আপনারও গন্তব্য হতে পারে এডিসন গ্রুপ

দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান দ্রুত নানা ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যবসার পরিধি বাড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্যতম এডিসন গ্রুপ। এই গ্রুপের অধীনে আছে নয়টি প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ১ হাজার ৬০০ কর্মী। এখানে প্রতিনিয়ত জনবল দরকার হচ্ছে। এডিসন গ্রুপ তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পদে তরুণদের বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ-প্রক্রিয়া, তরুণদের কাজের সুযোগসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে কথা বলেছেন এডিসন গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক আর আহমেদ পাশা।
আহমেদ পাশা জানালেন, এডিসন গ্রুপের অধীনে আছে সিম্ফনি মোবাইল ফোন, এডিসন প্রপার্টিজ, এডিসন ইলেকট্রনিকস, মোবাইল ফোন অ্যাপ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মো ম্যাজিক, এডিসন লজিস্টিকস, এডিসন পাওয়ার এবং সিমেন্স। সম্প্রতি লেদার অপারেশনস যুক্ত হচ্ছে এই গ্রুপের অধীনে। আর এসব আলাদা প্রতিষ্ঠানে বছরজুড়েই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। যাঁদের একটি অংশ হচ্ছেন তরুণেরা।
এডিসন গ্রুপ মোবাইল ফোন সিম্ফনির সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিম্ফনিতে সরাসরি চাকরি করেন প্রায় এক হাজার কর্মী। সিম্ফনির নিজস্ব আউটলেট আছে ১২০টি। যেগুলোর কার্যক্রম সরাসরি সিম্ফনি থেকে পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া সিম্ফনি মোবাইলের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার ও টাচ পয়েন্ট আছে ৬৮টি। এখানে দুই পদের লোক বেশি নেওয়া হয়। একটি হচ্ছে কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ, আরেকটি হচ্ছে রিপেয়ার ইঞ্জিনিয়ার। যেকোনো বিষয়ে পড়াশোনা শেষে কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে এখানে চাকরি পাওয়া যায়। তবে রিপেয়ার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা থাকতে হয়।
আহমেদ পাশা বললেন, এডিসন গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেলস, মার্কেটিং, সাপ্লাই চেইন, কাস্টমার কেয়ার, অ্যাডমিন ও এইচআর, ডিস্ট্রিবিউশন, কমার্শিয়াল, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি-এসব বিভাগে লোক নেওয়া হয়। কোনো সময় এসব পদে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞদের নেওয়া হলেও তরুণদের দারুণ কাজের সুযোগ আছে এসব বিভাগে। এখানে অ্যাডমিন, কাস্টমার কেয়ার ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্সে যেকোনো বিভাগ থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি পেতে পারেন। তবে অন্যান্য বিভাগে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পাস করেছেন এমন তরুণদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে আলাদা বিজনেস ইউনিট। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে পাস করেছেন এমন তরুণদের নেওয়া হয় এখানে।
এডিসন গ্রুপে তরুণদের জন্য ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি নামের একটি পদ আছে, যেখানে প্রতিবছর কয়েকজন তরুণকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এডিসন গ্রুপে ইনটার্নের সুযোগ আছে। এখানে ইনটার্ন করে এ বছর তিনজন তরুণ নিয়োগ পেয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানেই।
নতুনদের নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় বেশি দেখেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ পাশা জানালেন, তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেন তাঁরা। সংক্ষেপে কেএসএ। এক. নলেজ, দুই. স্কিল আর তিন. এটিচিউট। এই তিনটির সমন্বয় ভালো হলে একজন কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যেহেতু এখন দলগতভাবে কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাই সাক্ষাৎকারে দেখা হয় একজন প্রার্থীর এটিচিউট কতটা ইতিবাচক। দলগতভাবে কাজ করতে গিয়ে তিনি কতটা সফল হবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে এ বিষয় মাথায় রেখে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। যে প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে কর্মীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বোঝা যায়। ইতিবাচক মনোভাব আছে এমন প্রার্থী সব সময় এগিয়ে থাকেন বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া নতুনদের নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি তাঁর বক্তৃতা, স্কাউট, খেলাধুলা, সভা সেমিনারে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন, এমন অভিজ্ঞতা আলাদাভাবে বিবেচনায় আনা হয়।
এডিসনের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আহমেদ পাশা বললেন, ‘আমরা কর্মীর সঙ্গে ইতিবাচক আচরণ করে তাঁর মধ্যকার প্রতিভা বের করার কাজ করছি। এ ছাড়া অফিসে যাওয়া-আসার ব্যাপারে এদিক-সেদিক হলে এ কারণে কর্মীদের সঙ্গে নেতিবাচক ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়া বছরে কিছুটা আলাদা পরিবেশ অন্তত ১২টি সেমিনার বা ওয়ার্কশপ করে কিংবা বিভিন্ন দিবসে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মীদের মনোভাব চাঙা রাখা হয়। আমরা মনে করি, কর্মীদের সঙ্গে ইতিবাচক ব্যবহার করেই তাঁর মধ্যকার সেরা পারফরম্যান্সটি বের করার চেষ্টা করি। এই কাজে আমরা সফলও হয়েছি। এতে কর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি অনুগত থাকে। মনের আনন্দে তাঁরা কাজ করুক, আমরা সেই পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। কর্মীর মনোভাব বুঝে আচরণ করা উচিত। অযথা কর্মীদের ওপর চাপ দেওয়া মোটেই ইতিবাচক ফল আনেনি বলে মনে করেন এই মানবসম্পদ কর্মকর্তা। আহমেদ পাশা বললেন, অভ্যন্তরীণ উদীয়মান কর্মীদের জন্য এখানে রয়েছে পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের ব্যাপক সুযোগ। বেশির ভাগ সময় অভ্যন্তরীণ কর্মী বাহিনী হতেই উচ্চ পর্যায় বা ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। যদি অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তার স্কিল পজিশনের সঙ্গে একান্তই ম্যাচ না করে, তখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা পূরণ করা হয়, এ ক্ষেত্রে রেলিভেন্ট স্কিল, এডুকেশন, এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট, রিয়েল অ্যাচিভমেন্ট, লিডারশিপ ক্যাপাসিটি এবং দলগত কর্মে যথাযথ আছে কি না, তা দেখা হয়।
এডিসনের বেশির ভাগ ম্যানেজমেন্ট সদস্য গ্রুপের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, এ গ্রুপের মালিকপক্ষ বিশ্বস্ত এবং কর্মীদের প্রতি আলাদা নজর দেয়। এডিসন গ্রুপের কর্মীদের নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জব পোর্টাল এবং নিজেদের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা থাকে বলে জানালেন আহমেদ পাশা।