এভা ডুভার্নে
ছবি: সংগৃহীত

কী একটা অদ্ভুত সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তোমরা আজ সমাবর্তন পাচ্ছ! আজ থেকে অনেক বছর পর যখন তোমরা পেছনে ফিরে তাকাবে, কী মনে পড়বে তোমাদের?

শিক্ষাজীবনের শেষ বছরটা ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে কাটানোর দিনগুলো মনে পড়বে?

নাকি এই ঘরবন্দী সময়, সঙ্গনিরোধ আর মহামারির প্রকোপে পড়ে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কথা মনে পড়বে?

অথবা মনে পড়বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর টেলিভিশনে দেখা—জনসমক্ষে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ ও ভিন্ন বর্ণের মানুষদের ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের দৃশ্য?

বর্তমান সময়ের এই যন্ত্রণা, এই ভয়গুলো কি তোমাদের মনে পড়বে?

হয়তো পড়বে। এগুলো ভোলা উচিতও নয়।

কিন্তু এর পাশাপাশি তোমাদের মনে পড়বে আরও কিছু কথা:

মনে পড়বে পরিবার আর কাছের মানুষদের সঙ্গে কাটানো একান্ত সময়ের কথা। নিজের জন্য সময় বের করে এমন কিছু করার কথা, যা কখনো করবে বলে ভাবোনি। মনে পড়বে এমন আরও অনেক উপলব্ধির কথা।

বিগত এক বছর আমাদের সবার জীবনে অনেক যন্ত্রণা, দুর্দশা আর কষ্ট বয়ে এনেছে। তবে তোমরা যারা আজ সমাবর্তন পাওয়ার মধ্য দিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছ, তাদের বলছি, বিগত এক বছর কিন্তু আমাদের অনেক ভালো কিছুও দিয়েছে। যেমন স্বচ্ছতা, ভিন্ন দৃষ্টিকোণ, আশা আর হাল না ছাড়ার তাগিদ। এই এক বছর এমন ভালো কিছু ব্যাপার ঘটেছে, যা আমাদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। ১২০ বছরের মার্কিন ইতিহাসে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। এবারের নির্বাচনেই নারী ও ভিন্ন বর্ণের প্রার্থীরা অন্যান্যবারের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিশ্বজোড়া মানুষ এত দিনে এসে স্বাস্থ্যকর্মী ও মাঠপর্যায়ে কাজ করা কর্মজীবীদের মূল্যায়ন করতে শিখেছে, তাদের এ সময়ের ‘নায়ক’ বলে স্বীকৃতি দিতে শিখেছে। মহামারি-পরবর্তী পৃথিবী হয়ে উঠছে নিরাপদ, হয়ে উঠছে আগের চেয়ে বেশি সামাজিক। মানুষ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক আন্দোলন কতটা জরুরি।

সর্বোপরি এই সময়টা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে, জীবন একেবারেই অনিশ্চিত। আর মনে রেখো, যেখানেই অনিশ্চয়তা, সেখানেই সুযোগের হাতছানি থাকে। নিজের সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ, নিজেকে মূল্যায়নের সুযোগ, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোয় প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ। অনিশ্চিত সময়েই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গন্তব্য—এসব আবার নতুন করে গুছিয়ে নেওয়া যায়। আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিটা সুযোগকে লুফে নেওয়া যায়।

আন্তরিকতার শক্তি খুব কম মানুষই উপলব্ধি করতে পারে। কোনো ব্যক্তি শারীরিকভাবে যত শক্ত-সামর্থ্যই হোক না কেন, অন্তরের কপটতা তাঁর সত্তাকে কখনো সত্যিকার অর্থে বেরিয়ে আসতে দেয় না। জীবনে যাঁরাই এগিয়ে গেছেন, দেখবে, সবার সাফল্যের মূলে সত্য বলার অথবা সত্য স্বীকার করার ব্যাপারটা ছিল, তাঁদের সবার মনেই আন্তরিকতা ছিল।

যতটা অকপটে তোমরা সততার চর্চা করবে, সত্য ততটাই সহজ হয়ে উঠবে তোমাদের জন্য। সততা, আন্তরিকতা, গভীরভাবে জীবনকে উপলব্ধি করা, অনুভূতিগুলো অকপট প্রকাশ করা এবং সংযত আচরণের চর্চা তোমাকে আর তোমার জীবনের লক্ষ্যের মধ্যে সেতুর মতো সংযোগ ঘটাবে।

তাই আজ যে ডিগ্রি তোমরা পাচ্ছ, আশা করব এটা তোমাদের সততার চর্চাকে আরও বেগবান করবে। এই ডিগ্রি তোমাদের মনে করিয়ে দেবে, অনিশ্চয়তাও তোমাদের চেষ্টাকে দমাতে পারেনি। প্রত্যাশা করব, আজ থেকে তোমরা যে নতুন যাত্রা শুরু করছ, এই যাত্রায় যেন পৃথিবীর তাবৎ ইতিবাচক শক্তি তোমাদের সঙ্গী হয়।

তোমাদের জন্য হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে অভিনন্দন রইল। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ো। যেখানেই যাও না কেন, নিজের সেরাটা দিয়ো।

ইংরেজি থেকে অনুদিত

সূত্র: ডেডলাইনডটকম