অন্যের সন্তানকে দোষারোপ নয়

একসঙ্গে চলতে গেলে নানা রকম ঝামেলা হয়—এটাই স্বাভাবিক। তবে অভিভাবকদের এই ঝগড়া-বিবাদ অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত।

সন্তানদের ঝগড়ার মাঝে বড়দের ঢোকা ঠিক না। মডেল: রাইসা, নাফিসা, গ্লোরী ও আয়ান। ছবি: অধুনা
সন্তানদের ঝগড়ার মাঝে বড়দের ঢোকা ঠিক না। মডেল: রাইসা, নাফিসা, গ্লোরী ও আয়ান। ছবি: অধুনা

জয় ও রাফি একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকে। প্রতিদিন বিকেলে একসঙ্গে খেলাধুলা করে। মাঝেমধ্যে খেলা নিয়ে ঝগড়াও করে ওরা। রাফি একবার জয়ের নামে মাকে গিয়ে নালিশ করল। ব৵স, রাফির মা এসে কোমর বেঁধে ঝগড়া শুরু করে দিলেন জয়ের মায়ের সঙ্গে। তাঁর ছেলের কোনো দোষ নেই, ভুল নেই। সেটা বারবার বলতে লাগলেন।
একই ফ্ল্যাট বা একই জায়গায় বসবাস করতে হলে বাচ্চারা একসঙ্গে মেশে, খেলাধুলা করে। এ সময়টা তাদের ভেতর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। খেলাধুলা অনেক বড় ধরনের একটা শিক্ষা। এতে করে বাচ্চারা একে অপরের সঙ্গে মিশতে শেখে, একে অপরকে জানতে শেখে। একসঙ্গে চলতে গেলে নানা রকম ঝামেলা হয়—এটাই স্বাভাবিক। তবে অভিভাবকদের এই ঝগড়া-বিবাদ অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত। কারণ এতে করে বাচ্চারা শৈশব থেকেই নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করার ব্যাপারটা বোঝে, কীভাবে কোনো সমস্যা একাই মোকাবিলা করা যায়—সেটা তারা শিখতে পারে। সমস্যা সমাধানের এই দক্ষতা বড় হয়ে কাজে দেবে। শৈশবে তারা একা একা যখন সমস্যার সমাধান করতে শেখে, তাদের ভেতর একধরনের আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের ইতিবাচক ভূমিকা থাকাটাই শ্রেয় এবং হস্তক্ষেপ না করাটাই ভালো। এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, বাচ্চাদের যখন একে অপরের সঙ্গে ঝামেলা হয়, তখন তার সমাধান তাদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদি অভিভাবকেরা সমাধান করেন, তবে বাচ্চারা মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে; যা পরে সমস্যা করে। অভিভাবকেরা যা করতে পারেন তা হলো—তাঁরা বাচ্চাদের নিরপেক্ষভাবে একটা সমাধান দিতে পারেন।
অন্যকে দোষারোপ করার একটা প্রবণতা আমাদের মধ্যে থাকে। বাচ্চারা যদি অভিযোগ করে, তবে তাঁদের উচিত বাচ্চাদের কথা মনোযোগসহকারে শোনা ও বোঝা। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অভিভাবকই যে ভুলটা করে থাকেন তা হলো নিজের বাচ্চার পক্ষে থাকতে গিয়ে অন্যের বাচ্চার ওপর দোষ দেওয়া। অন্য পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলেন। কিন্তু তাঁদের বাচ্চাদের শেখানো উচিত কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, সমস্যাটার উৎপত্তি কোথায়, তার বন্ধুদের সঙ্গে কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা হলে কীভাবে তা সমাধান করা উচিত। তবে বাচ্চারা সমস্যার সমাধান না চাওয়া পর্যন্ত তাদের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া ভালো, তখন বাচ্চারা নিজেরাই তাদের জায়গা থেকে সমস্যার সমাধান করতে চাইবে এবং তাদের ভেতর সেই আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। এ ধরনের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একমাত্র অভিভাবকেরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।