চ্যালেঞ্জিং পেশা : মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ

বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রসার দিন দিন বাড়ছে। এই শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা মেডিকেল প্রমোশন অফিসার। বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে বা ফার্মেসিতে ঘুরে ঘুরে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিচিত করান। চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বেশ স্বীকৃত। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও এই পেশার মর্যাদা ভালো। এই পেশার নানাদিক নিয়ে িলখেছেন তারিকুর রহমান খান

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

কাজের ধরন
এরিস্টোফার্মার মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ বিভাগ) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রিপ্রেজেন্টেটিভরা চিকিৎসকদের কাছে পণ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রতিষ্ঠানগুলো কী ওষুধ বানাচ্ছে, এর গুনাবলি কী, কোন রোগের নিরাময়ক প্রভৃতি তথ্য জানানো ও ওষুধের কার্যকারিতা তুলে ধরাই তাঁদের কাজ।
এ প্রসঙ্গে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘প্রায় সময় কোম্পানিগুলো নতুন ওষুধ বাজারে নিয়ে আসে। আগেরটির চেয়ে বাজারে আসা নতুন ওষুধটি মানের দিক দিয়ে কেন ভালো, এটাও চিকিৎসকদের বোঝাতে হয়। তিনি আরও বলেন, রিপ্রেজেন্টেটিভের আরও একটি কাজ হলো ওষুধের দোকান থেকে অর্ডার সংগ্রহ করা।

পেশা হিসেবে কেমন
ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার (মানবসম্পদ বিভাগ) মো. জাকির খান বলেন, এককথায় পেশা হিসেবে খুব ভালো। তবে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তিনি আরও জানান, নিজেকে প্রমাণের জন্য এই কাজটি উপযুক্ত। এখানে নিজের যোগ্যতা দিয়েই উন্নতি করতে হয়। কঠোর পরিশ্রম, বুদ্ধি থাকলে এই পেশায় পেছনে পড়ে থাকার কোনো উপায় নেই। আপনার কাজই আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অল্প সময়ে আপনি িনজের কাজের ফল পাবেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ বিভাগ) অঞ্জন কুমার পাল জানান, বিজ্ঞান বিষয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য এই পেশা উপযুক্ত। তবে অন্য বিষয় পড়ুয়া তরুণেরাও বর্তমানে এই পেশায় আসছেন। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকে বায়োলজিক্যাল বিষয়গুলো থাকলে তাঁদের পক্ষে সাফল্য পাওয়া তুলনামূলক সহজ। নিয়োগদাতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকেও নিয়োগ দিচ্ছে। অভিজ্ঞ লোকের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছুটা শিথিলযোগ্য বলে জানা গেছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়া
অন্য চাকরির মতো এই পেশায় নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র বা অনলাইনের জব পোর্টালগুলোয় নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও নিয়োগের তথ্য দেয়। এ ছাড়া এই পেশায় বর্তমানে কর্মরতদের কাছেও নিয়োগের তথ্য জানা যায়। আবেদন করার পর প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মেয়াদে এদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এর পরই চূড়ান্ত নিয়োগ হয়।

.
.

বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
এই পেশার একটি বিশেষ দিক হলো কাজের যোগ্যতার ওপর আয় নির্ভর করে। যিনি বেশি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন, তিনি তত বেশি বেতন পান। এসকেএফের মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা আহসান জানান, রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রাথমিক বেতন ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য আলাদা খরচ দেওয়া হয়। লক্ষ্য পূরণের ওপর তাঁরা বিশেষ সুবিধা পান। এ ছাড়া তাঁদের যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বছরে দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বোনাস দেওয়া হয়। এই খাতে রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হওয়ার উদাহরণ আছে। প্রাথমিকভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে পদোন্নতি পাওয়া যায়। এরপর ধাপে ধাপে এরিয়া ম্যানেজার, সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার, সেলস ম্যানেজার, সিনিয়র সেলস ম্যানেজার থেকে হেড অব সেলস ম্যানেজার হওয়ার সুযোগ আছে।

কত লোক নিয়োগ হয়
রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় কত লোক নিয়োগ হয়, এর কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে সারা বছর এই পেশায় লোক নিয়োগ করা হয়। মোস্তফা আহসান বলেন, এই সেক্টরে সারা দেশে লোক নিয়োগের কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ হাজার লোক যুক্ত হচ্ছে। কখনও কখনও এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া অনেকেই ভালো করার কারণে ওপরের পদে চলে যাওয়ার সুযোগ পান।

মেয়েদের সম্ভাবনা
বর্তমানে এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন মেয়েরা। মোস্তফা আহসান বলেন, মেয়েদের জন্য এই পেশা তুলনামূলক কিছুটা কঠিন হলেও এখন অনেকে এই পেশায় আসছেন। বিশেষ করে নারী চিকিৎসকদের কাছে মেয়েরা গেলে তাঁরা ভালোভাবে গ্রহণ করেন। আর মেয়েরাও এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।