আট দিনে বিক্রি ১০ কোটি টাকা

শেষ হলো নবম জাতীয় এসএমই (স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্ট্রাপ্রেনিউর) পণ্য মেলা। এবারের মেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য। আরও প্রায় ১৭ কোটি টাকার অর্ডার পাওয়া গেছে। যেগুলো মেলা শেষে সময়মতো ক্রেতাকে সরবরাহ করবেন এই উদ্যোক্তারা। এ বছর মহামারির ছায়ায় ছোট পরিসরে এ অর্জন কম নয়।

এবারের মেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতেই চোখে পড়ল রংবেরঙের পোশাক। ওপরে তাকাতেই দেখি, দোকানের নাম ‘সপ্তবর্ণ মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’। সুতির আসমানিরঙা কাপড়ের জমিনে ময়ূরকণ্ঠী নীল ফুলের হাতের কাজ। ওড়নাটা মনোযোগ টেনে নিল। এগিয়ে গিয়ে দাম জিজ্ঞেস করলাম, ১ হাজার ৬০০ টাকা। ওড়নাটি নেড়েচেড়ে দেখছি, এমন সময় এক ক্রেতা এসে কিনে নিলেন। নবম এসএমই পণ্য মেলায় দোকানটি দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা রুমানা।

৫ থেকে ১২ ডিসেম্বর চলেছে এই মেলা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

জানতে চাইলাম বিক্রি কেমন হচ্ছে? মন্দ নয় জানিয়ে রুমানা বললেন, ‘প্রথম দুই দিন তো বিক্রিই হয়নি। আবহাওয়া ভীষণ খারাপ ছিল। ক্রেতা তো দূরের কথা, বিক্রেতারাই অনেকে আসতে পারেননি। তবে এই দুই দিন বিক্রি ভালোই হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারাও এসেছিলেন। আমার কাছ থেকে ১০টি হাতের কাজের সালোয়ার–কামিজ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে মন্দ নয়।’ ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়িগুলোর দাম ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০। বাচ্চাদের কুরুশের কাজের জামাগুলোর দাম ২০০ থেকে ৫০০–এর ভেতর। ছোট্ট জুতাগুলো ৫০০ করে। এদিকে নকশিকাঁথাগুলোর দাম ১ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে ৬ হাজার। খাবারের ভেতর এবার বৈচিত্র্য কম। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে মধু।  

মেলায় প্রায় ১৭ কোটি টাকার অর্ডার পাওয়া গেছে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কথা হলো আরেক নারী উদ্যোক্তা মমতাজ মকসুদের সঙ্গে। তাঁর দোকানের নাম ‘অ্যাসথেটিক’। এ মুহূর্তে তাঁর নিজের কোনো শোরুম বা দোকান নেই। বিধিনিষেধের শুরুতে সবটা গুটিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছেন। তবে মহামারিতেও ব্যবসা একেবারে খারাপ যায়নি। অনলাইনে হাতের কাজের নানা পণ্য বিক্রি করেছেন। কেবল মেলাতেই তাঁকে দেখা যায় জানিয়ে বললেন, ‘আমি যখন চাকরি করতাম, তখনো “অ্যাসথেটিক” করেছি। আমার আসলে ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল। এখন অবসরের পর পুরোপুরি এগুলো নিয়েই আছি। দুই ছেলেই বিদেশে থাকে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল। আমার দুজন সহকারী আছে। ওদের নিয়ে বাসায়ই চলছে। বড় বাসা। দুটো রুম রেখেছি হাতের কাজের এসব পণ্যের জন্য। মেলায় বিক্রি খারাপ হয়নি। দুটো বড় অর্ডার পেয়েছি। শীতে তো সব বড় অনুষ্ঠানগুলো হয়।’

সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো নবম জাতীয় পণ্যমেলা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এবারের পণ্য মেলায় ছিল দুটো প্যাভিলিয়ন, দুটো প্যাভিলিয়নে ছিল পাঁচটি উইং। একটিতে পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য আর খাবার। অন্যটি তুলনামূলকভাবে ছোট। সেখানে প্রকৌশলশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের জিনিসপত্র। এরই মাঝে উঁকি দিয়েছে কসমেটিকস, হারবাল আর ঘর সাজানোর পণ্য। সব মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি পাটজাত পণ্যের। বিদেশিরা এসেও আগে ঢুঁ দেন সেখানেই। পাট থেকে তৈরি পায়ের জুতা, খাতার মলাট, ঘাড়ে নেওয়া ব্যাগ, পার্স, ট্রলি, মাদুর—কত কিছুর পসরা সাজানো। এক দোকানে দেখলাম ক্রেতা আর বিক্রেতা আলাপ জুড়ে দিয়েছেন। চীন থেকে যে পাটজাত পণ্য আসে, সেগুলো থেকে দেশি পাটের পণ্য কতটা মজবুত, এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

ক্রেতাকে পণ্য সম্পর্কে বলছেন বিক্রেতা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় অংশ নিয়েছে ৩২৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্যাশনশিল্পের প্রতিষ্ঠান, ১১৬টি। এ ছাড়া ছিল চামড়াজাত পণ্যের ৩৭টি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ৩৬টি, হস্তশিল্পের ৩৩টি, পাটজাত পণ্যের ২৯টি, হালকা প্রকৌশলশিল্পের ১৭টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৪টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের ৬টি, হারবাল পণ্যের ৪টি, জুয়েলারি পণ্যের ৪টি ও প্লাস্টিক পণ্য খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান।

ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়িগুলোর দাম ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মূল প্যাভিলিয়নের বাইরে তথ্যকেন্দ্রে কথা হলো এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলমের সঙ্গে। বললেন, ‘উদ্যোক্তারা প্রায় দুই বছর ধরে কোনো বড় উৎসবের আগে সেভাবে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে পারেননি। তাই অনেক পণ্য জমে গিয়েছিল। ভালো উদ্যোক্তারা ব্যাপক বিক্রি করছেন। আর এখান থেকে উদ্যোক্তারা প্রচুর পণ্যের অর্ডার পান। আমাদের এত ভর্তুকির লক্ষ্য এটাই। এইসব ছোট আর মাঝারি উদ্যোক্তারা যেন উপকৃত হন।’  

জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় অংশ নিয়েছে ৩২৫টি প্রতিষ্ঠান
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।