আদর্শ ছেলেরা কই
পাঠকের সুখ–দুঃখ, হাসি–আনন্দ, পছন্দ, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ যে কোনো না বলা কথা শুনতে চায় মনের বাক্স। প্রতি সপ্তাহে পাঠকের পাঠানো সেসব লেখা থেকে নির্বাচিত কিছু লেখা আজ প্রকাশিত হলো এখানে
আম্মার জন্য উপলব্ধি
ব্যাচেলর মেসে রমজান কাটছে। শুরুর দিকে সঙ্গে এক সিনিয়র ভাই থাকলেও শেষের দিকে আমি একা। অর্ধেক মাস যেতে না যেতেই মেস ছেড়ে চলে গেছেন সেই ভাই। যার প্রধান কারণ হচ্ছে খাবার। যদিও কী খেয়েছি কিংবা খাচ্ছি সেটাতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যা খাচ্ছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট। অথচ বাড়িতে এর চেয়ে বহুগুণ ভলো খাবার পেলেও অভিযোগের কমতি থাকত না। বাড়িতে আম্মা আছেন, এখানে তো আম্মা নেই। আম্মা যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো খাবার রান্না করেন, তারপরও অভিযোগ থাকবে।
ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি ঈদের কদিন আগে। আম্মাকে একবারের জন্যও অবসর কাটাতে দেখলাম না। রাত দুটা বেজে গেলেও আম্মার রান্নাঘরের কাজ শেষ হয় না। ভেবেছিলাম হয়তো খেয়ে একেবারে নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবেন। আমি সাহ্রি খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে বের হয়েছি, আশেপাশের বাড়িগুলোতে এখনো তেমন কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। কিন্তু আম্মা তখন ধান ভানছেন। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখলাম। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে আম্মার দিন। সবারই তো ক্লান্তি থাকে, আম্মার কী ক্লান্তি নেই! মাঝেমধ্যে মনে হয়, আম্মাই হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে নিরীহ ব্যক্তি। যিনি নিঃস্বার্থভাবে টানা খেটে যান। তারপরও দিনশেষে প্রশংসার চেয়ে সমালোচনাটা বেশি শুনতে হয়।
আকাশ মুহাম্মাদ, হবিগঞ্জ
চলো নতুন করে শুরু করি
প্রিয় সিনকা,
মার্চের তপ্ত কোনো এক দুপুরে তুমি আমার জীবনে শীতল হাওয়ার পরশ নিয়ে জীবনকে উদ্দীপ্ত করলে। অথচ আরেক মার্চ পেরিয়ে যখন আমাদের স্বপ্নগুলো বেড়ে উঠছে তরতর করে, ঠিক তখন অহেতুক এক কালবৈশাখীর মতো আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছ তুমি। জানি না, আমার কি ভুল ছিল। প্রশ্ন করার মতো কোনো রাস্তাও নেই আমার কাছে। তাই মনের বাক্সের দ্বারস্থ হলাম। আশা করি তারা আমার এ কথা তোমার কাছে পৌঁছে দেবে। মনে আজও প্রশ্ন জাগে, আরেকবার কি নতুন করে শুরু করা যায় না?
জায়েদ, বগুড়া
খুব জানতে ইচ্ছে করে
নিমু, আপনাকে কতটা ভালোবাসি, আমি জানি না। আমি যে আপনাকে ভালোবাসি সেটা কোনো প্রাপ্তির আশায় না। আমাদের পরিচয় অনলাইন থেকে। তাই হয়তো আমাদের মধ্যে কিছুই হলো না। লোকে বলে, অনলাইনে আর যা–ই হোক সম্পর্ক হয় না। ভালোবাসা হয় না। আমার ভালোবাসা হয়েছে, তবে একতরফা। আপনাকে একনজর দেখার জন্য নীলফামারী থেকে ঢাকায় আসা এত সহজ হয়নি। যা–ই হোক, আপনাকে দেখার সাধ তো মিটেছে।
আমার একতরফা ভালোবাসায় কোনো পরিণতি নেই, তবে শান্তি আছে। আর এতেই আমার সুখ। কারণ, মানুষ কল্পনায় বেশি সুখী। তবে একটা বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমার ভেতর কী ভালোবাসার মত কিছুই ছিল না?
জয়া
সব ভালোবাসা কি প্রেম হয়
কেমন আছেন, বেস্ট ফ্রেন্ড? যতটুকু দেখেছি, যতটা জেনেছি, আপনাকে নিয়ে প্রশংসা করব এমন ভাষা হয়তো তৈরি হয়নি। আপনাকে অনেক ভালোবাসি। সব ভালোবাসার নাম প্রেম হয় না, কিছু ভালোবাসার নাম বন্ধুত্বও হয়। জানেন, আমার অনেক স্বপ্ন আপনাকে নিয়ে। যেদিন থেকে আপনার সঙ্গে পরিচয়, সেদিন থেকে আমার মধ্যে এক অন্য আমিকে খুঁজে পেয়েছি। যেদিন থেকে আপনার স্বপ্ন সম্পর্কে অবগত হয়েছি, সেইদিন থেকে নিজে একটা গল্প লিখেছি, আপনার স্বপ্ন পূরণের গল্প। কোনো এক দিন আমি আর আপনি দূরে কোথাও হারিয়ে যাব। তবে একটা কথা বলতে চাই, হাতটা যখন ধরেছো, সারা জীবনের জন্য ধরে রেখো।
তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড
আতিয়া মাহজাবিন, দক্ষিন সুরমা, সিলেট
আদর্শ ছেলেরা কই
ছোটবেলায় ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতা পড়েছি। শীতের সন্ধ্যায় মাটির চুলার পাশে মোড়ায় বসে পড়েছি চুলার আগুনের আলোয়। কবিতাটি পড়ে চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো ঠিকই, কিন্তু সেটা কুসুমকুমারী দাশের আদর্শ ছেলে হওয়ার তাড়নায় নয়। আমার মায়ের আদর্শ ছেলে হওয়ার প্রয়াসে। সেটার পেছনে আধশুকনা একটা কঞ্চি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছিল। কঞ্চির একপাশে মমতা, দরদ, ভালোবাসা, দায়িত্ব আর অন্যপাশে একচিমটি শারীরিক কষ্ট। ফলস্বরূপ গাল বেয়ে একটু নোনতা জল। সঙ্গে কড়া বক্তব্য ‘কত্তো সুন্দর কবিতা, খালি না পড়ার বাহানা।’ কবিতা মুখস্থ করার তাগিদে সেই জল শুকিয়ে গেলেও ‘আদর্শ ছেলে’ মনে রয়ে গিয়েছিল।
ব্যস! ওই পর্যন্তই। আদর্শ ছেলে হয়ে উঠেছিলাম ওই সময় পর্যন্তই। মায়ের মুখে কিছুটা হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম। নিজেও সে আনন্দে আত্মহারা হতাম। কই সেই সময়? কোথায় সেই আদর্শ ছেলেটির রূপে আমি? পরিবার বা সমাজের প্রয়োজনে কুসুমকুমারী দাশের আদর্শ ছেলেরা প্রস্তুত আছে কী? কই তারা?
মো. মঈনুল হক খান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়