>

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। প্রথম বর্ষে পড়ার সময় সমবয়সী এক মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে সম্পর্ক হয়। আমাদের সরাসরি কখনো দেখা না হলেও দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু একটা সময় লক্ষ করলাম, সে আর আগের মতো খোঁজ নিচ্ছে না। কথাও বলছে না। একসময় তার কাছেই জানতে পারি, আমাদের সম্পর্ক শুরুর চার বছর আগেই অন্য এক ছেলেকে পছন্দ করে রেখেছে তার পরিবার। সেই ছেলেটার পড়াশোনা শেষ, চাকরি হলেই তাদের বিয়ে হবে। ছেলেটা এখন তার সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করে। সেও কথা বলে।
আমাদের দূরত্ব বাড়তে থাকলে একসময় সে পরিবারের অমতে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি তা করতে পারছি না। কারণ, আমি স্বাবলম্বী নই, পরিবারের বড় ছেলে বলে পরিবারের প্রতিও আমার অনেক দায়িত্ব। এখন কিছুদিন পরপর সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা আর আগের মতো কথা বলতে পারি না। দূরত্বটা বেড়েই চলেছে। দিন-রাত এসব চিন্তা করতে করতে আমার পড়াশোনাসহ স্বাভাবিক জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন আমার কী করা উচিত?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে আমরা যে একেবারে বিয়ের মতো জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করি, সেটি সত্যিই আশঙ্কাজনক। তোমরা সরাসরি পরস্পরের সঙ্গে দেখা না করেই সম্পর্কটিকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে গেলে এবং একজন অন্যজনের প্রতি মানসিকভাবে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়লে, তা কি বাস্তবসম্মত হয়েছে?
এভাবে ভার্চ্যুয়াল জগতে পরিচিত হওয়া মানুষগুলো যদি আমাদের সঠিক তথ্যগুলো সততার সঙ্গে না দেয়, তাহলে পরে নানা ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তুমি মেয়েটাকে মনের ভেতরে এতটা জায়গা দিয়ে ফেলার পর সে জানাল, চার বছর আগেই তার পরিবার অন্য একটি ছেলেকে পছন্দ করে রেখেছে। এরপর মেয়েটি সেই ছেলেটির সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ শুরু করল। যদি সে তোমার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে ছেলেটির সঙ্গে এভাবে কথা বলার কী কারণ ছিল, সেটি স্পষ্ট নয়। এরপর হঠাৎ করেই মেয়েটি তোমাকে বিয়ে করার কথা বলল যখন তোমাদের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে। মেয়েটি পরিবারের নির্ধারিত মানুষটিকে বাদ দিয়ে তোমার সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্কে জড়াল, আবার অন্য ছেলেটির সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলল, এরপর এখন তোমাকে ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করার কথা বলছে। এতে কি মনে হয় না সে নিজের সিদ্ধান্তকে নিজেই শ্রদ্ধা করতে পারছে না? এ ছাড়া সে তোমাকে সব কথা সত্যি বলছে কি না তাতেও কি পুরোপুরি আস্থা রাখা যাচ্ছে? তোমরা কেউ কারও পরিবারকে চেনো না বা এমন কোনো মানুষ কি জানা নেই যার মাধ্যমে পরস্পরের ব্যাপারে আরও সংবাদ পেতে পারো? মনে হচ্ছে পরস্পরের মুখের কথার ওপরে ভরসা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না।
একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক সৃষ্টি করার আগে কিন্তু সরাসরি দেখা হওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, তাদের সংস্কৃতি, রুচিবোধ, মূল্যবোধগুলো জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে মুখোমুখি যোগাযোগের সুবিধা হচ্ছে, অন্য মানুষটির শারীরিক ও অবাচনিক ভাষা দেখে বোঝা যায় সে কতটা আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে তার মনের ভাবগুলো প্রকাশ করছে।
তুমি মাত্র স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছ। এখন ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই সময়ে তুমি যদি স্থির থাকতে না পারো, তাহলে পরে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে, তাই না? মেয়েটি যদি নিজেই দোদুল্যমান একটি মানসিক অবস্থায় থাকে, তাহলে সে তোমাকেও একটি টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাবে। এখন তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কিছুদিন পরপর সে যোগাযোগ করলে তুমি তার প্রত্যুত্তর দেবে কি না। আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে প্রথমে নিজেকে নিরাপদ রাখা। কাজেই তোমার মনকে বারবার কষ্ট পেতে দেবে কি না সেটি খুব ভালোভাবে ভেবে দেখো। এ ছাড়া কোনো মাধ্যম থেকে যেভাবে হোক মেয়েটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করো এবং তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করে ওর এই আচরণগুলোর ব্যাখ্যাও চাইতে পারো।