ঠান্ডায় ঠান্ডাজ্বর হলে

শীতে সুস্থ থাকতে হলে নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। মডেল: মাশিয়াত, ছবি: অধুনা
শীতে সুস্থ থাকতে হলে নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। মডেল: মাশিয়াত, ছবি: অধুনা

আহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে শীতে জ্বর, সর্দি এবং কাশি যেন আঁকড়ে ধরে। শীতে প্রধানত বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস। সাধারণত ঠান্ডা ও ফ্লুর কারণে কাশি হয়। তবে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, শুষ্ক আবহাওয়া, ধূমপান, এমনকি কিছু ওষুধ সেবনের ফলেও এ সমস্যা তৈরি হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একবার কাশি শুরু হলে যেন পিছু ছাড়তেই চায় না। একটানা কাশি খুবই বিরক্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন
এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এটা মূলত শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশের রোগ এবং সৌভাগ্য হলো এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসা করলেও সাত দিন লাগে, না করলেও এক সপ্তাহ লাগে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।
সর্দি-কাশি বা কমন কোল্ড
শীতে সবচেয়ে বেশি যে রোগ হয় তা হলো সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠান্ডাজ্বর। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশেষত ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জার মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা, কাশি বা হাঁচি থেকে নিঃসরিত ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ হয়। এর ফলে রোগীর জ্বর, গলাব্যথা, ঢোঁক গিলতে অসুবিধা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে অনবরত সর্দি নিঃসৃত হওয়া, খুসখুসে কাশি এবং এর ফলে গলা, মাথা এবং বুকে-পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। কোনো কোনো সময় খাবারে অরুচি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্রাম, প্রচুর পানীয়, ফলের রস, পানীয় গ্রহণ করবেন। খুব বেশি জ্বর, গলাব্যথা, কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
অ্যাজমা বা হাঁপানি
সাধারণত যেকোনো ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষত শীতকালে অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রকোপ বেড়ে যেতে যায়। যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পরিবেশদূষণ, শিল্পবর্জ্য থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি, খাবার, ওষুধ অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রকোপ যেন বেশি না হয় বা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাস্ক পরে চলাচল করতে হবে। যেসব খাবার, ওষুধ, ধুলাবালিতে পরিবেশগত অ্যালার্জেন আছে, সেগুলো থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
এডিনয়েড-টনসিলের প্রদাহ
শীতে গলাব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এডিনয়েড, টনসিল বড় হওয়া বা প্রদাহ হওয়া। এর ফলে রোগীর গলাব্যথা, ঢোঁক গিলতে কষ্ট, জ্বর, নাক দিয়ে নিশ্বাস নেওয়া এবং ঘর্ঘর শব্দ ইত্যাদি হতে পারে। এই রোগগুলো অনেকের বারবার হয় এবং জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তার উপদেশমতো ওষুধ গ্রহণ এবং কিছু প্রতিরোধব্যবস্থা যেমন-গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা।

কাশি দূর করার কার্যকর উপায়
গার্গল বা কুলকুচি: এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করতে হবে। এক সপ্তাহ প্রতিদিন তিন বেলা করে কুলকুচি করবেন। এতে কফ, কাশি এবং গলাব্যথা সবই খুব দ্রুত কমে যাবে। এটি খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি।
মধু: এক কাপ লেবুমিশ্রিত চায়ের মধ্যে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। মধু কাশি কমাতে সাহায্য করে এবং গলাব্যথা কমায়।
এ ছাড়া আদা চা, গরম পানি খাওয়া, গলায় ঠান্ডা না লাগানো নিয়মিত মেনে চললে কাশি দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
এরপরও কাশি ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ছবি: অধুনা
ছবি: অধুনা

সর্দি-কাশি ও হাঁপানি প্রতিরোধে
* ঠান্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা
* কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা ভালো। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা উচিত।
* প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পরা। তীব্র শীতের সময় কান-ঢাকা টুপি পরা এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করা ভালো।
* ধুলাবালি, ধূমপান এড়িয়ে চলা
* ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ না রেখে মুক্ত ও নির্মল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।
* হাঁপানির রোগীরা শীত শুরুর আগেই চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
* যাদের অনেক দিনের শ্বাসজনিত কষ্ট আছে, তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোকক্কাস নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া উচিত।
* তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা, যা দেহকে সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
* হাত ধোয়ার অভ্যাস করা। বিশেষ করে চোখ বা নাক মোছার পরপর হাত ধোয়া।
* সাধারণভাবে রাস্তায় চলাচলের সময় মাস্ক পরা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো। তাজা ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

যাদের হাঁপানি বা অনেক দিনের কাশির সমস্যা যেমন ব্রঙ্কাইটিস আছে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় তাদের কষ্টও বাড়ে। নিউমোনিয়াও এ সময় প্রচুর দেখা দেয়। বলা চলে, শীতে অসুখের মূল ধাক্কাটা যায় শ্বাসতন্ত্রের ওপরই। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বাড়ে নবজাতক, শিশু, বৃদ্ধ হাঁপানি রোগী ও ধূমপায়ীদের। তাই প্রত্যেকের প্রতিরোধমূলক জীবনযাপন করা উচিত।
লেখক: চিকিৎসক