আপ্যায়নে আয়োজনে...

হালকা নাশতা, মূল খাবার, মিষ্টান্ন—সবই থাকা চাই আপ্যায়নে। ছবি: নকশা
হালকা নাশতা, মূল খাবার, মিষ্টান্ন—সবই থাকা চাই আপ্যায়নে। ছবি: নকশা

বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে খাবারটাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। আপনার পরিবেশিত খাবার খেয়ে অতিথির তৃপ্তি না হলে কিন্তু পুরো আয়োজনটাই বৃথা। তাই কী পরিবেশন করছেন, সে নিয়ে থাকা চাই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। 

‘যেকোনো পার্টির আয়োজনে কিছু কিছু খাবারের প্রস্তুতি আগের দিন থেকে করা যেতে পারে। যেমন মাংস মেরিনেট, মসলা বাটা, পেঁয়াজ বেরেস্তা করে রাখা ইত্যাদি।’ বললেন রান্নাবিদ সিতারা ফিরদৌস। 

‘পার্টির ধরন অনুযায়ী খাবারের পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন বন্ধুদের আড্ডা, বাচ্চাদের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী ইত্যাদি আলাদা উপলক্ষে খাবারের ধরনটা আলাদা হতে পারে। সাধারণত যেকোনো ধরনের পার্টির আয়োজনে প্রথমে হালকা নাশতার সঙ্গে যেকোনো পানীয় পরিবেশন করতে হয়। এরপর আসে মূল খাবার, মিষ্টান্ন পরিবেশনা।’ জানালেন রান্নাবিদ আতিয়া আমজাদ। 
পার্টির আয়োজনে খাবারের মেন্যুতে কী কী খাবারের আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রান্নাবিদ সিতারা ফিরদৌস ও আতিয়া আমজাদ।
জেনে নিন
. সময় অনুযায়ী প্রথমে হালকা নাশতা দিতে হবে। শীতের সময় চিকেন নাগেট, চিকেন বল, আলুর চপ, ওয়ান বাইট শাশলিক, স্প্রিং রোল ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে খাবারগুলো প্রতিটি আলাদা করে টুথপিকে লাগিয়ে দিতে হবে। যাতে সবাই একটা একটা করে হাতে নিয়ে খেতে পারেন। এর সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন নানা রকম সস। ধনেপাতা-কাঁচা মরিচের চাটনি, টমেটোর চাটনি ইত্যাদি থাকতে পারে। 

. বিভিন্ন ধরনের পানীয় যেমন নানা রকম মৌসুমি ফলের রস রাখা যেতে পারে।
. এরপর দিতে হবে মূল খাবার। এ অংশে ফ্রায়েড রাইস, বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, চিংড়ি পোলাও, ইলিশ পোলাও, সবজি পোলাও, সাদা পোলাও, ভুনা খিচুড়ি এসবের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বয়স্কদের জন্য সাদা ভাতও রাখা যেতে পারে। রাইসের পাশাপাশি পরোটা, নান রুটি, পাস্তা কিমা, চাওমিন এগুলোর আয়োজনও করা যেতে পারে। রাইসের সঙ্গে বেকড পটেটোস, স্যুপ এগুলোও দেওয়া যেতে পারে।
. মূল খাবারের সঙ্গে নানা রকম সালাদ রাখতে পারেন। পশ্চিমা ধাঁচের মেনু হলে কোলস্লো, সুইট কর্ন সালাদ, ফ্রুট সালাদ, চিকেন সালাদ, কাজুবাদামের সালাদ, শসা টমেটোর সালাদ, পনিরের সালাদ দেওয়া যেতে পারে।
. গরুর মাংসের পদে চিলি বিফ, শ্রেডেড বিফ, কাটা মসলার মাংস, বিফ ভিন্দালু করতে পারেন। আর মুরগির মাংসের রোস্ট, ঝাল ফ্রাই, কোরমা, ফ্রেজি, গ্রিলড, তন্দুরি, বেকড চিকেন করা যেতে পারে। মাছের বল কারি, কোফতা কারি, চিংড়ির মালাই কারি, সরষে ইলিশ, ফিশ ফিলে, লইট্যা ফিশ ডিপ ফ্রাই এসব পদও থাকতে পারে।
. আজকাল অনেকে ওয়ান পট ডিশও পরিবেশন করেন। যেমন সবজি-মাংস সব দিয়ে চাওমিন বা পোলাও। এতে বেশি পদ রান্না করার ঝামেলা থাকে না। বন্ধুদের ঘরোয়া আড্ডায় এমন আয়োজন থাকতে পারে।
. বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে কোফতা মালাই কারি, চপ, থাই বা চায়নিজ ভেজিটেবল তৈরি করা যেতে পারে।
. পনির দিয়ে পনির শাশলিক, পনির মাসালা, কড়াই পনির, পালং পনির করতে পারেন। 
. বাচ্চাদের জন্মদিনের পার্টিতে ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, গার্লিক বা জিঞ্জার ব্রেড, কোলস্লো, ফলের রস, কেক, মিল্ক শেক করা যেতে পারে।
. পার্টিতে খাবার পানির সরবরাহ বেশি থাকতে হবে। এ ছাড়া বোরহানি, কোমল পানীয়, লাচ্ছির (সুইট/সল্টেড) ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
. এ ছাড়া মিষ্টি খাবার হিসেবে ফিরনি, দই, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, জর্দা, পোলাও, নানা রকমের হালুয়া, পুডিং, আইসক্রিম, কাপ কেক, ব্রাউনি কেক এগুলো থাকতে পারে।
. বয়স্কদের জন্য মাছের ঝোল, দেশি ধাঁচের সবজি, সরষে ইলিশ—এমন কিছু পরিকল্পনা করতে হবে যেন তাঁরাও তৃপ্তি করে খেতে পারেন। আবার শিশুদের জন্য কম ঝাল-মসলা দিয়ে যেকোনো একটা পদ করতে পারেন।
. খাবার পরিবেশনের সময় খেয়াল রাখুন, খাবারগুলো যাতে সব অতিথির হাতের নাগালে থাকে। এ ছাড়া প্লেট-গ্লাস, ছুরি-চামচ সব পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা চাই।
. হাতের কাছে ময়লা ফেলার বাক্স, হাত মোছার তোয়ালে, টিস্যু পেপার ইত্যাদি রাখুন। হাত ধোয়ার জন্য প্রয়োজনমতো সাবান রাখুন।
গ্রন্থনা: নাঈমা আমিন