হিমু, রুপা ও শুভ্র হাজির
আমিই হিমু
১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের নবম প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখকের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হিমু, রুপা ও শুভ্র। অনেক তরুণ বইয়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে ফেরেন। কিন্তু বাস্তবেই যাদের নাম হিমু, রুপা কিংবা শুভ্র, তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন? এখানে পড়ুন রুকুনুজ্জামান হিমুর অভিজ্ঞতা।
আমি হিমু। নামটি আমার মায়ের দেওয়া।
আমি তখন ছোট। ক্লাস ওয়ান বা টুতে পড়ি। আমাদের এলাকায় এক বড় ভাই ছিলেন, যিনি প্রচুর বই পড়তেন। আমাকে দেখলেই বলে উঠতেন, ‘হিম থেকে হিমু, নাকি হিমালয় থেকে হিমু?’
তখন আমি কিছু না বুঝে লাজুক হাসতাম। কৈশোরে যখন পা দিলাম, সখ্য হলো হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সঙ্গে। পড়তে শুরু করলাম হিমু সিরিজের বইগুলো। যখন হিমু সিরিজের কোনো বই পড়তাম, তখন নিজেকে হিমু মনে হতো। হিমুর কার্যকলাপ আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করত। আমি অনেক বিষয়েই অনুমান করা শুরু করলাম। দেখি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মিলে যাচ্ছে।
একদিন এক বন্ধু আমাকে এসে বলল যে সে আজ তার নতুন প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করতে যাবে। আমাকে তার প্রেমিকার ছবি দেখাল। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ‘তোর প্রেম টিকবে না’। আমার বন্ধুটি রেগে গেল। আমাকে বলল কেন এ কথা বলছিস। আমি বললাম, আমি তো হিমু, আমি আগে থেকেই অনেক কিছু বলতে পারি! সে খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল যে আর কী কী বলতে পারব তার ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে।
মজার ব্যাপার হলো এক দিন পরই আমার সে বন্ধুর প্রেমে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আর আমি যা যা অনুমানে বলেছিলাম, প্রায় সবই মিলে যায়। আর সেদিন সে অবাক হয়ে আমাকে বলে যে আসলেই তোর ‘হিমু পাওয়ার’ আছে। যদিও আমার কাছে মনে হয় সবই কাকতালীয়।
আমার নাম হিমু হওয়ার কারণে প্রথম কারও সঙ্গে পরিচয় হলেই বলে ওঠে, ‘আপনি কি হুমায়ূন আহমেদের হিমু?’ আবার কেউ কেউ বলেন, ‘কী ভাই, আপনার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি নাই কেন?’ অনেকে আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘ভাই, আপনি কি খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটেন?’ আবার চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আমি ইচ্ছা করেই আমার নাম যে হিমু, সেটা জানাতাম। এতে করে যাঁরা সাক্ষাৎকার নেন, তাঁদের মধ্যে কেউ হয়তো বলে উঠতেন, ‘আপনি হুমায়ূন আহমেদের বই খুব পড়েন নাকি আপনার মা-বাবা পড়ত?’
এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া সত্যিই অনেক কঠিন। কারণ মাঝেমধ্যে নিজেকে সত্যিই হলুদ হিমু মনে হয়। আমি হিমু নামটাকে বেশ উপভোগ করি। আমার কাছে মনে হয়, ঘুমিয়ে আছে হলুদ হিমু সব হিমুরই অন্তরে!