আগামীকাল বলে কিছু নেই, আজই...

বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষ্যে গ্রামীণফোন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজন করেছে ‘গেট ফিউচার রেডি’ শিরেনামে মাস্টারক্লাস সিরিজ। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে সম্প্রতি ‘ইনোভেশন অ্যান্ড কনকার’ বিষয়ে মাস্টারক্লাস নিয়েছেন জাভেদ আখতার। তিনি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তিনি ২৪ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলীয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ‘ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট’ ‘কাস্টমার’স সেনসিটিভিটি’ ও ‘ডিজাইনার’স থিঙ্কিং’ নিয়ে কাজ করেছেন। এখানে সরাসরি অংশগ্রহণ নেন গ্রামীণফোনের ইনহাউস স্কিল একাডেমি ‘গ্রামীণফোন এক্সপ্লোরার’ প্রোগ্রামের ৩০ জন তরুণ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শাম্মু ফারহানা।

ইনোভেশন প্রাথমিকভাবে একটা আইডিয়া। সেটার চ্যালেঞ্জগুলো কোথায়, তা খুঁজে বের করে সমাধানের মাধ্যমে ভ্যালু অ্যাড করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি কীভাবে ব্যবসায় সুবিধা করতে পারে সেই দিকটা। অনেকে মনে করেন, ইনোভেশন একটা ‘ফিনিট গেম’। কিছু তৈরি করলাম, বিক্রি করলাম, শেষ হয়ে গেল। আসলে বিষয়টি তা নয়। ব্যবসা প্রতিনিয়ত মোড় নেয়। ঘুরে দাঁড়ায়। শাখা-প্রশাখা ছড়ায়। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ইনোভেশন করতে থাকে। এভাবে চলতেই থাকে।

গ্রামীণফোন এক্সপ্লোরার প্রোগ্রামের তরুণদের সঙ্গে জাভেদ আখতার (দ্বিতীয় সারির বাঁ থেকে দ্বিতীয়); অনুষ্ঠান সঞ্চারনা করেন শাম্মু ফারহানা (নিচের সারির ডানে)

ইনোভেশন প্রাথমিক অবস্থায় যখন আইডিয়া থাকে, সেই আইডিয়ার ডিজাইনটি হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। যেমন বাজারে একটা নতুন ডিওডরেন্ট এল, সেটার ডিজাইন এমন যে ‘ডিজেবল’রাও ব্যবহার করতে পারে। আর সেটি দারুণভাবে সমাদৃত হলো। আমি নতুন কী দিতে পারছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে নতুন অ্যারোসল এল। সেটা অ্যালুমিনিয়ামের কৌটায় দেওয়া হলো। ফুরিয়ে গেলে আবার নতুন করে ভরা যেত। এতে যেমন খরচ সাশ্রয়ী হলো, তেমনি ব্যবহারও অনেকটা স্বাস্থ্যকর, পরিবেশবান্ধব হলো।

পণ্যটি যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁদের মাথার ভেতর ঢুকে পড়া জরুরি। তাঁদের সমস্যা কী, খুঁতখুঁতানি কোথায়, কী হলে আরও ভালো হয়—এটা বুঝতে হবে। প্রয়োজন উদ্ভাবনের জনক। সেই প্রয়োজনটা বুঝতে পারা সবার আগে জরুরি। প্রযুক্তিকে সমস্যার সমাধান দিতে হবে। না হলে প্রযুক্তির কোনো দাম নেই। যেমন, যানজট ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা। সেই যানজটের কাজটা যদি অন্য কেউ করে দেয়, তাহলে ভালো হয়। পাঠাও, ফুডপান্ডা সেগুলো করে দিচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন শপিং সেগুলো করে দিচ্ছে। তাই এগুলো সফল। এবার প্রশ্ন হলো, কী করলে সেই প্রয়োজন পূরণে আরও ‘ভ্যালু এড’ করা যায়। যেমন, কম দামে ভালো মানের পণ্য দেওয়া। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা। প্যাকেজিংটা সুন্দরভাবে করা। পুরো প্রক্রিয়াটার ভেতর সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ধরে রাখা।

দুই বছরে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই অনলাইননির্ভর হয়েছে। ইন্টারনেটে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস করা যায়। শিক্ষা মূলত একটা অভিজ্ঞতা, অনুপ্রেরণা, কৌতূহলী করে তোলা, স্বপ্ন দেখানো। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা কেন যেন এখনো চ্যাপ্টার মুখস্থ করার ভেতরেই রয়ে গেছে। এভাবে বেশি দূর এগোনো যাবে না। শিক্ষার কোনো বাউন্ডারি রাখা যাবে না। আন্তর্জাতিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

মহামারিকালের বিধিনিষেধে মানুষের ব্যবহার, জীবনযাপন বদলে গেছে। যেমন, বিধিনিষেধে ওয়াশিং মেশিনের বিক্রি বেড়েছে। অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এখন মানুষ খুব কমই পুরোনো জীবনে ফিরে আসবে। তাই আমাদেরকেও সামনের দিকে তাকাতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে তাকাতে হবে। সময়ের সঙ্গে থাকতে হবে। সামনের সারিতে থাকতে হবে। এগিয়ে থাকতে হবে। আগামীকাল বলে কিছু নেই। যা করার আজই করতে হবে।