শীতে চাই আর্দ্রতা

শীতের প্রসাধনীতে বাড়তি ময়েশ্চারাইজার থাকা চাই। মডেল: ইশানা, ছবি: নকশা
শীতের প্রসাধনীতে বাড়তি ময়েশ্চারাইজার থাকা চাই। মডেল: ইশানা, ছবি: নকশা

শীতকালে প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেদের কিছু শারীরিক পরিবর্তনও টের পাই। এই সময়টায় ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, চুল শুষ্ক হয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে যায় ইত্যাদি। ত্বকের সঙ্গে মানানসই ক্রিম, তেল, সাবান, শ্যাম্পুর ব্যবহার, প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ ও জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা শীতকালেও শারীরিক এসব পরিবর্তনকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।
এ সময়ে ক্রিম, সাবান যা-ই ব্যবহার করবেন, লক্ষ রাখবেন তা যেন বাড়তি আর্দ্রতাযুক্ত হয়। দিনে অন্তত দুবার ক্রিম ব্যবহার করবেন। আলফা হাইড্রক্সি বা ভিটামিন-ই যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। গোসলের আগে শরীরে জলপাই তেল মাখতে পারেন অথবা গোসলের শেষে অল্প পানিতে কিছুটা জলপাই তেল দিয়ে গা ধুয়ে নিন। তারপর আলতো করে গা মুছে নেবেন।
অনেকের ধারণা শীতকালে সানস্ক্রিন প্রয়োজন হয় না। কেউ কেউ রোদ পোহাতে পছন্দ করেন। কিন্তু সূর্যের গামা রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। গামা রশ্মি ত্বকে দ্রুত বলিরেখা তৈরি করে। ত্বকে উপযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে বার্ধক্যজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রোদে বের হওয়ার আগে শীতকালেও সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে বিধায় ত্বকের ওপর থেকে আর্দ্রভাব কমে যায়। এর ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তা ছাড়া গোলাপজল ও গ্লিসারিন ৩ঃ১ অনুপাতে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শীতের আরেক সমস্যা হচ্ছে ঠোঁট ফাটা ও কালো হয়ে যাওয়া। এর সমাধানও গ্লিসারিন। বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন লাগাবেন।
হাত-পায়ের ত্বক ফেটে গেলে তারপর গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি না মেখে বরং ফেটে যাওয়ার আগেই এগুলো নিয়মিত মাখা ভালো।
যাঁরা নিয়মিত ফেসিয়াল, স্ক্রাব ম্যাসাজ করান, তাঁরা শীতকালেও নিয়মিত চালিয়ে যান। শীতকালের জন্য ফেসিয়াল ও স্ক্রাব ম্যাসাজ বেশ ভালো। কারণ এতে ত্বকের মরা কোষ উঠে যায়।
বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে শীতে চুল হয়ে উঠে রুক্ষ এবং খুশকির উপদ্রব হয়। খুশকির জন্য ভালো শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
চুলে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষভাব কমে যায়। কন্ডিশনার চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে বলে চুল সুন্দর ও মসৃণ হয়। রাতে নিয়মিত গরম তেল চুলে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে পরদিন কন্ডিশনারযুুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলেও অনেক উপকার পাবেন। শ্যাম্পু করার পর মোটা দাঁতের চিরুনি বা রাবারের কাঁটাযুক্ত ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ানো ভালো। এ ছাড়া সামান্য গরম জলপাই তেল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে তারপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখতে পারেন ১৫ মিনিট। এরপর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলবেন।
শীতকালে ত্বকের ও চুলের যত্নে কিন্তু খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতের শাকসবজি, ফল সুন্দর-স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজন। শিম, বরবটি, নানা রকম শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন।
আরেকটি পরামর্শ, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধা গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। তাতে ত্বক ও স্বাস্থ্য দুটোই ভাল থাকবে।
লেখক: চিকিৎসক