আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সারা দিন

আশ্বিনের সকাল। ঝকঝকে আকাশ। পেজাতুলো মেঘেরছোটাছুটি। হলুদরাঙা দিন। ভাপসা গরম। তবু কে মানে বাধা, ‘ধুত্তরি ছাই, এ তো কিছুই না’। সুবজ লেকের পাড়ে সহস্র প্রাণের কোলাহল। বন্ধুদের কাছে পেয়ে সে কী উচ্ছ্বাস! আলিঙ্গনে যেন সেই বিদ্যালয়ের মাঠে ফিরে যাওয়া।
আরে সায়মা, আরে শান্তা কিংবা দোস্ত জুুবায়ের...কী খবর? এ রকম আবেগতাড়িত শব্দ কানে এসে ঠেকেছে বারবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্লান্তিহীন তারুণ্য। বই-খাতার বাইরে অন্য রকম দিন। অন্য রকম ভালো লাগা। যেন আজ হারিয়ে যেতে নেই মানা।

গত শুক্রবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নগরের ফয়’স লেকের কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে পুরো দিন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ছিল মেধাবীরা। প্রথম আলোর উদ্যোগে ও টেলিটকের সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন।
সকাল ১০টায় গেট খোলার কথা থাকলেও আগেভাগে এসে অনেকে হাজির। কারণটা কী? উত্তর জানা গেল মালিহা কবিরের মুখে, ‘রাইডে চড়তে হলে আগে না এসে উপায় নেই। এত্ত ভিড় হয়।’ ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে এখানে। মালিহার মতো আরও অনেকে একই পথের যাত্রী। অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রতিটি রাইড চড়া চাই-ই। এভাবেই ঘড়ির কাঁটা ১১টার ঘরে আসতেই শিক্ষার্থীর ভিড়ে গিজগিজ করতে থাকে পার্কের চারপাশ। কেউ চড়ছে রোলার কোস্টারে, কেউ বাম্পার কারে। আবার অনেকে দলবেঁধে উঠছে পাইরেট শিপে। প্রজাপতির মতো যেন এক রাইড থেকে ছুটছে আরেক রাইডে।
তখন দুপুর আড়াইটা। মাইক্রোফোনে শব্দ হতেই মঞ্চমুখী হলো শিক্ষার্থীদের স্রোত। কার আগে কে যাবে। মঞ্চের সামনের সারিতে বসতে না পারলে শিল্পীদের তো দেখা হবে না।
প্রথমে মঞ্চে আসে বন্ধুসভা চট্টগ্রামের বন্ধুরা। জাতীয় সংগীত ও ‘দুঃখটাকে দিলাম ছুটি’ গানটি গেয়ে সূচনা করেন মহাযজ্ঞের! এরপর প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর পরিচালনায় চলে আলোচনা পর্ব।

সবার অধীর আগ্রহ কখন ছাড়বে সুরের খেয়া। অবশেষে তরির পাল তুললেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা অরিন। শুরু করলেন সাড়া জাগানো সেই গান দিয়ে, ‘ভলোবাসি ভালোবাসি/ এর বেশি ভালোবাসা যায় না’। এরপর পরিবেশন করেন ‘ভলোবাসি আমি তোমায়’ গানটি। শেষ করেন ‘ওরে সাম্পানওয়ালা’ দিয়ে। এই গানের সঙ্গে যেন পুরো ফয়’স লেক নেচেছে। শিল্পীর সঙ্গে গলা মেলালেন সবাই।
এই ফাঁকে মাইক্রোফোন চলে গেল মঞ্চের নিচে। মেধাবীরা কি শুধুই পড়ালেখা করে, নাকি গান-আবৃত্তিতে কিছুটা দখল আছে? সঞ্চালক বিশ্বজিৎ চৌধুরী এমন প্রশ্ন ছুড়তেই লুফে নিল তারা। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে—মাইক্রোফোন হাতে পেয়ে সেটাই জানিয়ে দিল শ্রাবণী, জুবায়ের, আরজু, তাসনিম, প্রসুনরা। মেয়ে একজন গান করে তো ছুটে আসে আরেক ছেলে। অবশেষে প্রতিযোগিতা মুলতবি।

মঞ্চে আসেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা পুলক। এসেই দরাজ কণ্ঠে ধরেন ‘অন্তরে মাওলা তোমার ঘর’। ভাবের গানে কিছুটা নীরবতা এলেও তা ভাঙতে সময় লাগেনি। ‘এক আকাশে তারা’ ও ‘পাগলা হাওয়ার তোড়ে’ গেয়ে মাত করেন।

পুলকের পর ন্যান্সি মঞ্চে উঠতেই আরেক জোয়ার। তাঁকে দেখেই দর্শকসারি থেকে তাঁর গান গাওয়া শুরু হয়ে গেছে। নিজেও অভিভূত ন্যান্সি মেধাবীদের অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করেন তাঁর পরিবেশনা। একে একে গেয়ে শোনান ‘তুমি ভুলে যেয়ো না’, ‘বাহির বলে দূরে থাকুক’ ও ‘তোমাকে ছাড়া আমি কী নিয়ে থাকব’।
এবার মুলতবি প্রতিযোগিতা আবার শুরু। অবশ্য একটু ভিন্ন। গান নয়, আবৃত্তি। মেয়েদের একজন আবৃত্তি করে মাইক্রোফোন ছাড়তেই ছেলেদের একজন এসে একেবারে শুনিয়ে দিল স্বরচিত কবিতা। অবশেষে দুদলকেই বিজয়ী ঘোষণা করে সঞ্চালক প্রতিযোগিতার রাশ টানলেন। আবার মঞ্চে ফেরা। সঞ্চালক নাম বললেন না, শুধু একটু ধারণা দিলেন কে আসছেন মঞ্চে। এর মধ্যে হর্ষধ্বনি আর হুল্লোড়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেল।

মাইক্রোফোন হাতে নিলেন শিল্পী হূদয় খান। গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দর্শকসারিতে কেউ বসে নেই। গেয়ে শোনান ‘আড়ালে যে কে’, ‘মনভাঙা, মনগড়া’সহ চারটি গান। এরপর ব্যান্ডদল প্রমিথিউস মাতায় মঞ্চ।
অবশেষে রাশ টানেন সঞ্চালক। তারপর বাড়ি ফেরা...