃষ্টিতে তারা কি আবার বিয়ে করতে পারে? এখন কি আমার বোনকে হিল্লা বিয়ে করতে হবে? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এভাবে বিয়ে করাটা কি যুক্তিসংগত হবে?
মেহজাবিন রহমান

 ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে সংশোধনী আনার মাধ্যমে হিল্লা বা অন্তর্বর্তীকালীন বিবাহ বাতিল করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান তাঁর স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পর আবারও বিয়ে করতে পারেন। তবে এ ধরনের বিয়ে তিনবারের বেশি কার্যকর হবে না।

 আমি ২০০৮ সালে একটি ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করি। সংসারজীবন ভালোই চলছিল, মাঝেমধ্যে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হতো। যখন আমার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হতো, তখন সে তার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে থাকত। এভাবে সেই বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে আমার স্বামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় এবং তাদের বিয়েও হয়। এর কিছুদিন পর আমার স্বামী তার বন্ধুর বউকে তালাকও দিয়েছে। আমার স্বামী যখন বিয়েটা করে, তখন ওই মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে তার কোনো তালাক হয়নি। প্রথম স্বামী থাকা অবস্থায় ওই মেয়েটির আবার বিয়ে করাটা কি বৈধ হয়েছে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
 মেয়েটি বিবাহিত থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ নয়। সুতরাং আপনার স্বামীর বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিয়েটি বাতিল বিয়ে। এ ছাড়া বাতিল বিয়েতে তালাকের কোনো প্রয়োজন নেই।

 ১৫-১৬ বছর ধরে আমার ভাই মানসিক রোগে আক্রান্ত। সে ছয় বছর ধরে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। সে বিবাহিত এবং তার একটি ১২ বছর বয়সী মেয়েও আছে। কিন্তু সাত বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো দাম্পত্য সম্পর্ক নেই। আবার তাদের তালাকও হয়নি। আমি জানতে চাই, তারা কি এখনো বিবাহিত দম্পতি হিসেবে বিবেচিত হবে? তাদের বিয়েটা কি বৈধ আছে?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
 আপনার ভাইয়ের বিয়ে এখনো বৈধ আছে। নিয়ম অনুযায়ী তালাক প্রদান না করা পর্যন্ত তাঁদে বিবাহিত ধরা হবে।

 আমার বয়স ২৮। গত ১ ফেব্রুয়ারি আমার বিয়ে হয় একজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে। বিয়ের ১০ দিনের মাথায় সে আমার কাছে মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করে। আমি যৌতুক দিতে রাজি না হওয়ায় কিছুদিন পর সে আমাকে তালাকের নোটিশ পাঠায়। আমি যাতে মামলা না করি, সে জন্য প্রথমে আমার পরিবারকে সে বলে তার ভুল হয়েছে, আমাকে সে নিতে চায়। এভাবে তিন মাস পার হওয়ার পর সে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় এবং আমার সম্পর্কে অশালীন কথা বলে। একইভাবে সে আমাকে দেনমোহরের টাকা থেকে বঞ্চিত করছে। আমি মামলা করতে চাইলেও আমার পরিবার রাজি হচ্ছে না। আর আমার একার পক্ষে বেসরকারিভাবে মামলা চালানোর টাকাও নেই। আমি কী করতে পরি? আমি আমার দেনমোহরের টাকা নিতে চাই। আর আমি কোথায় গেলে এই সুবিধা পাব জানাবেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
 মুসলিম আইনে দেনমোহর স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওনা। এই পাওনা চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য। এই দেনমোহর তালাক হোক না হোক, স্ত্রীর প্রাপ্য। সুতরাং আপনি পারিবারিক আদালতে দেনমোহরের মামলা করতে পারেন এবং দেনমোহর প্রয়োজনে কিস্তিতে প্রদান হতে পারে। মামলা করার ব্যাপারে আপনি আইন সহায়তা কেন্দ্রগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায়পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে তারই সমাধান পাওয়া যাবে। এ বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যা লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা। এ ছাড়া [email protected] এই ঠিকানায়ই-মেইল করেও সমস্যার কথা জানাতে পারেন।