রংপুরের সিঁদল দিয়ে মাছ ভুনা

নাসরিন জাহান
নাসরিন জাহান
চট্টগ্রামে গিয়ে মেজবানি মাংস খেয়েছেন কিংবা সিলেটে গিয়ে সাতকরার রান্না! বাংলাদেশের একেক অঞ্চলে আছে বিশেষ বিশেষ খাবার, যে খাবারগুলোর সঙ্গে এক হয়ে গেছে সেই অঞ্চলের নাম। তেমনি রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয় খাবার সিঁদল। এটি তৈরি হয় শুঁটকি মাছ, কচুসহ নানা উপাদানে। তৈরির পর চ্যাপটা বা গোল ছোট ছোট বলের আকারে এটি রেখে দেওয়া হয়। পরে মাছ, সবজির সঙ্গে রান্না বা ভর্তা করে সিঁদল খেতে হয়। রেসিপি দিয়েছেন রংপুরের নাসরিন জাহান

উপকরণ
সিঁদল ১ কাপ, মাছ (শোল/মাগুর/পাঙাশ) আধা কেজি, পেঁয়াজ ১ কাপ, তেল পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, রসুনের কোয়া ২টি (মাঝারি), মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ কাটা ৫-৬ টি, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরের গুঁড়া আধা চা-চামচ ও লবণ পরিমাণমতো।

সিঁদল দিয়ে মাছ ভুনা
সিঁদল দিয়ে মাছ ভুনা

প্রণালি
সিঁদল তাওয়ায় হালকা আগুনে ভেজে তারপর সামান্য পানি দিয়ে বেটে নিতে হবে। এরপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে মাছের টুকরাগুলো হলুদ ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে ভেজে নিতে হবে। এবার তেলে পেঁয়াজ দিয়ে বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত ভেজে সামান্য পানি দেওয়ার পর সব মসলা দিয়ে চার-পাঁচ মিনিট কষানো হলে তাতে সিঁদল ঢেলে দিয়ে আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। এবার মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে কষানো সিঁদলের মধ্যে দিতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ কষিয়ে সিঁদলের তেল ছাড়লে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

সিঁদল তৈরির প্রণালি
প্রাচীনকাল থেকেই সিঁদল রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার। রংপুর বিভাগের প্রায় প্রতিটি পরিবারই সিঁদল তৈরির সঙ্গে পরিচিত। সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বাদের কারণে সিঁদল এ অঞ্চলের মানুষের একটি অতিপ্রিয় খাবার। এটি মূলত তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ, যেমন: মলা, ডারকা বা পুঁটি প্রভৃতি দিয়ে। মাছগুলো প্রথমে ভালো করে ধুয়ে কুটে পাঁচ-ছয় দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। মাছের শুঁটকিগুলো উরুনগান (বড় আকারের কাঠের হামানদিস্তা) বা শিল-পাটায় আধা ভাঙা করে নিতে হয়। আবার ব্লেন্ডারেও ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এরপর একই পরিমাণ সাদা মানকচু ও কালো কচুর শুধু ডাঁটা ধুয়ে নিয়ে কাঁচা অবস্থাতেই বাটতে হয়। কচুবাটার সঙ্গে মলা, ডারকা বা পুঁটি মাছের আধা ভাঙা গুঁড়া, প্রয়োজনমতো শুকনা মরিচ, রসুন এবং কিছু পরিমাণ খাওয়ার সোডা ধীরে ধীরে সবকিছুর সঙ্গে মেশাতে হয়। সব মেশানো হয়ে গেলে এক দিন পর মণ্ডগুলো হলুদ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে হাত দিয়ে গোল বা চ্যাপটা করে পাঁচ-ছয় দিন রোদে শুকাতে হয়। ডালা বা কুলায় জাল দিয়ে ঢেকে (যাতে কাক বা পাখি খেতে না পারে) শুকিয়ে এগুলো একটু শক্ত হয়ে গেলে তৈরি হয়ে যায় সিঁদল। বহুদিন রেখে খাওয়া যায়।