আমাদের কাশবন

আমাদের কাশবন
আমাদের কাশবন

যখন কাশফুলের সময় শুরু হয়, পুরো ক্যাম্পাস কাশফুলে ভরে যায়। মাঝেমধ্যে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাইকে ডেকে ঘোরানো যায়। একাডেমিক ভবন থেকে কাশবনটা একটু দূরে। দেখে মনে হয়, দূরে বিশাল কোনো বন। যখন খুব বৃষ্টি হয়, কিংবা খুব বাতাস হয়, মনে হয় ঘন কোনো বনের চূড়ায় সাদা রঙের ঢেউ চলছে। যতই তাকিয়ে থাকি মনে হয় যেন, নতুন কোনো দৃশ্য দেখছি। একদিন এই ঢেউ দেখতে দেখতে ক্লাসের ২০ মিনিট পার হয়ে যায়। অথচ আমাদের কয়েক কদম দূরেই ক্লাসটা হচ্ছিল। যখন হুঁশ হয়, হুড়মুড় করে ক্লাসে ঢুকি। সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দোতলার জানালায় যখন কাশবনটা দেখি, নিচের জগৎটা যেন অন্য এক জগৎ। সাদা কাশফুল থেকে রোদ ঠিকরে পড়ে। বিকেলবেলার ক্যাম্পাস এই সময়টায় অতুলনীয় লাগে। যদি বৃষ্টি না হয় আমাদের সঙ্গী থাকে একটা বিশাল পরিষ্কার নীল আকাশ, সাদা মেঘের নানা রকম ভাস্কর্য, একটা জাদুতে ভরা বাতাস আর অবশ্যই কাশফুল। একবার আমি, অনু, সঞ্চি হাঁটতে হাঁটতে খেলার মাঠের কাছে চলে এলাম। রাস্তার এ পাশে ফুটবল চলছে, ও পাশে কাশফুলের দোলাদুলি চলছে। ছেলেদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে কাশফুল দেখাটা অনেকেই ন্যাকামি ভাববে। তাই আমরা কাশবনের একটু ভেতরে চলে গেলাম। শন শন শব্দে খেলার মাঠের হই-হুল্লোড় মনে হলো অনেক দূর থেকে আসছে। বাতাসের তোড়ে কাশফুল ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের চারপাশে। আমরা তিনজন যেন সম্মোহনের জালে আটকা পড়লাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, তাই অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমরা বেরিয়ে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একপাশে দুটো বড় বিলের মতো আছে। ওই জায়গাটাকে সবাই বলি ‘ময়নাদ্বীপ’। তো সেই ময়নাদ্বীপে গিয়ে দেখি বড় বিলটার দূরের ওই পার থেকে শুরু করে এই পার পর্যন্ত কাশবনের প্রাচীরঘেরা। এর যেন আর শেষ নেই।
কাশফুল ছিঁড়ে একেকজনের নাকে-মুখে ঢোকানো, তলোয়ার-তলোয়ার খেলা, ছবি তোলা, এত কাশফুল রেখে একটা নিয়েই সবাই টানাটানি-মারামারি। কেউ দেখলে তখন আমাদের পাগল ভাববে। কিন্তু সত্যি সেটা অন্য দুনিয়া। সেখানে থাকে শুধু নীল আকাশ, সাদা মেঘ, কাশফুল, তার সঙ্গে আমি আর আমার প্রিয় বন্ধুরা।
নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি