২৪ এপ্রিল বিকেল তিনটায় টিএসসি এলাকার পরিবেশ হঠাৎ যেন অন্য রকম। উৎসবের আমেজে, গানে, আড্ডায় মুখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বাহারি সাজে মেয়েরা আর রঙিন পাঞ্জাবিতে ছেলেরা বৈশাখ উদ্যাপন করছেন। কিন্তু এসব ১০ বৈশাখে কেন?বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনায় সারা দেশেই অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ফলে গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে, বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ, প্রতীকী প্রতিবাদ হয়েছে।শুক্রবার ‘আরেক বৈশাখ’ নামে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন তৃষীয়া নাসতারান, ফারজানা আকরীন ও তাঁদের কয়েকজন বান্ধবী। ফেসবুকে ‘সিস্টারহুড’ নামে একটি গ্রুপ আছে, সেখান থেকেই প্রথমে এই প্রতিবাদের আয়োজন দানা বাঁধে। সবারই মন খারাপ, তাই পেজে একত্রে আনন্দ করার কথা ভাবা হয়, পরের বর্ষবরণের পরিকল্পনা করা হয়। তখনই তৃষীয়া নতুন আরেক বৈশাখের কথা বলেন।সমাজের বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী মানুষ বৈশাখী সাজে এসে জড়ো হয়। গানের দল জলের গান, নাটকের দল প্রাচ্যনাটের সদস্যরা আসেন। যোগ দেন গীতা আরা নাসরীন, ইরেশ যাকের, মেহের আফরোজ শাওনসহ অনেকে। প্রথমেই গাওয়া হয় বাংলদেশের জাতীয় সংগীত। এরপর ‘এসো হে বৈশাখ’ ও ‘ধনধান্য পুষ্পভরা...’। প্রায় আধা ঘণ্টা সড়কদ্বীপ দিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন নারী-পুরুষ একসঙ্গে। উৎসরের মূল মন্ত্রই ছিল—আনন্দ ও প্রতিবাদ মিলেমিশে একাকার।তৃষীয়া নাসতারান বলেন, ‘প্রতিবাদ করার জন্য এক বছর বসে থাকা আমাদের কাছে যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ মনে হয়নি। কারণ, একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। শোক কাটানোর আগেই নতুন শোক আমাদের ভারাক্রান্ত করছে। ফেব্রুয়ারি মাসে অভিজিৎ রায়, মার্চ মাসে ওয়াশিকুর হত্যা এবং এপ্রিল মাসে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানি। আগামী এক বছরের মধ্যে দেখা যাবে আরও অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে, যা থেকে নিস্তার মিলবে না। তাই এক বছরের আগেই এখনই আমরা প্রতিবাদ করতে চেয়েছি।’ সে কারণেই ফেসবুকে সর্বস্তরের জনসাধারণকে বৈশাখী আমেজে উৎসব করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। তৃষীয়া আরও বলেন, ‘অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি, প্রত্যেকেই নিজ দায়িত্বে খোঁজ নিয়ে আমাদের সঙ্গে থেকেছেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।’মেয়েদের ঘরের বাইরে বের হয়ে এসে নিজেদের জায়গা করে নিতে হবে। এ রকম ঘটনায় ভয় পেয়ে আমাদের ঘরে ফেরা চলবে না। এই ঘটনার পর দেখা গেছে, অনেক মা-বাবাই চান না তাঁদের মেয়ে বাইরে বের হোক। কিন্তু সবাইকে এ কথাই বলতে চাই, একত্র হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং সেটা এক্ষুনি।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে