চুলের ছোট ছাঁটে

ছোট চুলের স্টাইলেও রয়েছে নানা রকমফের। মডেল হয়েছেন সায়ন্তনী তিষা। সাজ: হেয়ারোবিকস ব্রাইডাল, ছবি: কবির হোসেন
ছোট চুলের স্টাইলেও রয়েছে নানা রকমফের। মডেল হয়েছেন সায়ন্তনী তিষা। সাজ: হেয়ারোবিকস ব্রাইডাল, ছবি: কবির হোসেন

আশির দশকের গোড়ার কথা। ব্রিটেনের রাজপরিবারে নববধূ হয়ে এলেন ডায়ানা। শুধু পাশ্চাত্যেই নয়, প্রাচ্যেও তখন জনপ্রিয় হয়ে উঠল তাঁর ফ্যাশন ও স্টাইল। ঘাড়ের দিকে ছোট করে লেয়ার এবং সামনের দিকে বয়কাটের আদলে কাটা তাঁর চুলের স্টাইল বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলো ডায়ানা কাট নামে। ১৯৯৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পরও বেশ কয়েক বছর ধরে ছোট চুলের কাটছাঁটে এককভাবে রাজত্ব করে ডায়ানা কাট। কিশোরী, তরুণীরা তো বটেই, আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ঢাকার অভিজাত এলাকায় মধ্যবয়সীদের চুলেও দেখা যেত ডায়ানা কাট।
হেয়ারোবিকস ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন জানালেন, ছোট চুল এখন আর ফ্যাশন নয়, বরং ব্যস্ত জীবনের ঝামেলা আর বাইরের দূষণ এড়াতেই চুল ছোট রাখছেন অনেকেই। তাঁর নিজের চুলেও এমন কাট। এখন শুধু ডায়ানা কাটই নয়, ছোট চুলে বব, সামার বব, পিক্সি, শ্যাগ, শর্ট ইমো কাটগুলোও বেশ জনপ্রিয়। আবার বিশেষ কোনো নামে নয়, বরং চেহারার সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন ছাঁটেও চুলে নতুনত্ব আনছেন অনেকেই।
সংবাদ উপস্থাপক সাবিনা মেহেদী বললেন, ‘একটা সময় বেশ লম্বা চুল ছিল আমার। কিন্তু রিবন্ডিং বা কার্ল ছাড়া অন্য কোনো ধরনের কাটই আমার চেহারার সঙ্গে যাচ্ছিল না। একজন রূপবিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঘাড়ের ওপরের দিকে চুল কিছুটা লম্বা রেখে তার ওপর চুলগুলো যাতে ফোলানো দেখা যায়, এমনভাবে লেয়ার করে চুল কাটি।’ এখন এই ছোট চুলের কাটটাই সাবিনা মেহেদীকে দিয়েছে এক ভিন্ন লুক।
বব আর ইমো কাটের মিশেলে চুলের স্টাইল করেছেন সায়ন্তনী তিশা। সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। নিজের কালো চুলের মাঝে কয়েকটা পেকে যাওয়া সাদা চুল রেখে দিয়েছেন সেভাবেই। জানালেন সল্ট অ্যান্ড পেপার বলা হয় এ স্টাইলকে।

মডেল হয়েছেন সায়ন্তনী তিষা। সাজ: হেয়ারোবিকস ব্রাইডাল, ছবি: কবির হোসেন
মডেল হয়েছেন সায়ন্তনী তিষা। সাজ: হেয়ারোবিকস ব্রাইডাল, ছবি: কবির হোসেন

তবে চুলে যে কাটই দেওয়া হোক না কেন, তা যেন অবশ্যই চেহারা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে যায় তা দেখতে হবে, এমনটাই পরামর্শ দিলেন তানজিমা শারমীন। এ ক্ষেত্রে যাঁদের মুখ গোলাকার, তাঁরা সামনের চুলে সাধারণ বব এবং পেছনের চুল কিছুটা ছোট রেখে দিতে পারেন সামার বব কাট। সামনে ছোট চুল আবার পেছনে অনেকগুলো লেয়ারের শ্যাগ কাটে চেহারায় নতুনত্ব আনতে পারেন লম্বা মুখের অধিকারীরা। পানপাতা মুখের গড়ন যাঁদের, তাঁদেরকে কানের ওপরে চুল ছোট রেখে পেছনে লেয়ার করে কাটা পিক্সি কাটটাই ভালো মানাবে। এ ছাড়া গড়পড়তা সব চেহারাই মানিয়ে যাবে বব, ইমো আর ডায়ানা কাট। তবে যাঁদের গলা লম্বা এবং কাঁধ চওড়া, তাঁদের চুল ছোট না করাই ভালো বলে জানালেন তিনি। 
ছোট চুলে ছাঁট হলে দেশি ধাঁচের সাজপোশাক কি মানাবে? এমন ভাবনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য সুখবর দিয়েছেন যাত্রার ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতা। ছোট চুলের সাজে চেহারায় আনা যায় স্মার্ট এবং শৈল্পিক ভাব—এমনটাই জানালেন তিনি। ছোট চুলের সঙ্গে হাইনেক অথবা ব্যান্ড কলারের স্লিভলেস ব্লাউজটা খুব মানিয়ে যায়। এই ধরনের নকশায় একরঙা কাতান কাপড়ে তৈরি ব্লাউজের সঙ্গে পরতে পারেন জামদানি অথবা তাঁতের শাড়ি। উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিকের সঙ্গে চোখে হালকা কাজল আর মাশকারায় ফুটে উঠবে আভিজাত্যের সাজ। কুর্তা আর ঢোলা কামিজের সঙ্গে পালাজ্জোর পাশাপাশি স্কার্টটাও বেশ মানিয়ে যায় ছোট চুলের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে কামিজ বা কুর্তার গলায় প্লেট কলার আর সামনের দিকটা কাটা হলে ভালো দেখাবে। এ সময় হাতে জড়িয়ে নিতে পারেন কয়েক লহরের মালা। অনেকের ধারণা, ছোট চুলের সঙ্গে বড় টিপটা একেবারেই মানায় না। এই ধারণাটা একেবারেই ঠিক নয় বলে জানালেন স্মৃতি। বরং শুধু একটা বড় গোল টিপ আর নথের সাজেই চেহারায় ফুটে উঠতে পারে শৈল্পিক ভাব। এই ধরনের চুলের কাটে লম্বা হাতার পোশাক, জমকালো কানের দুল এবং গলার অলংকার না পরাই ভালো বলে জানালেন স্মৃতি। এ ক্ষেত্রে কানে পরতে পারেন ছোট পাথর বা রুপার ওপর মিনা করা টপ। এদিকে ছোট চুল যাঁদের, তাঁরা অনায়াসেই পরতে পারেন টিউনিক, শর্ট টপস, টি-শার্ট আর গেঞ্জির মতো পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকগুলো—জানালেন লা-রিভের প্রধান ডিজাইনার মুন্নুজান নার্গিস। ছোট চুলে একটু ফাংকি লুক আনতে এক রঙা প্যান্টের সঙ্গে বেছে নেওয়া যেতে পারে স্ট্রাইপ বা হিজিবিজি নকশার খাটো কোনো টপ বা টিউনিক। চাইলে জিন্স আর টি-শার্টের ওপরে পরতে পারেন চেক কাপড়ের শার্ট। আলাদা কোনো অলংকারে নয়, বরং রংচঙে নকশার একটা স্কার্ফকে গলায় মাফলারের মতো জড়িয়ে দিলে পুরো চেহারায় ফুটে উঠবে স্মার্ট লুক।