চাকরি যখন চা-বাগানে

চা–বাগানের চাকরি অনেকের স্বপ্ন। সিলেটের লাক্কাতুরা চা–বাগান থেকে ছবি তুলেছেন আনিস মাহমুদ
চা–বাগানের চাকরি অনেকের স্বপ্ন। সিলেটের লাক্কাতুরা চা–বাগান থেকে ছবি তুলেছেন আনিস মাহমুদ

কৈশোরে নিশ্চয়ই চা-বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্যবর্ণিত অসংখ্য গল্প-উপন্যাস পড়েছেন। কৈশোরের সেই দিনগুলো হয়তো একদিন আপনার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে কৈশোরের সেই মুগ্ধতার আবেশ ছড়ানো চা-বাগানের কথা কি এখন মনে পড়ে? পাকাপোক্তভাবে চা-বাগানে চলে আসার কোনো ইচ্ছা কি আপনার আছে? যদি এ রকম চিন্তাভাবনা থেকেই থাকে, তাহলে একমাত্র উপায় হলো চা-বাগানে ভালো একটি চাকরি জুটিয়ে নেওয়া।
চা-বাগান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে উৎপাদন কাজে সহযোগিতাসহ নানা ধরনের চাকরি আছে বাগানগুলোয়। যোগ্যতা অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীরা সেসব পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশের ১৫৬টি চা-বাগানের মধ্যে ১৩৮টিই সিলেট বিভাগে অবস্থিত। সিলেটের এসব বাগানে প্রায়ই লোক নিয়োগ হয়। প্রতিবছর এসব বাগানে গড়ে কয়েক শ লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
চা-বাগানগুলোয় সহকারী ব্যবস্থাপক পদটি হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদের বিপরীতে সাধারণত আগ্রহী প্রার্থীকে ফরেস্ট্র কিংবা নৃবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস হতে হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্যও হয়ে থাকে। শুরুতেই এই পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি বিনা মূল্যে চিকিৎসা, আবাসন, বিদ্যুৎসহ নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রতিবছর আবার দক্ষতা অনুযায়ী তাঁদের বেতন বৃদ্ধি পায়।
সিলেটে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মৌলভীবাজার জেলার দেওয়াছড়া, বড়লেখা উপজেলার সমনবাগ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিটিআরআই চা-বাগান তিনটি পরিচালিত হয়। এর বাইরে সিলেট বিভাগের অন্য বাগানগুলো বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি লিমিটেড কোম্পানি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন। ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় ১২টি চা-বাগান রয়েছে।
গত বছর এ কোম্পানিতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে নয়জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাগানে কাজ করার উপযুক্ত করে তুলতে তাঁদের এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের অধীন লাক্কাতুরা চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক (ভূমিবিষয়ক) এ এইচ এম জাফর চৌধুরী জানান, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন অনুসারে লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। অন্য সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন অথবা নিজেদের পূর্বপরিচিত যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানগুলো নিজস্ব নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন পদের বিপরীতে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে সেসব পদে নিয়োগ দেয়।
চা-বাগানে সাধারণত সহাকারী ব্যবস্থাপক, চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীসহ বাগান, ফ্যাক্টরি ও অফিস পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। চিকিৎসক পদের জন্য এমবিবিএস পাস, টেকনিশিয়ান পদের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি, প্রশাসনিক কর্মকর্তার জন্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর এবং কর্মচারীদের জন্য মাধ্যমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে। আবাসন-সুবিধার পাশাপাশি শুরুতেই সাধারণত একজন চিকিৎসক ৩৫ থেকে ৭০ হাজার এবং টেকনিশিয়ান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।