অন্দরে পর্দা

পর্দায় প্রকাশ পায় রুচির পরিচয়

শুধু গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নয়, অন্দরের সৌস্দর্য বাড়িয়ে তুলতেও সহায়তা করে সঠিক নকশার পর্দা।

নাই–বা বইল দখিনা হাওয়া, নাই–বা হলো বসন্তের ছোঁয়া পাওয়া। তবু হাওয়ায় তো ওড়ে ঘরের পর্দা। জ্যৈষ্ঠের খর রোদ্দুরের দিনেও দুম করে একঝলক হাওয়ায় উড়তেই পারে। কেমন পর্দা চাই এমন রোদ্দুরমাখা দিনে, জেনে নেওয়া যাক আজ।

গৃহসজ্জায় পর্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। সৌন্দর্যবোধ, সৃষ্টিশীলতা আর রুচিশীলতার পরিচায়কও পর্দা। গ্রীষ্মের সময়টায় পর্দার জন্য বর্ণালির নানা রঙের মধ্য থেকে শীতল রংগুলো বেছে নেওয়া ভালো। ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত বললেন এমনটাই। জেনে নেওয়া যাক তাঁর আরও পরামর্শ।

বর্ণালির রং থেকে

পর্দার সঙ্গে মেলানো হয়েছে ঘরের অন্যান্য অনুষঙ্গের রং।

নীল, সবুজ, বেগুনি এবং এগুলোর সমন্বয়ে অন্য যেসব রং হয়, সেগুলো শীতল রং। এগুলোর হালকা শেডের পর্দা হতে পারে একরঙা কিংবা থাকে রঙের বৈপরীত্য। সাদার সঙ্গে যেকোনো শীতল রঙেও হয় বৈপরীত্য। পর্দা একরঙা হলে দেয়াল, মেঝে, কুশন কভার প্রভৃতিতে ওই রংটির নানা শেড রাখতে পারেন। হালকা রঙের পর্দায় ঘর বড় দেখায়। লম্বাটে কিংবা ভিন্ন আকৃতির ঘরকে আপেক্ষিকভাবে অন্য রকম কিংবা ছোট দেখাতে চাইলে বেছে নিতে হবে একটু গাঢ় রঙের শেড।

পর্দার ধরনধারণ

পর্দা ভেদ করে বাতাস এলেই আরাম। কৃত্রিম তন্তুর পর্দায় বাতাস বাধা পায়। সুতি কাপড় ভালো, কিন্তু ধুতে ভারী। তাই মিশ্র তন্তুর পর্দায় সবদিকেই সুবিধা। ছোট ছোট নকশা করা রুচিশীল পর্দা, চেক কিংবা ডোরাকাটা—যেকোনোটাই রাখতে পারেন অন্দরে মানানসই হলে। ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সোফাসেটের সঙ্গে গ্রামীণ চেকের পর্দা কিন্তু মানায় না। সংসারের শুরুতেই খুব দামি পর্দা কেনার সুযোগ কম হলেও বাজেট নির্ধারণ করে একেবারে মানসম্মত পর্দা কেনার চেষ্টা করুন।

ঘরজুড়ে পর্দা যত

বসার ঘরে হালকা নকশার পর্দা

. বসার ঘরে সুন্দর নকশার পর্দা থাক, কিন্তু খুব রংচঙে নয়।

· খাবার ঘরে উজ্জ্বল, রঙিন পর্দা রাখতে পারেন।

· শোবার ঘরে এমন পর্দা রাখুন, যা আনে স্নিগ্ধতা।

· শিশুদের ঘরের পর্দায় কার্টুন ও ছবি থাকলেও তা যেন খুব ঝকমকে না হয়।

চাই আলো, চাই হাওয়া

ভোরবেলায় সরিয়ে দিন পর্দা। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকলেও প্রাকৃতিক আলো-হাওয়া ভালো। রোদের সময়টায় পর্দা টেনে দিন।

পরিচ্ছন্ন, সুন্দর অন্দর

পর্দা সরিয়ে রাখতে জানালার গ্রিলে না গুঁজে পর্দা বাঁধের ফিতা কিংবা ‘বো’ দিয়ে বেঁধে রাখা ভালো। (কোনো কোনো পর্দায় এমন ব্যবস্থা থাকেই, আবার আলাদা করে কিনেও নিতে পারেন।)

· রোজকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শুরুতেই কোমল ব্রাশ (প্লাস্টিক কিংবা অন্য উপকরণের) দিয়ে পর্দা পরিষ্কার করুন। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থাকলে তা কাজে লাগাতে পারেন। পর্দায় ঝালর থাকলে সেখানেও যাতে ধুলা-ময়লা না জমে। ছয় মাসে অন্তত একবার পর্দা ধুয়ে নিন।

চলতি ধারার পর্দা

দুই স্তরের পর্দা হলে নেটের মতো অংশটুকু থাক অন্দরের দিকে আর অন্যটুকু বাইরের দিকে। মন চাইলে নেটের স্তরটুকু বিস্তৃত করলেন (অন্যটা সরিয়ে)। ভারী পর্দার সঙ্গে নেটের স্তর থাকার সুবিধা হলো, কখনো এই স্তরটা মেলে রাখলে (অর্থাৎ ভারীটা সরিয়ে দিলে) আলো আর বাতাস দুই-ই আসে এই স্তর দিয়ে। অবশ্য একেবারে লাগোয়া জানালা হলে সেই সুবিধা নেই। পর্দার হালচাল জানালেন ডিজাইন কোড ইন্টেরিয়রের পরামর্শক আবদুল্লাহ আল মিরাজ। নিত্যনতুন পর্দার পরিবর্তন করা কার্যত সম্ভব নয়। সম্ভব নয় অন্দরের আনুষঙ্গিকের সঙ্গে পুরোপুরি মিলিয়ে পর্দা রাখাও, তবে অনুষঙ্গের চেয়ে একেবারে ভিন্ন রঙের পর্দাও মানানসই নয়। পর্দার সঙ্গে খানিকটা মিল রেখে বরং করতে পারেন বিছানার চাদর, বালিশের কুশন প্রভৃতি। দুই স্তরের পর্দা ঝোলানোর জন্য এখন দুই স্তরের ছড় বা দণ্ড করা হয়। এক বা দুই স্তরের দণ্ড হতে পারে অ্যালুমিনিয়াম, জিআই পাইপ (রঙিন প্লাস্টিকে মোড়ানো) কিংবা স্টেইনলেস স্টিলের, শেষেরটিই বেশি ভালো। পর্দা ঝোলানোতে খুব জাঁকজমক চল (যেমন পর্দা ঝোলানোর অংশটাতে আলাদা করে কাঠের একটা বক্স করা) এখন নেই।

পর্দার পটে

পর্দায় ফুল–লতাপাতা

ফুলপাতা, জ্যামিতিক মোটিফ, শেভরন প্যাটার্ন কিংবা পলকা ডট থাকতে পারে। নেটের সাদাটে পটভূমিতে নকশা বসানো থাকল, সঙ্গের একরঙা ভারী পর্দা হলো ওই নকশার রঙে। আড়াআড়ি কিংবা লম্বালম্বি ডোবায় থাকতে পারে কাছাকাছি কয়েকটি রং। শুধু ওপরটাও হতে পারে ডোরাকাটা।