আড্ডা

.
.

আড্ডা আমার বেশ ভালোই লাগে। কারও কাছে আড্ডা অর্থহীন, আবার কারও কাছে বিশেষ গুরুত্ববহ। তবে এত যুক্তি দিয়ে মুক্তি খুঁজে আড্ডা মাপার লোক আমি নই। যাঁরা যুক্তি দিয়ে আড্ডার অর্থ খুঁজতে চান, তাঁরা বরং বাড্ডা গিয়ে নিজের চিন্তা আর যুক্তি উৎপাদনের কারখানা গড়ে তুলুন। আজ কথা বলব তিনজন মানুষের ত্রয়ী আড্ডা নিয়ে। আমি-বিশিষ্ট অকেজো মানবযন্ত্র, সঙ্গে জ্ঞান-প্রজ্ঞার দুই মহারথী রকিব ও বাকি ভাই।
আমাদের আড্ডার বিষয়বস্তু কখনো ঘুরতে চলে যায় রাশিয়ায়, কখনো আমেরিকার দালানকোঠায়, কখনো আবার বাংলার কোনো ঘর্মাক্ত মাঝির নৌকোর গলুইয়ের নিচে স্থান পায়। আড্ডার বিষয় হয়ে আসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে আহমদ ছফা, হ‌ুমায়ুন আজাদ কিংবা হ‌ুমায়ূন আহমেদ। কখনো আবার লেনিন, কার্ল মার্ক্স। কখনো আবার নিজেরাই হয়ে যাই আড্ডার অলিখিত বিষয়বস্তু।
আড্ডা চলে বেঞ্চে বসে, নদীর টলমল পানির দিকে নির্মোহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। কখনো আবার পিচঢালা রাস্তার ওপর দিয়ে জীবনানন্দের কবিতার মতো হাজার বছর ধরে পথ হাঁটার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি গিয়ে নিবদ্ধ হয় কোনো এক নোংরা ডাস্টবিনে। সমাজ, রাষ্ট্রের অসংগতি, গতি-প্রগতি—কত কিছুই না আসে এ আড্ডায়। কখনো রকিবের মুখের কথা নিজের মুখে টেনে নিয়ে মনে হয়, এই যাহ্‌! কাজটা ঠিক হলো না।
কখনো, বাকি ভাইয়ের তোলা কোনো চমৎকার বিষয়কে নিজের কথায় তলিয়ে দিয়ে মনে হয়, ধুত, কী পরিমাণ স্বৈরাচারী হয়ে যাচ্ছি আমি!
নিজে তো বিশুদ্ধ হতে পারি না। হাজার ত্রুটি নিয়েও এই ভালোবাসার মানুষগুলোর সঙ্গে পথ চলতে ভালো লাগে।
মাত্র কদিনের পরিচয়ে বাকি ভাই মানুষটা যে হৃদয়ের কতটা অংশ গ্রহণ করে ফেলেছেন, আমার ভালোবাসার রিজার্ভ ব্যাংক থেকে যে ভালোবাসার এক মস্ত অংশ দখল করে নিয়েছেন, তা কি বাকি ভাই জানেন...?

আর, রকিব কি জানেন আমার হৃদয়ের একটা অংশ পূর্বাচল প্লটের মতো তিনি ক্রয় করে নিয়েছেন। যে প্লট অন্য কেউ কোনো দিন গ্রহণ করতে পারবে না।

এই যাহ্‌! আড্ডা নিয়ে কথা বলছিলাম। একটু আবেগি হয়ে গেলাম বোধ হয়।

যাহোক আবার আড্ডার প্রসঙ্গে বলি। আসলে আড্ডা নামক বস্তু কোথা থেকে সৃষ্টি হলো কে জানে। তবে, আমাদের আড্ডা চলবে নদীর মতো। কখনো এই আড্ডার জল প্রবাহিত হবে দানিয়ুবে, কখনো আমাজান, কখনো নীল নদ, আবার কখনো প্রিয় বাংলার ব্রহ্মপুত্রের জলে।

বি. দ্র. আড্ডার কোনো ছবি নেই। এ যুগ তো আবার ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’র মতো আড্ডার ছলে সেলফি আর ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকার যুগ। এ ক্ষেত্রে আমরা না হয় সেকেলেই রয়ে গেলাম!

সৌরভ মাহমুদ

ময়মনসিংহ