আবার চার ছক্কা হইহই

দিনের রোদের আগুন বিকেল নামতেই হাওয়া। আকাশে মেঘ গুড় গুড়। প্রশান্তি যেন একেবারে ষোল আনাই। এর মধ্যে ফিরে এল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উত্তেজনা। কদিন আগে শেষ হওয়া বিশ্বকাপের রেশ যে কাটেনি তা টের পাওয়া গেল হাড়ে হাড়ে। টোকা দিতেই যেন মাঠের সেই উত্তাপ আবারও ছড়িয়ে পড়ল দর্শকদের মধ্যে।
হবেই তো! শহরের মোড়ের ফ্ল্যাশ মব যে মঞ্চে। ‘চার ছক্কা হই হই/ বল গড়াইয়া গেল কই’ গানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৃত্য শুরুতেই জামিয়ে দেয় অনুষ্ঠান।
গত বুধবার বিকেলে নগরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তমঞ্চে বসে প্রথম আলো আয়োজিত কোয়ালিটি-আলোকিত বিশ্বকাপ কুইজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। শুধুই কী পুরস্কার! তিন ঘণ্টা দর্শকদের মাতিয়ে রাখে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উত্তেজনা পত্রিকার পাতার মাধ্যমে পাঠকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুইজের আয়োজন করেছি। সবার বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
বিশ্বজিৎ চৌধুরীর বক্তব্যের পর নামে সুরের ধারা। মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী রাজীব ভট্টাচার্য। শুরু করলেন ব্যান্ডদল সোলসের সেই গান দিয়ে—‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’। এরপর তো জড়ো করলেন শ্রাবণের মেঘ। ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’ গানটি গেয়ে মঞ্চে ডেকে নেন চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠের শিল্পী চৈতি মুৎসুদ্দিকে। এবার শুরু হলো দ্বৈত গান। তাঁদের কণ্ঠে ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানটি যেন দর্শকদের নিয়ে গেল বাংলা ছায়াছবির স্বর্ণযুগে। এরপর ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা’ গেয়ে তাঁরা শেষ করেন দ্বৈত পরিবেশনা।

মাইক্রোফোন হাতে নিলেন চৈতি। গাইলেন, ‘শত জনমের স্বপ্ন আমার’। এরপর গেয়ে শোনান ‘কইলজ্যের ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোঁয়ারে’। চৈতির সঙ্গে গলা মেলালেন দর্শকেরাও।
এদিকে এত আয়োজনেও কিছু দর্শকের চেহারায় অস্থিরতা। ক্ষণ গুনছেন কবে যে শুরু হবে ড্র। অবশেষে মঞ্চে তোলা হয় ড্রয়ের বাক্স। হাফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা। প্রথমেই তোলা হয় প্রথম পুরস্কারের কুপন। নাম ঘোষণার সময় এমন কোলাহল মুখর স্থানটিও যেন নীরব হয়ে গেল। ঘোষণা এল প্রথম পুরস্কার বিজয়ীর নাম দেলোয়ার হোসেন। নাম শুনেই দেলোয়ারের ভোঁ দৌড় মঞ্চে। ২৪ ইঞ্চির এলইডি টেলিভিশন তাঁর হাতে তুলে দেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সানোয়ারা গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) জাহিদুল ইসলাম।
এবার মঞ্চে আসে স্কুল অব ফোক ডান্সের শিল্পীরা। ‘হূদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দিব না’ গানের সঙ্গে নৃত্যশিল্পী তরুণ চক্রবর্তী ও নাচো বাংলাদেশ নাচোর শিরোপা জয়ী সূচনা বণিকের নাচ মুগ্ধ করে দর্শকদের।
এ ছাড়া সহশিল্পীদের পরিবেশনাও ছিল চমৎকার। এরপর একে একে তোলা হয় কুইজের আরও ১২টি পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহানগর ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শায়েস্তা খান। কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো ইস! আর একটু হলে আমারটা হতো—এমন আক্ষেপ দেখা গেছে দর্শকদের মধ্যে। অনুষ্ঠানের সমাপনী রেশ টানতেই শুরু হলো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। দর্শকেরা বাড়ির পথ ধরলেন জমজমাট আয়োজনের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।