আমার প্রিয় গান

গানের প্রতি আমার ভালোবাসাটা বাড়াবাড়ি রকমের। প্রথম পছন্দ শাস্ত্রীয় সংগীত। এ ছাড়া গজলের প্রতি রয়েছে অসম্ভব ভালো লাগা। বিশেষত জগজিৎ সিং। তাঁর গাওয়া প্রায় সব গানই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে, বেশি ভালো লেগেছে মির্জা গালিবের লেখা গজল নিয়ে যে অ্যালবামটা করেছেন, সেটা। আবার ভিমসেন যোশী আর শোভা গুর্তুর গায়কিও অসাধারণ! ঠুমরির ক্ষেত্রে পছন্দ ওস্তাদ রশিদ খাঁ। ‘ইয়াদ পিয়া কি ...’ গানটি প্রথম গেয়েছিলেন ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ। সম্প্রতি সেটা শুনেছি রশিদ খাঁর কণ্ঠে। না, কোনো রেকর্ডে নয়, সরাসরি। কিছুদিন আগে ঢাকায় বেঙ্গল আয়োজিত যে শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব হলো, সেখানেই শুনেছি তাঁর গান। এই উৎসবে প্রতি রাতের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলাম আমি আর আমার স্ত্রী। আমার স্ত্রীও গান খুব ভালোবাসে। মূলত গানে গানেই ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব।
পঞ্চাশ-ষাটের দশকের হিন্দি গান পছন্দের ক্ষেত্রে আমাদের দুজনের দারুণ মিল। আমরা একসঙ্গে আশা ভোঁসলে, মোহাম্মদ রফিসহ অনেক শিল্পীর গান শুনেছি পরিচয়ের শুরুতে। আর গান শুনতে শুনতেই আমাদের যৌথ পথচলার শুরু।
তবে, শুধু রাগপ্রধান গান বা পুরোনো দিনের হিন্দি গান-ই নয়, পছন্দের ঝুলিতে আধুনিক বাংলা গানও রয়েছে। অনেক শিল্পীর গানই পছন্দ। কাকে ছেড়ে কার নাম বলি! শাহনাজ রহমতউল্লাহর, সামিনা চৌধুরী আর ফাহমিদা নবীর গানের ভীষণ ভক্ত আমি। শাহনাজ রহমতউল্লাহর ‘খোলা জানালায়’, সামিনা চৌধুরীর গাওয়া ‘ওই জাদুটা যদি সত্যি হয়ে যেত’ আর ফাহমিদা নবীর ‘কাচে গড়া মন গেল...’— এই তিনটা গান অসম্ভব পছন্দ।
তবে, গান শোনার শুরুটা রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে—সেই শৈশবে, মামাবাড়িতে। সে বাড়িতে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা ছিল। কলকাতার পুরোনো বাড়িগুলোতে যেমন ছিল, তেমনি! গানবাজনা, সিনেমা, শিল্প-সাহিত্য—এই নিয়েই ছিল আমার মামাদের জগৎ। তো, মামা সাদী মহম্মদের কণ্ঠে প্রথম রবীন্দ্রসংগীত শুনি। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অথবা রেকর্ডিংয়ে যেতাম। আবার বাড়িতেও সারাক্ষণ ক্যাসেট প্লেয়ারে রবীন্দ্রসংগীত শুনতাম। সেই থেকে রবীন্দ্রনাথ আজ অবধি সঙ্গেই আছেন। আসলে, বাঙালি জীবনযাপনের যত দিক আছে, এই যেমন—বৃষ্টি, বসন্ত, ভালোবাসা, ভয়, দর্শন—সবই আছে রবীন্দ্রনাথে। তাঁর বিচরণ সব জায়গায়। আমাদের চারদিকজুড়ে রয়েছেন তিনি। সংযুক্ত করে রেখেছেন তাঁর গান দিয়ে। তবে, সুরের চেয়ে তাঁর গানের কথা বেশি পছন্দ আমার। আবার তাঁর গানের সুরেরও কত রকমফের। কখনো আইরিশ সুরে, কখনো সাঁওতালি, বিহুগীত, কখনো বাউল। তাঁর একটা গান আমার বেশ পছন্দ—‘সকলই ফুরাল স্বপনপ্রায়’। ভীষণ ঋদ্ধ তাঁর গানের সুর। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে আমার কিছু ভাবনা রয়েছে। যেমন, প্রায়ই মনে হয়, তাকে নতুন করে পরিবেশন করা প্রয়োজন। কথা আর সুর ঠিক রেখে। আমার বিজ্ঞাপনে, ইভেন্টসে নতুন করে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করতে চাই। তাই ভাবতে বসেছি কেমন করে করব। আসলে, একটু সময় নিয়েই করছি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভাবতেও তো সময় লাগে!
প্রতিদিনই রবীন্দ্রসংগীত শোনা হয়। সময়ে বা অসময়ে। হয়তো গাড়িতে চলতে চলতে অথবা বাড়িতে। তবে, যা সব সময়ই করি, তা হচ্ছে, সকালে অফিসে ঢুকেই কিছুক্ষণ গান শুনি। রাগপ্রধান গান। পদ্মপ্রভাব বলে একটা কথা আছে না! সকালে ঠিকঠাক রাগ শুনলে আমার দিনটা সম্পূর্ণ অন্য রকম হয়ে যায়। সারাটা দিন সতেজ থাকি। আর রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দীর্ঘ সময় গান শুনি।
আবার কখনো আড্ডার দলে গেলেও গান শোনা হয়। আমাদের একটা গ্রুপ আছে ‘হাহাহিহি’ নামে। সেখানে অনেকেই সংগীতশিল্পী। তাঁদের কণ্ঠে শুনি। আবার দেশের বাইরে থেকে যেসব শিল্পী আসেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয় গান গাওয়ার জন্য। সব মিলিয়ে গানের জগতেই বিচরণ করছি সারাক্ষণ!
অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার