তালে-ছন্দে ওয়ার্দা

নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহাব। গড়েছেন নাচের দল ধৃতি নর্তনালয়। নানা ধরনের শৈল্পিক জিনিসে ঠাসা তাঁর ঘর। পোশাকের চেয়ে বেশি টানে জুতা ও ব্যাগ। ভাত ছেড়েছেন এক বছর।

ব্যাগের প্রতি আছে দুর্বলতা
ব্যাগের প্রতি আছে দুর্বলতা

আজ ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। সারা দিন ওয়ার্দা রিহাবের কত যে ব্যস্ততা, সেটা টের পাওয়া গেল পাঁচ দিন আগেই। আমাদের সময় দিলেন শুক্রবার ২৪ এপ্রিল। তাও বিকেলে। বাসায় গিয়ে বোঝা গেল মাত্রই ফিরেছেন একটা অনুষ্ঠান করে। সাত দিন ধরে যে চলছে নৃত্য উৎসবের নানা আয়োজন।
ব্যস্ততা যতই থাকুক নিজের কাজগুলো করেন রুটিন ধরেই। প্রতিদিন খুব সকালেই উঠে যান ঘুম থেকে। দুপুর পর্যন্ত সময়টা নিজের ও পরিবারের জন্য। ঘর গোছাতে ভালোবাসেন। সকালে শরীরচর্চা ও নাচের চর্চা চালান কয়েক ঘণ্টা। এই সময়ে ওয়ার্দার পরনে থাকে মণিপুরি পোশাক—ফানেক ও ইনাফি। মণিপুরি নাচ ও মণিপুরি অনুষ্ঠানে গেলেও এই পোশাকেই থাকার চেষ্টা করেন। তবে তাঁর কাছে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পোশাক সালোয়ার-কামিজ। সাধারণ যেকোনো আড্ডা বা কেনাকাটা করতে বেরুলে সালোয়ার-কামিজ পরেন। আর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যাগ ও জুতা বেছে নেন সংগ্রহ থেকে।

এরকম শাড়ি পরেন অনুষ্ঠানে
এরকম শাড়ি পরেন অনুষ্ঠানে

তবে যদি কোনো সভা বা অনুষ্ঠান থাকে সেখানে একটু অন্য ধরনের সিল্ক শাড়ি পরেন। ওয়ার্দার চুলটা কোঁকড়া, তাই মাঝেমধ্যে নিজেই সোজা করে নেন। নাচ বা বিশেষ আয়োজন না থাকলে মেকআপ করেন না। একটা সময় পারলারে গিয়ে মেকআপ নিলেও এখন নিজে নিজেই সাজেন ওয়ার্দা। চোখটা স্মোকি করতেই ভালোবাসেন। ‘নাচের সময়ে এত বেশি গয়না পরতে হয় যে বাকি সময়টা গয়না ছাড়া থাকতেই পছন্দ করি।’ বললেন ওয়ার্দা।
বিয়ের অনুষ্ঠানে ট্রেন্ডি শাড়ি বেছে নেন ওয়ার্দা। ‘এমন লুকেই আমাকে বেশি মানায়।’, কারণটা বলে দিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে ‘কবিপক্ষ’ নামে ভারতে একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে ওয়ার্দা আমন্ত্রণ পেয়েছেন শ্যামা নৃত্যনাট্য করার। এই অনুষ্ঠানে ২৫ জনের একটা দল নিয়ে রওনা হবেন কিছুদিনের মধ্যেই। আলাদাভাবে বিদেশে ঘুরতে যাওয়া না হলেও নাচের কারণে প্রচুর ঘোরাঘুরি হয়। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩টার মতো দেশে গিয়েছি। ভারতে তো অনেকবার গেলাম। নাচ নিয়ে পড়েছিও রবীন্দ্রভারতীতে। সাধারণত বিদেশে গেলেই কেনাকাটা সেরে ফেলি। পোশাক, গয়না, ব্যাগ, জুতা, ঘর সাজানোর নানা জিনিসই বেশি কেনা হয়।’ কেনাকাটায় বিশেষ কোনো ব্র্যান্ডের ভক্ত নন ওয়ার্দা। তবে কোলাপুরি চপ্পল বিশেষ পছন্দ। ‘যেটা পরলে আমাকে মানাবে বলে মনে হয় সেটাই কিনে নেই।’
নাচের কারণেই ফিটনেস নিয়ে ভাবতে হয়। তাই একটা চার্ট মেনেই খাওয়াদাওয়া করেন ওয়ার্দা। তবে সেখানে ‘ভাত একদম না’ বলে পণ করেছেন এক বছর আগে। এর বদলে রুটি, সবজি, ফলমূল, টকদই, সালাদ ইত্যাদি েখয়ে থাকেন নিয়মিত। মাঝেমধ্যে ফুচকা-চটপটি চলে মনের চাওয়াতেই। হেসে বললেন, ‘এই লোভটাই সংবরণ করতে পারা মুশকিল হচ্ছে’।
রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষার্থী থাকার সময়েই ওয়ার্দা রিহাব কাজ করেন ঋতুপর্ণ ঘোষের চিত্রাঙ্গদা চলচ্চিত্রের মঞ্চপরিবেশনায়। আলাপের শেষ পর্যায়ে ঋতুর সঙ্গে কাজ করার নানা ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বললেন ওয়ার্দা, ‘২০০৯ সালের সেই সময়ে ঢাকায় বেশ পরিচিতি পেয়েছিলাম। তাই অনেকে চিত্রাঙ্গদায় একজন সাধারণ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে মানা করেছিল। কিন্তু আমি সব সময় চেয়েছি একজন গুণী মানুষের কাজ দেখতে, যা আমাকে পরবর্তী সময়ে সাহায্য করবে। সেদিক থেকে আমি সফল বলেই মনে হয় এখন।’

কেনাকাটা বা আড্ডায় সালোয়ার–কামিজ,মনিপুরি পোশাকের সেঙ্গ মৃদঙ্গে তাল তুলে সকাল শুরু হয় ওয়ার্দা রিহাবের। ছবি: কবির হোসেন
কেনাকাটা বা আড্ডায় সালোয়ার–কামিজ,মনিপুরি পোশাকের সেঙ্গ মৃদঙ্গে তাল তুলে সকাল শুরু হয় ওয়ার্দা রিহাবের। ছবি: কবির হোসেন