অন্য চোখে আহসান হাবীব

জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট, রম্যলেখক, উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক—আহসান হাবীব। সময় পেলেই বই পড়েন। সিনেমা দেখেন। জানা যাক তাঁর জীবনযাপনের গল্প
মিরপুর সাড়ে এগারো বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁয়ে একটা রাস্তা আছে। সাড়ে এগারোর সেই রাস্তার সাড়ে বারোটা বেজে গেছে! বিস্তর খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাটা যেন দুর্গম গিরি কান্তার মরু! খোঁড়াখুঁড়ি যেখানে শেষ, সেখানে একটা চকলেট রঙের দরজাওয়ালা বাসা। বাসার দরজা হাট করে খোলা। অনুমান করতে কষ্ট হয় না পাড়াতো ছেলেপুলেদের অবাধ বিচরণ এ বাসায়। অনুমান যে সঠিক, সেটা জানা গেল বাসার সদস্য জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট, লেখক আহসান হাবীবের কাছে, ‘দরজা খুলে রাখার কারণে মাঝেমধ্যে মাছসহ এটা-সেটা চুরি হয়। একবার কিছু অকেজো জিনিস চুরি করার পর এক চোর ধরা পড়ল। বস্তা রেখেই সে দৌড়। বস্তা খুলে দেখি সারা দিনের বিশাল কালেকশন তার। চিন্তা করে দেখলাম, বেচারার খুব লস হবে। তাই রাতে দরজা খুলে রেখে বস্তাটা রেখে দিলাম। সকালে উঠে দেখি বস্তা নেই। মনে হয় সে এসে নিয়ে গেছে।’


এই হলেন আহসান হাবীব। নিজেকে যিনি পরিচয় দেন ‘গ্র্যান্ডফাদার অব জোকস’ হিসেবে। তাঁর জীবনযাপন সাধারণ কিন্তু ঈর্ষণীয়! কেন? শুনুন আহসান হাবীবের মুখে, ‘আমি পরিবারের ছোট ছেলে। ফলে অনেক উপহার পাই। এ ছাড়া, আমার শালাভাগ্য বেশ ভালো। তাঁরা আমাকে প্রচুর শার্ট, প্যান্ট উপহার দেন। আর হাতের কাছে যা পাই তা-ই পরি। মেরুন রংটা আমার প্রিয়। যা পরে আনন্দ পাই, সেটাই আমার ফ্যাশন।’
কথার ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েকবার পোশাক পরিবর্তন করতে হলো আহসান হাবীবকে, ছবি তোলার জন্য। মাঝে একবার আমরা চলে গেলাম বাসার লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে এক চিলতে ছাদটায়। ক্যামেরার সামনে ট্রেডমার্ক হাসি হাসতে হাসতে বললেন, ‘একসময় ফটোগ্রাফির শখ ছিল। কোর্স করে সার্টিফিকেটও পেয়েছিলাম। মেজো ভাই (মুহম্মদ জাফর ইকবাল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটা এসএলআর ক্যামেরা পাঠিয়েছিলেন। এক বন্ধু ধার নিয়ে আর ফেরত দিল না। পরে আর ফটোগ্রাফিও করা হয়নি সেভাবে।’

কেবল ফটোগ্রাফিই নয়, গিটারের বেলায়ও প্রায় একই রকম অবস্থা। শখের বশে স্প্যানিশ গিটার বাজাতে শুরু করেছিলেন আহসান হাবীব। অফিস মানে উন্মাদ কার্যালয়ে একটা গিটারও আছে। এখন মাঝেমধ্যে ‘টুংটাং’ করেন কেবল। তবলাও বাজাতে পারেন। তাঁর তবলা বাজানো দেখে নাকি বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ বেশ আগ্রহী হয়েছিলেন। শেষমেশ তবলায় হাতেখড়িও নিয়েছিলেন অনুজের কাছে। আর এখন আহসান হাবীব হাতে ঘড়ি নেন প্রিয়জনদের কাছেই। মানে ঘড়িও বেশির ভাগ সময় উপহার হিসেবেই পান। তবে চশমার বেলায় খানিকটা ব্যতিক্রম, ‘একই ধরনের চশমা পরি তিন-চার বছর ধরে। কিন্তু চশমা বেশ দ্রুতই পরিবর্তন করতে হয়। কারণ, প্রায়ই আমি চশমা হারাই।’
আর কী পছন্দ আহসান হাবীবের? বই আর ছবি। বাসার প্রতিটি ঘরে বই—বসার ঘরে বই, শোয়ার ঘরে বই। শখ বলতেও এই দুটি—বই পড়া আর ছবি দেখা। সংগ্রহে আছে প্রচুর ডিভিডি। বাগানে গাছ লাগাতে সাহায্য করেন স্ত্রী আফরোজা আমিনকে।

এখনো রং-তুলিতে স্বচ্ছন্দ্য আহসান হাবীব। ডিজিটাল উপায়ে কার্টুন আঁকার চেষ্টা করেছিলেন, বেশ কঠিনই ঠেকেছে সেটা। মোটকথা অতটা ‘ডিজিটাল’ই হয়ে উঠতে পারেননি এখনো! তবে লেখালেখি করেন ল্যাপটপেই। রম্যরচনাই বেশি লেখেন। জোকস তাঁর অন্যতম প্রিয় বিষয়। তাঁর সামনে জোকস বলা মানে সমুদ্রে এক ঘটি জল ঢালা! তারপরও একটা জোকস বলা যাক (নিশ্চিত, এই জোকসটাও তিনি জানেন!)।
এক লোককে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি এত জোকস জানেন কী করে?’ উত্তরে বললেন, ‘বিয়ের রাতে স্ত্রীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল—প্রতিবার ঝগড়ায় যে হারবে, তাকে একটা করে কৌতুক বলতে হবে!’