পুরুষেরা কেন যোগ চর্চা করবেন?

যোগ চর্চার ধরনটাই এমন যে, এটা শুধু শারীরিক বিষয় নয়, এখানে শরীর ও মনকে এক করতে হয়। প্রতীকী ছবি।
যোগ চর্চার ধরনটাই এমন যে, এটা শুধু শারীরিক বিষয় নয়, এখানে শরীর ও মনকে এক করতে হয়। প্রতীকী ছবি।

পাঁচ দশক আগেও নাকি নারীদের যোগ ব্যায়ামের চর্চায় উৎসাহিত করা হতো না, মূলত পুরুষেরাই এর চর্চা করতেন। আর এখন দুনিয়াজুড়ে যোগ চর্চাকারীদের বেশির ভাগই নাকি নারী! আজ প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে এক প্রতিবেদনে যোগ চর্চায় পুরুষের উপকারিতার কয়েকটি দিক তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।


এখন নারীদের তুলনায় যোগ চর্চায় পুরুষদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ মনে করা হয় পুরুষদের মানসিকতাকে। হালের পুরুষদের অনেকেই নাকি মনে করেন, যোগ একটি কোমল ব্যাপার যা নারীদেরই বেশি মানায়। এ ছাড়া শারীরিক নমনীয়তা না থাকাটাও অনেক পুরুষের যোগের ক্লাস থেকে দূরে থাকার অন্যতম কারণ।

কিন্তু যোগ চর্চা থেকে পুরুষেরা কীভাবে উপকৃত হতে পারে সে বিষয়ে জানিয়েছেন ভারতের স্বনামধন্য যোগ প্রশিক্ষক অভিষেক শর্মা। রণবীর কাপুর, দীপিকা পাড়ুকোন, অনিল কাপুর ও সোনম কাপুরের মতো বলিউড তারকারা তাঁর কাছেই যোগ চর্চার তালিম নিয়েছেন নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। এই যোগ প্রশিক্ষকের দৃষ্টিতে নিয়মিত যোগ চর্চায় পুরুষের নানা উপকারের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।

শারীরিক নমনীয়তা

নারীদের তুলনায় পুরুষের দৈহিক নমনীয়তা কম। কিন্তু সার্বিকভাবে একজন সক্ষম ব্যক্তির জন্য নমনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শক্তি ও সহনশক্তিতে বলীয়ান হতে চাওয়া পুরুষের জন্যও শারীরিক নমনীয়তা খুবই দরকার। যোগ চর্চার মাধ্যমে শারীরিক নমনীয়তা বৃদ্ধি করে মেরুদণ্ড সোজা রাখা, অঙ্গবিন্যাস ঠিক রাখা, ভারসাম্য বজায় রাখা এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে অভ্যস্ত হয়ে নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন একজন পুরুষ।

যৌবনদীপ্ত থাকা

আজকাল অনেক পুরুষেরা সৌন্দর্য চর্চায় নানা প্রসাধনী ব্যবহার করেন, নানা ওষুধ-পথ্য সেবন করেন। এগুলো সবই বাহ্যিকভাবে ক্রিয়া করে। কিন্তু যোগ চর্চা ভেতর থেকে শরীরকে সারিয়ে তোলে, সক্ষম করে তোলে। নিয়মিত যোগ চর্চা করলে একজন মানুষ যৌবনদীপ্ত থাকেন এবং তাঁকে দেখতেও তারুণ্যে ভরপুর বলে মনে হয়। যোগ চর্চা মানুষকে মেদহীন করে বলে শরীর হালকা-পাতলা ও ঝরঝরে হয়, চলাফেরায় গতি আসে, প্রতিক্রিয়ায় ক্ষিপ্রতা বাড়ে। ত্বকে সজীবতা আসে। আর সার্বিকভাবে শক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ে।

শরীর-মনের ঐক্য

যোগ চর্চার ধরনটাই এমন যে, এটা শুধু শারীরিক বিষয় নয়, এখানে শরীর ও মনকে এক করতে হয়। ফলে নিয়মিত যোগ চর্চাকারী যেকোনো কাজে মনঃসংযোগে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। শারীরিক ও মানসিক ঐক্যে যোগের এই বিশেষ গুণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা, অভিনয়, নৃত্য ও সংগীত চর্চা বা আলোকচিত্রীর জন্যও যোগ চর্চা দারুণ উপকার বয়ে আনতে পারে। তেমনি যোগ চর্চাকারী পুরুষের এই সহজাত সক্রিয়তা ও মনঃসংযোগ তাঁদের যৌনজীবনের সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও দারুণভাবে উপকারী।

রোগ-বালাই দূরে রাখা

জীবনযাপনের ধরনের কারণে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগ-বালাই আর জখমের আশঙ্কা থাকে পুরুষের। মাংসপেশির নমনীয়তা না থাকাটাও এর একটা কারণ। জীবনযাপনের চাপ থেকে তৈরি হওয়া এমন রোগ-বালাই দূরে রাখতে আর সারিয়ে তুলতে যোগ একইসঙ্গে প্রতিষেধক ও প্রতিরোধী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নিয়মিত যোগ চর্চা পরিপাক ও হজমের সক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে ভেতর থেকে ঠিক রাখে। পাশাপাশি শরীরকে দূষণমুক্ত করে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় করে তোলে।

সম্ভাবনার বিকাশ

দ্রুত গতিতে বদলাতে থাকা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো আর নিজের অবস্থান ধরে রাখাটাই একটা চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। যোগ চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ ধ্যান বা মনঃসংযোগ। ফলে নিয়মিত যোগ চর্চায় অভ্যস্ত হতে পারলে ব্যক্তির নিজেকে নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়ে। যোগের এই বিশেষ দিকটি মানুষকে লক্ষ্যে অবিচল থেকে সক্রিয়তা বাড়াতে সহায়তা করে। এই বিদ্যা আয়ত্ত করতে পারলে নিজের সম্ভাবনা যথাযথ বিকাশে তা সহায়ক হতে পারে।

চাপমুক্ত ও সাবলীল থাকা

আধুনিক জীবনে অনেকেই সপ্তাহজুড়ে কঠোর পরিশ্রম করা আর সপ্তাহান্তে তুমুল আড্ডাবাজি করে পার্টি করে কাটান। কিন্তু এই জীবনযাপন ক্রমেই শরীর ও মনের ওপর চাপ বাড়াতেই থাকে। যোগ চর্চা মানুষকে সত্তার গভীর থেকে নিজেকে অবসাদ মুক্ত করতে, চাপমুক্ত করতে শেখায়। একজন যোগ চর্চাকারী সপ্তাহজুড়ে যেমন কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন তেমনি প্রতিদিনই নিজেকে অবসাদ থেকে মুক্ত করতেও শেখেন। যোগ চর্চাকে প্রাত্যহিক জীবনের অংশ করে তুলতে পারলে শরীরচর্চা ও ধ্যানের মাধ্যমে চাপমুক্ত ও সাবলীল জীবনযাপন আয়ত্ত করা সম্ভব।