একা বাসায় রান্না শেখা

>
স্পর্শিয়া
স্পর্শিয়া

অভিনয়শিল্পী স্পর্শিয়া। বর্ণিল খাবারদাবারের জন্য রান্না করেছেন তিনটি পদ। তেল-মসলা কম দিয়ে রান্না করতেই ভালোবাসেন। রান্না এবং নিজের সম্পর্কে বললেন স্পর্শিয়া
‘ঝাল খেতে খুব ভালো লাগে। তাই রান্না করতে গেলেই একটা সবুজ কাঁচা মরিচ দিয়ে দিই।’ বলেই হেসে ফেললেন স্পর্শিয়া।

অভিনয়শিল্পী স্পর্শিয়া। ঢাকার নিকেতনে স্পর্শিয়ার বাসায় কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। তখন ছিমছাম বাসাটাও গোছাচ্ছিলেন স্পর্শিয়া।

মা চাকরিজীবী হওয়ায় ছোটবেলাতেই রান্নাবান্নায় হাত পাকিয়ে নিয়েছেন তিনি। ‘সকালে মা নাশতা তৈরি করে দিতেন, দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে আমি নিজেই রান্না করতাম আর রাতে মাকে রান্নায় টুকটাক সাহায্য করতাম,’ এভাবেই স্পর্শিয়ার রান্না শেখা আর বেড়ে ওঠা। ‘আজকাল ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে। পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোতে ফিরে যাই মাঝে মাঝে,’ বললেন স্পর্শিয়া।


শুরুটা যদিও পরিস্থিতির কারণে হয়েছিল, কিন্তু রান্না করা এখন তাঁর শখ। নানা রকমের রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান স্পর্শিয়া। রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতেও খুব পছন্দ করেন। সময় পেলেই চলে যান রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। খেতে গিয়ে কোনো খাবারের রেসিপি ধরে ফেলতে পারলে বাসায় ফিরে এসে নিজেই বানিয়ে ফেলেন।

নানা রকমের রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান স্পর্শিয়া
নানা রকমের রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান স্পর্শিয়া

স্পর্শিয়া আগে রান্না করতেন নিজের ও মায়ের জন্য। বিয়ের পর স্বামী আর নিজের জন্য খাবার বানান। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে দেখে এসেছেন রান্নায় স্বাস্থেয়ের দিকটি প্রাধান্য দিতে। তাই তেল-মসলা কম দিয়ে খাবার রাঁধেন তিনি। তবে ঝালটা একটু থাকে।

মায়ের রান্না নিয়ে বলেন, ‘আমি আম্মুর রান্না খুব মিস করি। মনে হয় আমি যতই চেষ্টা করি আম্মুর মতো ডাল রান্না করতে পারব না।’

রান্না নিয়ে মজার ঘটনা আছে স্পর্শিয়ার ঝুলিতে। এ রকম একটা ঘটনা শোনালেন তিনি। বলতে থাকেন, ‘এক বান্ধবী বেগুন খেতে পারে না। একবার তাকে দাওয়াত করে বেগুন আর চিংড়ির তরকারি রান্না করে খাওয়ালাম। কিন্তু খাওয়ার সময় তাকে কিছু বলিনি। খাওয়া শেষে সে রান্নার খুব প্রশংসা করছিল। চিংড়ির সঙ্গে যে বেগুন ছিল, তা সে ধরতেই পারেনি। পরে জেনে সে খুব অবাক হলো যে বেগুন এত মজা করেও রাঁধা যায়।’

নানা রকমের রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান স্পর্শিয়া
নানা রকমের রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান স্পর্শিয়া

গত বছরের শেষের দিকে স্পর্শিয়ার বিয়ে হয়। স্বামী রাফসান আহসান। ‘রাফসান আমার হাতের রান্না খুব পছন্দ করে। এমনকি মাঝেমধ্যে যদি বাইরে থেকে বাসায় খাবার আনা হয়, ও বলে, তুমি একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে আসো,’ বলেন স্পর্শিয়া।

শ্বশুরবাড়িতে এখনো রান্না করার সুযোগ পাননি স্পর্শিয়া। তবে এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। আর অবশ্যই অনেক কিছু রান্না করবেন। কোনো কোনো বছর ঈদের পুরো দিনটাই চলে যায় শুটিংয়ে। ঈদ এবং অন্যান্য উৎসবের দিনে রান্না করার তেমন একটা সুযোগ পান না। কোনো উৎসবে যদি বাসায় থাকেন, তবে পিৎজা কিংবা মুরগি রান্না করেন স্পর্শিয়া।

ফ্রায়েড রাইস
ফ্রায়েড রাইস

ফ্রায়েড রাইস
উপকরণ
চাল ১ কাপ, মটরশুঁটি ২ কাপ, ফুলকপি ২ কাপ, সয়া সস ২ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ, মুরগির মাংস কিমা আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৪-৫ টা, কাঁচা পেঁপে ২ কাপ কিউব কাট করে কাটা, বরবটি কিউব করে কাটা ২ কাপ, গাজর কিউব করে কাটা ২ কাপ, আলু ২ কাপ কিউব করে কাটা, টেস্টি সল্ট ১ চা-চামচ, চিংড়ি মাছ কিমা আধা কাপ, সাদা গোলমরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, সয়াবিন তেল ৬ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ ও সিসেম অয়েল ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি

চাল ও সবজি ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৮ মিনিট ঢাকনা ছাড়া সেদ্ধ করে নিন। সবজি, মাংস ও চিংড়ি আলাদা সেদ্ধ করে নিন। এবার একটি পাত্রে তেল দিয়ে ১ মিনিট গরম করুন। এবার সব উপকরণ একসঙ্গে দিয়ে ঢেকে শতভাগ তাপমাত্রায় ৬ মিনিট রান্না করুন। এবার হানি গার্লিক চিকেনের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

হানি গার্লিক চিকেন
হানি গার্লিক চিকেন

হানি গার্লিক চিকেন
উপকরণ
মুরগির হাড় ছাড়া বুকের মাংস দুই টুকরা, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনগুঁড়া সামান্য, মাখন ৪-৫ চা-চামচ, চিকেন স্টক আধা কাপ, মধু ৩ চা-চামচ, সয়া সস আধা চা-চামচ, গোলমরিচগুঁড়া সামান্য ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি

বাটিতে মুরগির মাংস, রসুনগুঁড়া, গোলমরিচের গুঁড়া ও লবণ ভালো করে মেখে নিন। এবার একটি কড়াইয়ে মাখন দিয়ে তাতে মুরগির মাংসগুলো মচমচে ও বাদামি করে ভেজে নিন। এখন অন্য একটি কড়াইয়ে চিকেন স্টক নিয়ে তাতে রসুনবাটা, মধু ও সয়া সস দিয়ে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পর ভাজা মুরগিগুলো এর মধ্যে দিয়ে দিন। নেড়ে দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন। ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুণ সুস্বাদু হানি গার্লিক চিকেন।

পিৎজা
পিৎজা

পিৎজা
উপকরণ
ডো-এর জন্য: ময়দা ১-২ কাপ, ইস্ট ২ চা-চামচ, ডিম ১ টা, লিকুইড দুধ ১-২ কাপ, চিনি ২ চা-চামচ, লবণ সামান্য ও তেল ২ চা-চামচ।
পিৎজার টপিংয়ের জন্য: মুরগি হাড় ছাড়া পাতলা করে কাটা ১ কাপ, সয়া সস ২ চা-চামচ, গোলমরিচ সামান্য, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, মরিচকুচি ৫ টা, দুধ ১ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ৩ চা-চামচ, তেল দেড় কাপ, মেয়নেজ ৩-৪ চা-চামচ, টমেটো সস ৪ চা-চামচ, মোজারেলা চিজকুচি ১-২ কাপ এবং আদা, জিরা ও রসুনবাটা ২ চা-চামচ করে।

প্রণালি

হালকা গরম দুধে ইস্ট ও চিনি ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। ময়দা ও লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে দুধ ও ডিম দিয়ে খামির তৈরি করুন। নরম খামির হবে। হাতে তেল লাগিয়ে খামিরে মাখিয়ে বায়ুবদ্ধ কোনো পাত্রে গরম স্থানে রাখুন ২ ঘণ্টা। এবার পাত্রে তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচকুচি দিয়ে ভাজতে থাকুন। আধা ভাজা হলে মাংস দিন। সয়া সস, সামান্য লবণ, গোলমরিচগুঁড়া, আদা, রসুন ও জিরাবাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। মাংস হয়ে এলে দুধে কর্নফ্লাওয়ার গুলিয়ে মাংসে দিন। ঘন হলে নামিয়ে নিন।

এবার পিঁড়িতে সামান্য ময়দা ছিটিয়ে খামিরটি রুটির মতো বেলে হাত দিয়ে মাঝখানে পিৎজার শেপ দিন। ফ্রাইপ্যানে বা তাওয়ায় হালকা তেল ব্রাশ করে রুটিটা দিয়ে দিন। যে পাশে টপিং, সে পাশ নিচের দিকে দিয়ে হালকা আঁচে সেঁকে নিন। এভাবে দুই দিক সেঁকে নিতে হবে।

এবার টপিংয়ের পাশে প্রথমে টমেটো সস দিয়ে ব্রাশ করুন। তার ওপর মেয়নেজ দিন। এবার চিকেন দিয়ে দিন, তার ওপর চিজ ছড়িয়ে দিন। আর দিন একটু টমেটো সস। এবার প্যানে পিৎজা দিয়ে ঢেকে হালকা আঁচে দিন ১০ মিনিট। চিজ মেল্ট হলে নামিয়ে গরম পিৎজা পরিবেশন করুন মেয়নেজ আর টমেটো সসের সঙ্গে।


মুরগি মাশরুম

উপকরণ
বাটন মাশরুম এক ক্যান, মুরগি ৪ টুকরা (শুধু মাংস), মাখন ১০০ গ্রাম, কয়েক টুকরা রসুন (কুচানো), পার্সলি বা সেলারিপাতা পরিমাণমতো, রেড পেপার পরিমাণমতো, ভিনেগার ২ টেবিল চামচ ও লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি

ফ্রাইপ্যানে মাখন দিয়ে রসুনকুচিগুলো লালচে করে ভেজে ফেলুন। এরপর মাশরুম ও মুরগি দিয়ে নেড়েচেড়ে বাকি সব উপকরণ যোগ করুন।