আইইউবিএটির ৩০ বছর

আইইউবিএটির ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের বাবুগঞ্জে বেড়ে ওঠা মানিকের। বাবা স্থানীয় কলেজের শিক্ষক। পরিবারে মানিকের পরে আছে আরও ৩ বোন। বাবার পরে তাঁকেই নিতে হবে দায়িত্ব। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল থাকলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মানিকের হয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। এ পর্যায়ে তাঁর পাশে দাঁড়ায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। মেধাবৃত্তিতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় মানিক।

গত ৩০ বছরে এমন অনেক মানিকের স্বপ্নপূরণের সারথি হয়েছে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন করে গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এম আলিমউল্যা মিয়ান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি প্রতিষ্ঠা করেন।

শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা–সংবলিত একটি পূর্ণাঙ্গ সবুজ ক্যাম্পাস আইইউবিএটি, যা রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। শিক্ষাজীবন শেষে কেবল সনদ হাতে ধরিয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করতে চায় না আইইউবিএটি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আরিফার গল্প। করোনা মহামারি যখন শুরু হলো, আরিফা তখন স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। অল্প কয়েকটা কোর্স আর ইন্টার্নশিপ বাকি। এই সময়ে সরকারি নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন আরিফা। কিন্তু অনলাইনে পাঠদান চলল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার সহায়ক কোর্স আর নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুবাদে এরই মধ্যে চাকরিও পেয়ে গেছেন তিনি।

করোনাকালে যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটে পড়েছেন, তাঁদের পাশেও দাঁড়িয়েছে আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষ। তেমনই একজন বগুড়ার মেয়ে রাজিয়া। বাবা করিম আলম তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু করোনায় বাবার ব্যবসায় ভাটা পড়েছিল। এ অবস্থায় মেধাভিত্তিক বৃত্তি, নারী শিক্ষায় বৃত্তিসহ চলতি সেমিস্টারে নানা ছাড় দেওয়া হয়েছে রাজিয়াকে। তাই করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে যায়নি তাঁর পথচলা।

দেশের প্রতিটি গ্রামে উচ্চশিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া আইইউবিএটির অন্যতম লক্ষ্য। ‘অ্যান এনভায়রনমেন্ট ডিজাইনড ফর লার্নিং’; অর্থাৎ, জ্ঞান অর্জনের উপযুক্ত পরিবেশ, এমন স্লোগান সামনে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। সময়োপযোগী, মানসম্মত ও ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকা রাখে, এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান তাঁরা।

অর্থের অভাবে যেন কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর পথচলা থেমে না যায়, সে জন্য আইইউবিএটি চালু করেছে মেধাভিত্তিক বৃত্তির ব্যবস্থা। ‘যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা, মেধাবী কিন্তু অসচ্ছলদের জন্য প্রয়োজনে অর্থায়ন’, এ প্রত্যয় সামনে রেখে প্রায় ২ কোটি টাকা সমমূল্যের ৯০টি বৃত্তি দেওয়া হয় প্রতি সেমিস্টারে। এ ছাড়া মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত বৃত্তির ব্যবস্থাও আছে। করোনার প্রকোপে যেন কোনো শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থমকে না যায়, তাই সবার জন্যই ১৫ শতাংশ বৃত্তির ব্যবস্থা করে আইইউবিএটি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুর রব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক তার চারপাশের পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। তাই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মেধামননের বিকাশসহ সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের একমাত্র উপায় হচ্ছে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। এই আলো থেকে যেন কোনো মেধাবী বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা।’

বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১১টি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট। কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং ব্যবসায় প্রশাসনসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক বিভিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। এসব গবেষণার ফলাফল নিয়ে রিসার্চ সেমিনারের আয়োজন করা হয় নিয়মিত। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে কোষাধ্যক্ষ সেলিনা নার্গিস বলেন, ‘আমরা শুধু শিক্ষার্থীর পরিমাণ বাড়ানো কিংবা ভবনের পরিধি বাড়ানোর কথা চিন্তা করি না; বরং কোন উদ্যোগে আমাদের শিক্ষার্থীরা আরও জ্ঞান অর্জন করতে পারবে এবং তা বাস্তবে কাজে লাগিয়ে নিজের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের সমাজকে এগিয়ে নিতে পারবে, সেই চেষ্টা করি। যা ভবিষ্যতেও আমরা অব্যাহত রাখব।’

শিক্ষার্থীদের জন্য আইইউবিএটি নিয়মিত আয়োজন করে ক্যারিয়ারবিষয়ক নানা কর্মশালা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা পেশার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে শেখার সুযোগ হয় তাঁদের। তাই স্নাতক শেষে চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকেন আইইউবিএটির স্নাতকধারীরা। এ ছাড়া বর্তমান শিক্ষার্থী ও প্রাক্তনদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে কাজ করে আইইউবিএটির অ্যালামনাই ও প্লেসমেন্ট অফিস। অগ্রজদের সহায়তা পেয়ে অনুজেরা এগিয়ে যান।

৩০ বছরের পথচলায় আইইউবিএটির আছে বেশ কিছু অর্জন। প্রকৌশল বিভাগের কোর্সগুলো দ্য ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারস, বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ছাড়া ২০২০ সালের ইউআই গ্রিন মেট্রিক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে সারা বাংলাদেশে আইইউবিএটির অবস্থান দ্বিতীয়। আর বিশ্বের ৮৪টি দেশের ৯১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫৭ তম। এ ছাড়া মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে বিশ্বের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু গবেষণাপত্র।

শিক্ষার্থীদের কাঁধে কেবল বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েই তাঁকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়, এ কথা অনুধাবন করতে পেরেই শিক্ষার্থীদের সৎ, দায়িত্ববান হিসেবে গড়ে তুলতে চায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি। গত ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা করছে তারা।