
কর্মক্ষেত্রে, বাসায়, রাস্তাঘাটে, শপিংমলে বা অন্য কোনো জায়গা। কারও দ্বারা যদি অশোভন আচরণের শিকার হন, তবে এ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় আইনে রয়েছে। অশোভন আচরণ যদি ফেসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হয়, তাহলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। মুঠোফোনে, কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো অশোভন ইঙ্গিত যদি কেউ দেয় কিংবা কোনো অশ্লীল ভিডিও ফুটেজ পাঠায় বা দেখানোর চেষ্টা করে, তা-ও অশোভন আচরণের মধ্যে পড়ে। এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
কী শাস্তি রয়েছে
দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদা করার ইচ্ছায় কোনো মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি বা যেকোনো প্রকারের কাজই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদা করার ইচ্ছায় এ উদ্দেশ্যে কোনো মন্তব্য করে, কোনো শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তু প্রদর্শন করে যে উক্ত নারী অনুরূপ মন্তব্য বা শব্দ শুনতে পায় অথবা অনুরূপ অঙ্গভঙ্গি বা বস্তু দেখতে পায়, কিংবা উক্ত নারীর নির্জনবাসে অনধিকার প্রবেশ করে, সে ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশের ৭৬ ধারা অনুযায়ী নারীদের উত্ত্যক্ত করার শাস্তি হিসেবে উল্লেখ আছে কমপক্ষে এক বছরের শাস্তি অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী যদি যৌন কামনার উদ্দেশ্যে যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করলে বা শ্লীলতাহানি করলে এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা এবং সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট বিভাগ যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি নির্দেশনামূলক রায় প্রদান করেন। এ রায়ে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সর্বস্তরে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিমূলক আচরণ প্রতিরোধের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী অশোভন আচরণকে যৌন হয়রানিও বলা চলে। হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন আবেদনমূলক আচরণ (সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে) যেমন: শারীরিক স্পর্শ বা এ ধরনের প্রচেষ্টা, যৌন হয়রানি বা নিপীড়নমূলক উক্তি, পর্নোগ্রাফি দেখানো, অশালীন ভঙ্গি, যৌন নির্যাতনমূলক ভাষা বা মন্তব্যের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা, কাউকে অনুসরণ করা বা পেছন পেছন যাওয়া, যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে ঠাট্টা বা উপহাস করা প্রভৃতি যৌন হয়রানির অন্তর্ভুক্ত।
যা করণীয়
হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণের শিকার হলে এ অভিযোগ কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করা যেতে পারে। কমিটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্ত করবে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিধি অনুসারে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যদি ওই অভিযোগ দণ্ডবিধির যেকোনো ধারা অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে কমিটি অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠিয়ে দেবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি থাকুক বা না থাকুক কোনো ভুক্তভোগী সরাসরি থানায় বা আদালতেও মামলা করতে পারে। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে বা শপিংমলে অশোভন আচরণের শিকার হলে নিকটস্থ থানায় বা দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করার সুযোগ আছে। অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে থানায় এজাহার হিসেবে মামলা করতে হবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট