মুদ্রার ঠিক উল্টোপিঠ!

>সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল ও কল্পনা আনামের দাম্পত্য জীবন ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে একজন আরেকজনের ঠিক কতটা কাছে এসেছেন? শাকিলের কোন বিষয়গুলো মুগ্ধ করে কল্পনাকে? কিংবা কল্পনার কোন দিকটা শাকিলের পছন্দ! দুজনের অমিলের জায়গাই বা কোনটা? এমন অনেক বিষয় নিয়েই অধুনার নতুন বিভাগ অপর পক্ষের মুখোমুখি হলেন নজরুল সংগীতের এই দুই তারকা।
খায়রুল আনাম শাকিল ও কল্পনা আনাম
খায়রুল আনাম শাকিল ও কল্পনা আনাম

প্রথম দেখা ছায়ানটে। ১৯৮৬ সালের শেষ দিকে। বিয়ের আগে টুকটাক কথাবার্তা হলেও, ঠিক প্রেমটা হয়ে ওঠেনি। কারণ, কল্পনাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাতেই তিনি সোজা পারিবারিকভাবে আলোচনা করার পরামর্শ দেন শাকিলকে। এরপর সময় গড়িয়েছে মাস তিনেক। আলোচনা হয়েছে পারিবারিকভাবে। বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে। গাঁটছড়া বেঁধেই (বিয়ের পর) শুরু প্রেমপর্ব। এখনো একই রকম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা একজনের প্রতি অন্যজনের। খায়রুল আনাম শাকিল যেমন বোঝেন, কল্পনা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না মানে সে রেগে আছে, তেমনি কল্পনাও জানেন বাসায় যেটাই রান্না হোক, সেটা নিয়ে কোনো কথা শুনতে হবে না স্বামীর কাছ থেকে। কে প্রথম ‘ভালোবাসি’ বলেছিল সেটা মনে না থাকলেও আগ্রহটা যে শাকিলেরই বেশি ছিল, সেটা ঠিকঠাক মনে আছে কল্পনার। জানালেন, ‘ছায়ানটে আমাদের এক বন্ধুকে দিয়ে শাকিল আমার খোঁজ নেয়, আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা। আমি তাকে জানিয়েছিলাম পারিবারিকভাবে কথা বলতে।’
তবে এরপর দুজন অবশ্য টুকটাক কথা বলেছেন নিজেদের মধ্যে। বাইরে একবার কথা বলতে গিয়ে ছায়ানটের এক গুরু অঞ্জলি রায়ের সামনে পড়ে যাওয়ার স্মৃতিও উজ্জ্বল দুজনের মধ্যে।
খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘জানেন! আমরা দুজন কিন্তু সম্পূর্ণ দুই ধরনের। যাকে বলে মুদ্রার ঠিক উল্টোপিঠ! অনেক কিছুতেই আমাদের অমিল। তারপরও ভালোবাসার অভাব বোধ করি না কখনো। আমার মনে হয়, বোঝাপড়াটাই দাম্পত্য জীবনে আসল।’ দুজনকে আলাদাভাবে বসিয়ে জানতে চাই অন্যজনের কিছু দোষ-গুণের কথা। এই পর্বটায় দুজনে ছিলেন আলাদা ঘরে।এরপর দুজন আলাদাভাবে বসেছিলেন টেবিলে। একজনের প্রিয় বিষয় সম্পর্কে ১০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আরেকজন লিখে লিখে। এরপর সঠিক উত্তর মিলিয়ে দেখা হয়েছে দুজনের। দুজনের মধ্যে অনেক অমিল থাকলেও বোঝাপড়া যে দারুণ, সেটা প্রশ্নের উত্তর দেখেই বোঝা গেল। দশটার মধ্যে দশটা প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিয়েছেন কল্পনা আনাম। আর খায়রুল আনাম শাকিল দিয়েছেন দশটার মধ্যে নয়টার সঠিক উত্তর।

খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি: সুমন ইউসুফ
খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি: সুমন ইউসুফ

শাকিলের চোখে কল্পনা

যা কিছু ভালো: কল্পনা অনেক গোছানো, মেধাবী। অন্য কেউ সমস্যায় পড়লে সে নিজ থেকেই তা মাথায় নিয়ে দৌড়াতে ভালোবাসে। কারও উপকারে আসতে পারলে অনেক আনন্দ পায়। স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। যখন যা করবে সেখানেই সব ধ্যানজ্ঞান দেয় বলে সাফল্য পায় বেশি। নিজের পরিবার, শ্বশুরবাড়ির সবটাই তার ভাবনা থাকে। সন্তানদের দেখাশোনা ও পড়ালেখা নিয়ে বেশি আগ্রহী।

সমালোচনা: কিছু কিছু ক্ষেত্রে কল্পনা বেশি চঞ্চল। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এই চঞ্চলতা অনেক সময় সমস্যায় ফেলতে পারে। আত্মসমালোচনা! অসম্ভব। এমনকি অন্য কেউ তাঁর সমালোচনা করলেও সে... (ঘরের দরজায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা হাসি)। অনেক সময় সন্তানদের ক্ষেত্রে বেশি কঠোরতা দেখায়। যদিও কেউ কেউ বলে এটা ঠিক। অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়ে।

কল্পনা আনাম
কল্পনা আনাম

কল্পনার চোখে শাকিল

যা কিছু ভালো: একজন ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় সে ঠিক তা-ই। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস রাখে। সব ক্ষেত্রেই শাকিল অনেক ‘কমফোর্টেবল’। খাবার, ব্যবহার বা অন্য যেকোনো বিষয়ই হোক, শাকিলকে নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয় না। আমি আমার মতো থাকতে পারি। শাকিল অনেক বন্ধুসুলভ, তাই ভয় পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমার চেয়ে সে নাকি দ্রুত রান্না করে শাকিল তো তাই দাবি করে। গান গাইতে গেলে খালি ত্রুটি খুঁজে বের করে, যদিও সেটা পরে ভালো ফলাফলই দেয় (এটা কী সমালোচনা হয়ে গেল! হা হা হা)।

সমালোচনা: ওর চেয়ে ভোলা মন আর দেখিনি। বেশ অগোছালো। ভালো কোনো সুর কানে এলেই আর নিজের মধ্যে থাকে না। হয়তো লোকজনের মধ্যে আছে, তাকে ঘিরে কথা হচ্ছে আর সে মজে আছে অন্যদিকের গানের সুরে। যেহেতু কিচ্ছু মনে থাকে না, তাই একই কথা তার আশপাশের সবাইকে বলে রাখতে হয়।