মন খারাপের দিন
১৬ জুন আমি যখন প্রথম আলোতে প্রকাশিত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সন্তানের লেখা ‘বাবা তুমি কেমন আছ’ পড়ছি, তখন চোখের কোণে বারবার পানি জমে ঝাপসা হচ্ছে পত্রিকার লেখাগুলো।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের মেয়ের লেখা ‘আব্বুর পড়ার ঘরটা অন্ধকার দেখি’ যখন পড়ছি, তখন শুধু চোখের পানি মুছে নিচ্ছি তা নয়, একজন বাবা তার সন্তানকে কতটা ভালোবাসে, তা মনের অতল গভীর থেকে বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি। লেখার শেষ অংশটুকু পড়ার পর মনে হলো— বাবাকে হারানোর পর বোঝা যায়, সন্তানও বাবাকে কত ভালোবাসে।
আমার নিজের বাবা এখনো বেঁচে আছেন। আমি নিজেও দুই সন্তানের বাবা। আমি সন্তান হিসেবে অনেক সৌভাগ্যবান। বাবার সঙ্গে যখনই দেখা হয়, বুকে জড়িয়ে ধরে বাবা মুখে চুমো দেন। বিদায় নেওয়ার সময় দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে চুমো দেন। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে মা বাবাকে অনেকবার বলেছেন ‘সন্তান বাইরে থেকে আসামাত্র জড়িয়ে ধোরো না।’ কিন্তু বাবা বলেন, ‘করোনা সন্তানকে ভালোবাসা আটকাতে পারবে না।’
আমার মনে বারবার একটা প্রশ্ন এসে ভিড়ছে। আমি এত সৌভাগ্যবান (বাবা আছেন) হয়েও অন্যের বাবা হারানোর লেখা পড়তে গেলে চোখে পানি ধরে রাখতে পারি না কেন?
মো. জহুরুল হক, যশোর।
আমার বন্ধুটা
আমার মা একজন শিক্ষিকা। মায়ের স্কুলেই একবার বিশাল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আমি আবৃত্তিতে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানেই একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হই। কিন্তু সে পড়ত অন্য স্কুলে। ক্লাস ফোরে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আরেক স্কুলে ভর্তি হলাম। সেখানে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে আবার দেখা হয়েছিল। বন্ধুত্ব হয়েছিল। একদিন দেখি মেয়েটি আমার ব্যাগে কী যেন দেখছে। যদিও ওর কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল। সেদিনই ওর সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ শেষ করে দিই। একসময় এ ঘটনা স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী বানোয়াটভাবে অন্যদের বলতে শুরু করল। দোষী সাব্যস্ত হলাম আমি। আমি সেসব ভুলে যেতে চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। কারণ, এই ঘটনার পর থেকে আমার অন্য বন্ধুরাও নানা কৌশলে আমাকে এড়িয়ে চলত। এখন আমার শুধু একটাই বন্ধু, আমার স্কুলটা। যদিও কারও কারও সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। তারাও শুধুই ক্লাসমেট। করোণার কারণে কত দিন স্কুলটাকে দেখি না। তবে এখন অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে স্কুলে যাই। স্কুলের মাঠের ছোট ছোট ঘাস, গাছগুলো বড় হয়েছে। তাদের ধরে দেখি, ভালো লাগে।
সানজিদা এনামুল, চট্টগ্রাম।
খুঁজে ফিরি
জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে ফেলে আসা দিনগুলোর অতিপরিচিত মুখগুলো খুব মনে পড়ে। বিষণ্নতায় মনটা ভরে যায়। এখন তারা কে কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই জানা নেই। অনেকেই হয়তো এখনো সংসার নামক জীবনের গণ্ডিতে দিনাতিপাত করছে, আবার কেউ হয়তো পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। সে সময় এখনকার মতো যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। কাজেই আমরা পরিচিত মানুষগুলো এখন পরস্পরের কাছে ঠিকানাবিহীন।
তেমনি আমার এক প্রিয় ছাত্রী ‘কৃষ্ণ দে’। সেই ১৯৭৫-৭৬ সালে সে গাইবান্ধা শহরের ব্রিজরোড কালীবাড়ি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। যত দূর জেনেছিলাম, তার বাবা গাইবান্ধা মহিলা কলেজের করনিক ছিলেন। অনেক দিন পর, সম্ভবত ১৯৮২ সালে হঠাৎ করেই একদিন গোবিন্দগঞ্জে দেখা হয়েছিল। তখন হয়তো সে গবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিল। পরিবারের সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জেই থাকত। জানি না এখন সে কোথায় আছে, কেমন আছে। ঠিকানা পেলে একবার দেখা করার ইচ্ছা ছিল।
বিলু।
আত্মার ভাই
নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অনেক কষ্টের। আজ প্রায় দেড় বছর হতে চলল স্কুলের বেতন বন্ধ, কারণ করোনা মহামারি। আমি একজন প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। অথচ একটি মানুষ মহামারির সময় আমাকে প্রতি মাসে অল্প করে খাবার খরচের টাকা পাঠাতেন। একজন মানুষ কোনো প্রচার ছাড়া এভাবে অন্য মানুষকে মমতা বিলাতে পারে! সতি৵ই অবাক করার মতো বিষয়। আবিদ করীম স্যার এভাবে আমার মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ ১২টি বছর ধরে। আর তা না হলে আমি হয়তোবা পৃথিবী থেক চলেই যেতাম।
আমাকে সব সময় যে বড় ভাইয়ের স্নেহ ও শাসনে ভরিয়ে দেন তিনি। প্রথম আলোর একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি। তাই ভাবলাম তাঁকে নিয়ে একটা চিঠি লিখি তাঁরই প্রিয় পত্রিকায়। প্র অধুনার মনের বাক্সে যদি চিঠিটা ছাপা হয়, তাহলে তিনি কোটি টাকার খুশি হবেন জানি। যাঁর ভেতরে আমি দেখেছি সততা, সমতা ও শাসনের সুন্দর রূপ। মহামারিতেও ভাই সব সময় আমার খোঁজ নিয়েছেন ফোন করে। ওনার স্নেহমাখা দরদি কণ্ঠে নিজের অসুখের যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়েছে। আজ আমি পুরো পৃথিবীকে বলতে চাই, ‘মুন্না ভাই’ (ডাকনাম), আপনি আমার রক্তের কেউ নন, কিন্তু আপনি আমার আত্মার বড় ভাই।
সালেহ বায়েজীদ, নরসিংদী।